Tuesday, August 31, 2021

অলিখিত সংবিধান এবং তার সুবিধা অসুবিধা আলোচনা করো।

 3. 

অলিখিত সংবিধান



যখন সংবিধান কোনাে সংবিধান সভা বা কনভেনশন দ্বারা বিধিবদ্ধ না হয়ে প্রচলিত প্রথা, রীতিনীতি, আচার ব্যবহার, আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন, বিচারালয়ের রায় ইত্যাদির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, সেই সংবিধানকে অলিখিত সংবিধান বলে। ব্রিটেনের সংবিধান হল অলিখিত সংবিধানের প্রত্যক্ষ উদাহরণ



অলিখিত সংবিধানের সুবিধা বা গুণ



[1] যুগােপযােগিতা: অলিখিত সংবিধান সুপরিবর্তনীয় বলে সহজেই পরিবর্তন করা যায়। এজন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির মােকাবিলায় এই ধরনের সংবিধান যথেষ্ট উপযােগী হয়



[2] সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট না হওয়া: এরূপ সংবিধানে সাংবিধানিক আইন এবং প্রথা, রীতিনীতি ইত্যাদির মধ্যে কোনােরূপ পার্থক্য থাকে না। অর্থাৎ, সাংবিধানিক আইনের মতােই প্রথা, রীতিনীতি ইত্যাদি সমান গুরুত্ব লাভ করে



[3] বিরােধিতার সম্ভাবনা না থাকা: প্রয়ােজন অনুযায়ী অলিখিত সংবিধানকে পরিবর্তন করা যায় বলে এরূপ সংবিধানের বিরােধিতার সম্ভাবনা থাকে না



[4] সহজসরল: অলিখিত সংবিধানে জটিলতা থাকে না বলে এরূপ সংবিধান জনসাধারণের কাছে সহজেই বােধগম্য হয়। ফলে জনসাধারণ এরূপ সংবিধানকে সহজেই নিজের বলে ভাবতে পারে



[5] জরুরি অবস্থার উপযােগী হওয়া: এরূপ সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় বলে জরুরি অবস্থায় সংবিধানের দ্রুত পরিবর্তন করে সহজেই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়



অলিখিত সংবিধানের অসুবিধা বা দোষ



[1] অস্পষ্টতা: অলিখিত সংবিধান নির্দিষ্ট দলিলে লিপিবদ্ধ না থাকায় সংবিধানের অর্থ সকলের কাছে স্পষ্ট হয় না



[2] সরকারের স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভবনা: এরূপ সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হয় বলে সরকার ইচ্ছামতাে সংবিধানের পরিবর্তন করে যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে



[3] স্থায়িত্বহীনতা: এরূপ সংবিধান নমনীয় বলে অনেক সময় লক্ষ করা যায় যে পরিবর্তন হতে হতে সংবিধানের আসল বৈশিষ্ট্যই লােপ পায়। তাই এরূপ সংবিধানকে অস্থায়ী সংবিধান বলে



[4] অনুপযােগিতা: যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় দুই ধরনের সরকার থাকে বলে এরূপ শাসনব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত দুষ্পরিবর্তনীয় হওয়া একান্ত প্রয়ােজন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় এরূপ সংবিধান অচল



[5] আইনসভার প্রাধান্য: অলিখিত সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হওয়ায়, আইনসভা সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতি অনুসরণ করে এরূপ সংবিধানকে সংশােধন করতে পারে। একারণে এরূপ সংবিধানে বিচার বিভাগের পরিবর্তে আইন বিভাগের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়



মূল্যায়ন: উপরি-উক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, অলিখিত সংবিধান যুগােপযােগী এবং জরুরি অবস্থার অনুকূল। কিন্তু শাসন বিভাগ এই সংবিধানের নমনীয়তার সুযােগ নিয়ে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে নাগরিকদের স্বাধীনতা অধিকার বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে

লিখিত সংবিধানের সুবিধা-অসুবিধা ব্যাখ্যা করো।

 2. 

লিখিত সংবিধান



যখন রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনাসংক্রান্ত নিয়মাবলির সমস্ত বা অধিকাংশই কোনাে সংবিধান সভা বা কনভেনশন দ্বারা এক বা একাধিক দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে, তখন তাকে লিখিত সংবিধান বলে। ভারত, চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সুইটজারল্যান্ড প্রভৃতি রাষ্ট্রের সংবিধান লিখিত



লিখিত সংবিধানের সুবিধা



[1] স্পষ্টতা: লিখিত সংবিধানে শাসনতান্ত্রিক নিয়মকানুন নাগরিকদের অধিকারসমূহ লিখিত আকারে থাকে বলে সম্পর্কে কোনােরকম সন্দেহের অবকাশ থাকে না। ফলে সরকার নাগরিকবৃন্দ সকলেই তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে



[2] জনমতের প্রতিফলন: লিখিত সংবিধান সাধারণত সংবিধান সভা বা কনভেনশন দ্বারা রচিত হয়। ফলে সংবিধান রচনার দায়িত্ব পালন করেন জনপ্রতিনিধিরা। একারণে সংবিধানে জনসাধারণের চাহিদার প্রতিফলন ঘটে



[3] স্থায়িত্ব: লিখিত সংবিধান প্রধানত দুষ্পরিবর্তনীয় হয় বলে এরূপ সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না। তাই এইরূপ সংবিধান স্থায়ী হয়



[4] মর্যাদার প্রতীক: এরূপ সংবিধানে সরকারের ক্ষমতা, নাগরিকদের অধিকার কর্তব্য লিখিতভাবে থাকে বলে এবং এরূপ সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না বলে এরূপ সংবিধান নাগরিকদের কাছে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়



[5] গণতান্ত্রিকতা: লিখিত সংবিধান মূলত দুষ্পরিবর্তনীয় হওয়ায় সরকার খেয়ালখুশিমতাে এরূপ সংবিধানকে পরিবর্তন করে নাগরিকদের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ফলে গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় থাকে



[6] সুষ্ঠু বিচারকার্যের উপযােগী: সংবিধান লিখিত হলে সরকারের ক্ষমতা, দায়িত্ব, নাগরিকদের অধিকার, কর্তব্য ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা থাকে। ফলে বিচার বিভাগের পক্ষে সুচারুরূপে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হয়



[7] যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অপরিহার্যতা: যুক্তরাষ্ট্রে দুই ধরনের সরকার থাকে বলে উভয় প্রকার সরকারের ক্ষমতা, কার্যাবলি দায়িত্ব লিখিত আকারে থাকা বানিয়ে, অন্যথায় বিরােধ দেখা দিতে পারে



লিখিত সংবিধানের অসুবিধা



লিখিত সংবিধানের বেশ কিছু সুবিধা থাকলেও এরূপ সংবিধান একেবারে ত্রুটিমুক্ত নয়। ত্রুটিগুলি হল



[1] যুগােপযােগী নয়: লিখিত সংবিধান প্রধানত দুষ্পরিবর্তনীয় হয় বলে উদ্ভূত পরিস্থিতির মােকাবিলার জন্য যদি সংবিধান সংশােধন অপরিহার্য হয়ে পড়ে, তাহলেও তা দ্রুত করা সম্ভব নয়। কারণে অনেকে লিখিত সংবিধানকে যুগােপযােগী বলে মনে করেন না



[2] অসম্পূর্ণতা: সংবিধান লিখিত হলেও তাতে শাসনকার্য পরিচালনাসংক্রান্ত সমস্ত নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয় না। রীতিনীতি, প্রথা ইত্যাদির প্রভাব থাকেই। যেমন, ভারতের সংবিধান লিখিত হলেও আস্থাভােটে পরাজিত হওয়ার পর মন্ত্রীসভার পদত্যাগের বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্ট কোনাে নির্দেশ নেই, এটি প্রথার ওপর দাঁড়িয়ে আছে



[3] জটিলতা: অনেক সময় লিখিত সংবিধানের ভাষাগত জটিলতা নিয়েও নানারকম তর্কবিতর্ক দেখা দেয়



[4] অধিকারের রক্ষাকবচ না হতে পারা: সংবিধানে অধিকার লিখিত আকারে থাকলেও, সবসময় তা রক্ষিত হয় না| যেমনভারতীয় সংবিধানে কর্মের অধিকার সর্বজনীন শিক্ষার অধিকার লিখিত আকারে থাকলেও তা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এজন্য দরকার সক্রিয় সচেতন জনমতের



[5] বিক্ষোভের সম্ভাবনা: লিখিত সংবিধানে কাম্য পরিবর্তন সহজে করা যায় না বলে এরূপ সংবিধানের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ ক্রমশ পুঞ্জীভূত হয়। এর ফলে মানুষের বিদ্রোহ, বিপ্লব ইত্যাদির মাধ্যমে এরূপ সংবিধানের পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে



[6] বিচার বিভাগের প্রাধান্য বৃদ্ধি: লিখিত সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকার কারণে বিচার বিভাগের ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়



মূল্যায়ন: লিখিত সংবিধানের যেমন কিছু সুবিধা আছে, তেমন কিছু অসুবিধাও আছে। অর্থাৎ, এই সংবিধান সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়। তা সত্ত্বেও এরূপ সংবিধানে সরকারের ক্ষমতা, দায়িত্ব, নাগরিকদের অধিকার, কর্তব্য ইত্যাদি লিখিতভাবে থাকে বলে এরূপ সংবিধানের জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে এরূপ সংবিধান অপরিহার্য