9.
ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহকে লিপিবদ্ধ করার কারণ
মৌলিক অধিকারগুলিকে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করার প্রয়ােজন আছে কি না সেসম্পর্কে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা একমত নন। ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলিকে লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত কারণগুলি দেখানাে হয়一
[1] গণতান্ত্রিক অধিকারের সংরক্ষণ: সংবিধান-বিশেষজ্ঞদের মতে, নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলিকে সংরক্ষণ করার জন্য মৌলিক অধিকারগুলিকে লিপিবদ্ধ করা জরুরি। মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ হওয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ সেগুলির বাস্তব রূপায়ণে বাধ্য থাকে। শুধু তাই নয়, আদালতও মৌলিক অধিকারগুলির তত্ত্বাবধানের জন্য উপযুক্ত দায়িত্ব পালন করে। অনেকে মনে করেন যে, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকে বলে শাসকগােষ্ঠী বা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে এগুলির ওপর অযথা হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হয় না। সংবিধানে উল্লিখিত থাকে বলেই মৌলিক অধিকারগুলি সুরক্ষিত থাকে।
[2] গণচেতনার সৃষ্টি: সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌলিক অধিকারগুলি সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে বলেই জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকার সুযােগ পায়। অধিকারগুলির বাস্তব প্রয়ােগ এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তাদের একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়।
[3] সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা: মৌলিক অধিকারগুলি সংবিধানে লিপিবদ্ধ হওয়ায় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষিত হয় বলে অনেকে মনে করেন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনব্যবস্থা। এক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারগুলি লিপিবদ্ধ না থাকলে সংখ্যালঘুদের স্বার্থহানির আশঙ্কা থাকে।
[4] আইনের মর্যাদালাভ: দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকার ফলে নাগরিক অধিকারগুলি মৌলিক আইনের মর্যাদা লাভ করে। এর ফলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংঘ, সমিতি, এমনকি সরকার পর্যন্ত মৌলিক অধিকারগুলির মর্যাদা সংরক্ষণে বাধ্য হয়। তা ছাড়া সংবিধানে লিপিবদ্ধ হওয়ায় মৌলিক অধিকারগুলি আদালতের কাছেও বিশেষ মর্যাদা অর্জন করে।
জরুরি অবস্থায় মৌলিক অধিকারগুলির বৈধতা
সংবিধানের ৩৫২নং ধারা অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘােষিত হলে ১৯নং ধারায় উল্লিখিত স্বাধীনতার অধিকারগুলির ওপর যে-কোনাে বিধিনিষেধ আরােপ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রের রয়েছে। এ ছাড়া ৩৫৯নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি জনগণের মৌলিক অধিকার বলবৎকরণের উদ্দেশ্যে শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকারটি স্থগিত রাখার আদেশ দিতে পারেন।