13.
ভারতীয় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন
ভারতীয় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন ১৯৪৬-এর ৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়।
ভারতের সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা
প্রথম অধিবেশন: ১৯৪৬ সালের ৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বর গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। মুসলিম লিগের সদস্যরা এই অধিবেশনে যােগ দেননি। এই অধিবেশনে ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ গণপরিষদের প্রথম স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হন। এই অধিবেশনে জওহরলাল নেহরু ভারতবর্ষকে স্বাধীন সার্বভৌম সাধারণতন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
দ্বিতীয় অধিবেশন: গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন ১৯৪৭ সালের ২১ জানুয়ারি শুরু হয় এবং ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তা স্থায়ী হয়। এই অধিবেশনে গণপরিষদের সহসভাপতি হিসেবে হরেন্দ্রকুমার মুখােপাধ্যায়কে নির্বাচন করা হয়।
তৃতীয় অধিবেশন: গণপরিষদের তৃতীয় অধিবেশন ১৯৪৭ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে যে কটি কমিটি গঠিত হয়, তার মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি হল—
(i) কেন্দ্রীয় সংবিধান সম্পর্কিত কমিটি এবং
(ii) প্রাদেশিক সংবিধান সম্পর্কিত কমিটি।
চতুর্থ অধিবেশন: ১৯৪৭ সালের ১৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত গণপরিষদের চতুর্থ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে নতুন ভারতের জাতীয় পতাকা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি অস্থায়ী কমিটি নিয়ােগের সিদ্ধান্ত হয়।
ইতিমধ্যে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভাইসরয় পদে যােগ দেওয়ার পর ভারত বিভাগ ও ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পূর্ণ হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে গণপরিষদের একটি বিশেষ অধিবেশন বসে।
পঞ্চম অধিবেশন: পঞ্চম অধিবেশনের সময় থেকে ভারতীয় গণপরিষদ স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন পরিষদের মর্যাদা অর্জন করে। পঞ্চম অধিবেশন থেকে গণপরিষদ সংবিধান রচনা ছাড়াও দেশের আইনসভা হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পঞ্চম অধিবেশন ১৯৪৭ সালের ১৪ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই অধিবেশনের শুরুতে মাউন্টব্যাটেনকে স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল এবং পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়ােগ করা হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় আইনসভা হিসেবে গণপরিষদের প্রথম অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন জি ভি মভলঙ্কর। একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়নের জন্য এই অধিবেশনে খসড়া কমিটি গঠন করা হয়। ড. বি আর আম্বেদকর এই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন আল্লাদি কৃষ্নস্বমী আয়ার, এন গােপালস্বামী আয়েঙ্গার, কে এম মুন্সি, সৈয়দ মহম্মদ শাহেদুল্লাহ, বি এল মিত্র, এবং ডি পি খৈতান। পরে ডি পি খৈতান ও বি এল মিত্র-র জায়গায় টি টি কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী ও এন মাধবরাও নির্বাচিত হন।
খসড়া কমিটি: খসড়া কমিটি ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বর খসড়া সংবিধান রচনার কাজ আরম্ভ করে। পরিশেষে ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি গণপরিষদের সর্বশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকরী হয়।