Wednesday, May 10, 2023

Edu

 

শিশুর বিকাশে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভূমিকা


(ক) দৈহিক-বিকাশ : মানুষের জীবনধারনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, জল, আলো, বাতাস প্রভৃতি উপাদান মানুষ মূলত আহরণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে।

খ) বৌদ্ধিক বিকাশ : প্রকৃতির সংস্পর্শে এসে শিশুর কল্পনা, সৃজনশীলমন, বুদ্ধি, চিন্তন ক্ষমতা, যুক্তিগ্রাহ্যতা প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। প্রকৃতির বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, পরিবেশ শিক্ষা প্রভৃতি বিষয় শিশু পাঠ করে তার বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও জ্ঞানমূলক শক্তির ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছে।

(গ) শৃঙ্খলাবোধের বিকাশ : গাছের পাতা ঝরার সাধারণ উপসর্গ থেকে শুরু করে দিন-রাত্রির পরিবর্তন, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, শীত ইত্যাদি ঋতুর আবর্তন প্রভৃতি ঘটনা একটি না একটি নিয়ম মেনে সংঘটিত হয়। আর প্রকৃতির এই নিয়মবদ্ধতা শিশুর মধ্যে নিয়মানুবর্তিতার দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত করে।

(ঘ) নান্দনিক বিকাশ : প্রাকৃতিক পরিবেশে অজস্র প্রাণময় গাছপালা, আকাশ, বাতাস শিশুর সুকুমার বৃত্তিগুলিকে ফুটন্ত ফুলের মতো বর্ণময় করে তুলেছে। প্রকৃতি মানুষের সামনে তার এক নিজস্ব সামঞ্জস্যপূর্ণ রূপ তুলে ধরেছে যা বিখ্যাত শিল্পীরা তাঁদের তুলির টানে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে চলেছেন।

(ঙ) প্রাক্ষোভিক বিকাশ : প্রত্যেক মানুষ প্রকৃতির মধ্যেই নিজেকে স্বাধীন ও মুক্ত ভাবে। এই মুক্ত পরিবেশেই মানুষ এবং প্রাণীর সহাবস্থান ঘটে। মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে এই স্নেহ-মায়া-মমতার বন্ধন শিশুর প্রাক্ষোভিক বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে।


শিশুর বিকাশে সামাজিক পরিবেশের ভূমিকা :

(ক) দৈহিক বিকাশ : গৃহ পরিবেশে পিতা-মাতা এবং বয়স্ক-ব্যক্তিরা তার জৈবিক অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কঠোর অধ্যাবসায় ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিশুর হাঁটা, দৌড়ানো, লাফানো, কোনো কিছুকে শক্ত মুঠিতে ধরা, খাদ্য নির্বাচন, পোষাক-পরিচ্ছদ এবং নিরাপদ আশ্রয় দান-এর সঙ্গে সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। পরবর্তীকালে বিদ্যালয়, ক্লাব প্রভৃতি শিশুর দৈহিক বিকাশকে সুনিশ্চিত করে।

(খ) মানসিক বিকাশ : শিশুর ভাষাগত বিকাশ, উচ্চারণভঙ্গি, গণনা করা, বিভিন্ন সমাজবাঞ্ছিত আচরণ গড়ে তোলা, চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি, স্মৃতিশক্তি, সৃজনশীলতা ও যুক্তিশীলতা প্রভৃতির বিকাশ ঘটানোর জন্য পরিবার, বিদ্যালয়, ক্রীড়া সংস্থা, গণমাধ্যম এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

(গ) সামাজিক বিকাশ : জন্মগতভাবে মানুষ, সামাজিক বা অসামাজিক কোনোটাই নয়। কিন্তু যেহেতু সমাজ পরিবেশে তার জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু তাই সামাজিক অনুশাসনগুলি শিশুকে মেনে চলতে হয়। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ সমবেদনা, সহযোগিতা, নেতৃত্ব, সমমর্মিতা ইত্যাদি মানবিক গুণগুলি আয়ত্ত করে এবং এর মাধ্যমেই সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

(ঘ) প্রাঙ্কোভিক বিকাশ : জন্মের পর থেকেই শিশু প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়া করতে শেখে। যেহেতু প্রক্ষোভ থেকে মানবশিশুকে পৃথক করা যায় না তাই প্রক্ষোভের সংযত প্রকাশ সামাজিক দিক থেকে কাম্য। এই জন্য বিদ্যালয় প্রশাসন, ধর্মীয় সংস্থা, বৃহত্তর রাষ্ট্র, পরিবার প্রভৃতি বিশেষভাবে এই আচরণগুলিকে প্রভাবিত করে।

(ঙ) বৌদ্ধিক বিকাশ : সমাজ-পরিবেশের অন্তর্গত বয়স্কব্যক্তিদের কাছ থেকে শিশু ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয় সংক্রান্ত বহু প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, সমাজে বসবাস করতে করতে শিশুরা সমাজ প্রশাসনের রীতিনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয় এবং সে বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে যা বৌদ্ধিক বিকাশের সহায়ক।

(চ) নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ : শিশু বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ভালোমন্দ বোধ, ঔচিত্যও অনুচিত্য বোধ গড়ে ওঠে যা নৈতিক বিকাশের সহায়ক। সমাজে-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পরিবার প্রভৃতি শিশুর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশে সহায়তা করে।

(ছ) শৃঙ্খলাবোধের বিকাশ : শিশুরা তাদের খেলার সাথীদের নিয়ে দল গড়ে, আবার বয়স্করা বিশেষ সহমত গঠন করার জন্য দল গড়ে; অবসর বিনোদনের জন্য দল গঠন করে; সমিতি, ক্লাব ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে কিছু আচরণবিধি মেনে চলার প্রবণতা দেখা দেয়। এর ফলে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধের বিকাশ হয়।