Tuesday, August 31, 2021

দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান কাকে বলে? দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের গুনাগুন আলোচনা করো। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের অসুবিধা গুলি কি কি?

 6. 

দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান



যে সংবিধানকে আইনসভায় সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে সংশোধন করা যায় না, সংশােধনের জন্য এক বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়, সেই সংবিধানকে দুষ্পরিবর্তনীয় বা অনমনীয় সংবিধান বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইটজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় বা অনমনীয় সংবিধান



দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের সুবিধা বা গুণ



[1] স্থায়িত্ব: দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না বলে এরূপ সংবিধান তার নিজস্বতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়। একারণে এরূপ সংবিধান স্থায়ী হয়



[2] স্পষ্টতা: দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সাধারণত লিখিত হয়। সংবিধান লিখিত হলে সরকারের ক্ষমতা, দায়িত্ব, নাগরিকদের অধিকার, কর্তব্য ইত্যাদি স্পষ্ট হয়



[3] সুরক্ষিত নাগরিক অধিকার: সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় হলে সরকার নিজের খেয়ালখুশিমতাে সংবিধানকে পরিবর্তন করে নাগরিকদের অধিকার ক্ষুন্ন করতে পারে না



[4] সরকারের স্বৈরাচারী হওয়ার পথে বাধা: এরূপ সংবিধানকে ইচ্ছামতাে পরিবর্তন করে সরকার নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে না



[5] সংবিধানের মর্যাদা বৃদ্ধি: দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানকে সাধারণ আইন পাশের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা যায় না বলে সংবিধানের স্বাতন্ত্র মর্যাদা বৃদ্ধি পায়



[6] ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা: এরূপ সংবিধানে, সংবিধানের স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা রক্ষা পায় এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব থাকে বিচার বিভাগের ওপর। ফলে ন্যায়বিচার সম্ভব হয়



[7] উপযােগিতা: যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় দুই ধরনের সরকার থাকে বলে সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় হওয়া জরুরি। অন্যথায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের ক্ষমতায় অযথা হস্তক্ষেপ করতে পারে



দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের অসুবিধা বা দোষ



সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় হলে তার কিছু অসুবিধা লক্ষ করা যায়। অসুবিধাগুলি হল



[1] যুগােপযােগী না হওয়া: দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না বলে এরূপ সংবিধান পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। তাই এরূপ সংবিধান যুগােপযােগী নয় বলে এর সমালােচনা করা হয়ে থাকে



[2] রক্ষণশীলতা: এরূপ সংবিধানকে পরিবর্তন করা কষ্টকর বলে অনেক ক্ষেত্রে এরূপ সংবিধান জাতীয় অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। কারণে অনেকে এরূপ সংবিধানকে রক্ষণশীল বলে



[3] জরুরি অবস্থার উপযােগী না হওয়া: হঠাৎ কোনাে সমস্যা দেখা দিলে বা জরুরি অবস্থার মোকাবিলার জন্য সংবিধানের দ্রুত পরিবর্তনের প্রয়ােজন দেখা দিলে, এরূপ সংবিধান প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে



[4] বিক্ষোভের সম্ভাবনা থাকা: দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না বলে এরূপ সংবিধান জনগণের পরিবর্তিত ধ্যান ধারণা, আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়| একারণে এরূপ সংবিধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে



[5] বিচার বিভাগের প্রাধান্য বৃদ্ধি: এরূপ সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করা সংবিধান ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের ওপর থাকে বলে বিচার বিভাগের অস্বাভাবিক প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়



মূল্যায়ন: আলােচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে এবং সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না। কিন্তু এরূপ সংবিধান পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারে না বলে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এরূপ সংবিধান যাতে প্রয়ােজন পূরণে সমর্থ হয়, তার ব্যবস্থা সংবিধানের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়, নইলে এই সংবিধান তার গুরুত্ব হারাবে



সুপরিবর্তনীয় সংবিধান ও তার সুবিধা অসুবিধা আলোচনা করো।

 5. 

সুপরিবর্তনীয় সংবিধান



সংশােধন পদ্ধতিকে ভিত্তি করে লর্ড ব্রাইস সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় বা নমনীয় এবং দুষ্পরিবর্তনীয় বা অনমনীয়--এই দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যে সংবিধানকে আইনসভা সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতি অনুসরণ করে সংশােধন করতে পারে অর্থাৎ সংবিধান সংশােধনের জন্য কোনাে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রয়ােজন হয় না, সেই সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় বা নমনীয় সংবিধান বলে। ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সংবিধান এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত



সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের সুবিধা



[1] যুগােপযােগিতা: সুপরিবর্তনীয় সংবিধান সহজেই পরিবর্তনশীল বলে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে সময়ােপযােগী করে তুলতে পারে



[2] গতিশীলতা: এরূপ সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় বলে এই সংবিধান অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় না। নমনীয়তার জন্য এরূপ সংবিধান রক্ষণশীলতার ত্রুটিমুক্ত



[3] জরুরি অবস্থার উপযােগী না হওয়া: যুদ্ধ, জাতীয় সংকট ইত্যাদির মতাে জরুরি অবস্থায় সংবিধানের দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন হয়। সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় হওয়ায় এই প্রয়োজন সহজেই পূরণ করা যায়



[4] বিক্ষোভের সম্ভাবনা কম থাকা: সুপরিবর্তনীয় সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় বলে এরূপ সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা সহজেই বাস্তবায়িত হয়। একারণে এরূপ সংবিধানের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ থাকে না



সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের অসুবিধা



সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় বলে এরূপ সংবিধানের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও লক্ষ করা যায়



[1] স্থিতিশীল না হওয়া: সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় হওয়ায় ঘনঘন পরিবর্তিত হয়। ফলে শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় স্থিতিশীলতার অভাব দেখা দিতে পারে



[2] মর্যাদার অভাব: এরূপ সংবিধানকে সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা যায় বলে সাধারণ আইন সাংবিধানিক আইনের মধ্যে কোনাে পার্থক্য থাকে না। বারংবার পরিবর্তিত হয় বলে এরূপ সংবিধান মর্যাদাহীন হয়



[3] সরকারের স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভাবনা: সুপরিবর্তনীয় সংবিধানকে সহজেই পরিবর্তিত করা যায় বলে খেয়ালখুশিমতাে এই সংবিধানকে পরিবর্তন করে সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে



[4] নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হওয়ার সম্ভাবনা: এরূপ সংবিধান নমনীয় হওয়ায় সরকার ইচ্ছামতাে সংবিধান সংশােধন করে নাগরিক অধিকার হরণ করতে পারে



[5] জনগণের আস্থা না থাকা: সুপরিবর্তনীয় সংবিধান কারণে অকারণে সংশােধন করা যায় বলে এরূপ সংবিধানের প্রতি জনগণের আস্থা থাকে না



[6] বিচার বিভাগের দুর্বলতা: শাসন বিভাগ এরূপ সংবিধানকে প্রয়ােজনমতাে পরিবর্তন করে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে



[7] অনুপযােগিতা: যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সংবিধান নমনীয় হলে কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছামতাে সংবিধানের পরিবর্তন করে রাজ্য সরকারের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে|তাই বলা হয় যে, এরূপ সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অনুপযােগী



মূল্যায়ন: সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় বলে সহজেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে| এই নমনীয়তার সুযােগ নিয়ে সরকার নাগরিকদের অধিকার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাই সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হলেও নাগরিকদের অধিকার যেন সুরক্ষিত থাকে, তা সুনিশ্চিত হওয়া বাঞ্ছনীয়