Thursday, June 23, 2022

থর্নডাইকের মতে শিখনের সূত্র গুলি কয় প্রকার ও কি কি ? থর্নডাইকের শিখনের সূত্র শিক্ষাগত তাৎপর্য লেখ।

 

 Laws of learning : Thorndike. Educational implications of Thorndike's Theory of learning.

 Laws of Learning : Thorndike 

শিখনের সূত্রাবলী : থর্নডাইক 


মনোবিজ্ঞানী থর্নডাইক তার শিখন কৌশল এর পদ্ধতি নিয়ে গবেষণার ভিত্তিতে কতগুলি সূত্র আবিষ্কার করেছেন । তাদেরকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় । যথা : 

A.  প্রধান সূত্র বা মুখ্য সূত্র।

B.  অপ্রধান সূত্র বা গৌণ সূত্র । 

 

 থর্নডাইকের শিখনের সূত্রাবলী 

শিখন সম্পর্কিত থর্নডাইকের মুখ্য বা প্রধান সূত্রাবলী 


থর্নডাইকের শিখন সংক্রান্ত প্রধান সূত্র বা মুখ্য সূত্রগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় । যথা - 
1. প্রস্তুতির সূত্র (Law of Preparation). 
2. অনুশীলনের সূত্র (Law of Experience). 
3. ফললাভের সূত্র (Law of Effect). 

                      নিম্নে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হল - 

1. প্রস্তুতির সূত্র (Law of Preparation) :

থর্নডাইকের প্রস্তুতির সূত্রে বলা হয়েছে, "প্রাণী যখন উদ্দীপক ও প্রক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ তৈরি করার জন্য প্রস্তুত হয়, তখন সংযোগ ঘটালেন সে তৃপ্ত হয় এবং না ঘটলে বিরক্ত হয়। অন্যদিকে, যখন সংযোগ তৈরীর জন্য প্রস্তুত নয়, তখন সংযোগ ঘটলে সে বিরক্ত হয়।" 
2. অনুশীলনের সূত্র (Law of Experience) : 

                                         থর্নডাইকের  অনুশীলনের সূত্র দুটি অংশ। যথা - 
      i. ব্যবহারের সূত্র (Law of Use) : 

অন্য সব অবস্থা ঠিক রেখে একই উদ্দীপক এবং একই প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যদি বারবার সংযোগ করা হয় , অর্থাৎ অনুশীলন করা হয় , তাহলে সংযোগটি দৃঢ় হয়, এটি ব্যবহারের সূত্র(Law of Use)। 

      ii. অব্যবহারের সূত্র (Law of Disuse) : 

যদি বহুদিন একই উদ্দীপক এবং প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন না হয়, অর্থাৎ যদি অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায় , তবে সংযোগ শিথিল হবে বা দুর্বল হয়ে পড়ে, এটাই থর্নডাইকের  অব্যবহারের সূত্র (Law of Disuse) । 

 3. ফললাভের সূত্র (Law of Effect) :

থর্নডাইকের ফললাভের সূত্রে বলা হয়েছে , একটি উদ্দীপক ও তার প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংশোধনযোগ্য সংযোগ স্থাপিত হলে, সেই সংযোগের ফলে যদি প্রানীর কাছে তৃপ্তিদায়ক হয় , তবে সেই সংযোগ শক্তিশালী হয় , আর যদি সংযোগকারী প্রাণীর কাছে বিরক্তিকর হয় তবে সেই সুযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে , এটাই ফললাভের সূত্র (Law of Effect)। 

B.  অপ্রধান সূত্র বা গৌণ সূত্র :

                    শিখন সম্পর্কিত থর্নডাইকের অপ্রধান বা গৌণ সূত্র গুলি হল - 

1. বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সূত্র :   

উদ্দীপক ও প্রক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের পূর্বে প্রাণী বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া বা প্রচেষ্টা করে থাকে । এর মধ্যে থেকে নির্ভুল প্রতিক্রিয়াকে বেছে নেওয়াই হল শিখন। বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা যার যত বেশি হবে ততই তার শিখনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। 

2. মানসিক অবস্থার সূত্র :

 শিখনের জন্য চাই মানসিক প্রস্তুতি । অর্থাৎ যেকোন কাজ করার ক্ষেত্রে চাই  ইতিবাচক মানসিক অবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। 

3. আংশিক প্রতিক্রিয়ার সূত্র : 

শিখনের জন্য সামগ্রিক অবস্থা বা সমগ্র অংশকে ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত করে, প্রতিটি অংশের প্রতি বিশেষ প্রতিক্রিয়া করেই শিখন প্রক্রিয়া সম্ভব হয় । 
4. সাদৃশ্যের সূত্র : 

নতুন কোনো অবস্থার সম্মুখীন হলে আমরা পূর্বের কোনো অবস্থার সঙ্গে নতুন অবস্থার মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, অর্থাৎ সাদৃশ্য খোঁজার চেষ্টা করি এবং সেই ভাবেই প্রতিক্রিয়া করি। 
5. অনুষঙ্গমূলক সঞ্চালনের নীতি : 

মূল উদ্দীপক যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে , মূল উদ্দীপকের সঙ্গে যুক্ত গৌণ উদ্দীপকগুলিও সেই একই প্রতিক্রিয়া ঘটায়।
যেমন : তেতুঁল খেলে জিভে জল আসে, পরবর্তীতে তেতুঁল দেখলেই জিভে জল চলে আসে। 


 EDUCATIONAL IMPLICATIONS OF THORNDIKE'S THEORY OF LEARNING 

থর্নডাইকের শিখন সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য 

শিক্ষাক্ষেত্রের থর্নডাইকের সূত্রগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । নিম্নে থর্নডাইকের সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য উল্লেখ করা হল - 
A. প্রস্তুতির সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

i. দৈহিক প্রতিক্রিয়ার জন্য যে প্রস্তুতির প্রয়োজন , সেটি পুরোপুরি পরিণমনের ওপর নির্ভর করে। 
ii. শিক্ষক/শিক্ষিকা পড়ানোর আগে শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব দেবেন। 
iii. শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক পরিণমন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে শিক্ষক মহাশয় শিক্ষাদান করবেন।
B. অনুশীলনের সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

    i. শিক্ষার্থীদের প্রচুর সুযোগ দিতে হবে যাতে তারা অর্জিত জ্ঞানকে পুনরাবৃত্তি করতে পারে ।
  ii. পুরনো বিষয় বারবার অনুশীলন বা প্র্যাকটিস করতে হবে নইলে শিখন দুর্বল হয়ে পড়বে।
  iii. বর্ণমালা , নামতা , সূত্র ইত্যাদি শিখনের সময় অনুশীলনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। 
  iv. নিম্নশ্রেণির গুলিতে অনুশীলন সূত্রের ওপর ব্যাপকভাবে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
C. ফল লাভের সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

   i. শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ পদ্ধতি অবশ্যই শিক্ষার্থীর কাছে সুখকর ও তৃপ্তিদায়ক হতে হবে।
  ii. শ্রেণি শিক্ষন শিক্ষার্থীর কাছে অবশ্যই বোধগম্য এবং তৃপ্তিদায়ক হবে। 
  iii. পাঠ্য বিষয় যেন শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। 
  iv. শ্রেণিকক্ষের পাঠ্য বিষয়বস্তু অবশ্যই শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন জীবনের সাথে মিল রেখে অর্থাৎ বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে হবে, তবেই শিখন প্রক্রিয়া অর্থপূর্ণ হয় এবং শিখন সুখদায়ক হয়। 
  v. শিখন প্রক্রিয়া অবশ্যই সবথেকে কঠিন এর নিয়ম অনুসারে হবে।
D. বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 
i. শিক্ষার্থী যাতে বহুমুখী চিন্তা করতে পারে সে ব্যাপারে শিক্ষক-শিক্ষিকার সাহায্য করা উচিত। 
ii. শিক্ষার্থীকে বহুমুখী চিন্তনের ও ভুল প্রচেষ্টার সুযোগ দিতে হবে। 
E. মানসিক অবস্থার সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

i. শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সহযোগিতা শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষের প্রতি ধনাত্মক মনোভাব এবং উপযুক্ত মানসিক অবস্থার সৃষ্টিতে সাহায্য করে। 
ii. প্রাক্ষোভিক নিরাপত্তা শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থাকে উপযুক্তভাবে তৈরি করে । 
F. আংশিক প্রতিক্রিয়া সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 
 কোন বিষয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কি সংক্ষেপে ছোট ছোট অংশের এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি শিক্ষার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করানো উচিত তাহলে শিখন প্রক্রিয়া সহজ হবে। 
G. সাদৃশ্যের সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

i. শিক্ষার্থী যখন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে তখন শিক্ষকের উচিত পুরাতন বিষয়গুলি সম্পর্কে সাদৃশ্য খুঁজে বের করা এবং শিক্ষার্থীদের তা দেখানো।
ii. শিক্ষার্থীকে জানা থেকে অজানা জ্নের দিকে নিয়ে যেতে হবে ।
iii. শিক্ষার্থীর জীবনের সঙ্গে পাঠ্যবিষয়ের কোন অবস্থার যদি মিল থাকে , তবে অবশ্যই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উচিত সেটিকে ব্যাখ্যা করা। 
I. অনুষঙ্গমূলক সঞ্চালন সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

i. শিশুরা যে সমস্ত অভ্যাস , মনোভাব , আগ্রহ ইত্যাদি অর্জন করে সেগুলো যেন তারা বড় হয়ে প্রয়োগ করতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে । 
ii. শিক্ষক-শিক্ষিকার দায়িত্ব হল শিক্ষার্থীদের এমন অভ্যাস বা মনোভাব গঠনে সাহায্য করা যা তারা ভবিষ্যতে প্রয়োগ করতে পারবে। 
           সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি যে, শিক্ষাক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানী থর্নডাইকের শিখনের সূত্র গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষার্থীর শিখনে গুরুত্বপূর্ণ। শিখন এর উপযুক্ত সূত্রগুলি দ্বারা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ শিখন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে হবে এবং শিক্ষার্থী পাঠ্য বিষয়বস্তু কে শিক্ষার্থীর বোধগম্যতার স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করা।

No comments: