7.
🔶মানবাধিকারের মূল বৈশিষ্ট্য
মানবাধিকার হল এমন একঅধিকার যা জন্মসূত্রে সব মানুষের সমানাধিকার ও সমমর্যাদার নীতি ঘোষণা করে। আবার জাতিপুঞ্জের সনদের ভাষানুযায়ী, মানবাধিকার হল সেই সমস্ত অধিকার রা জাতি, ধর্ম, বর্ণ,জন্মস্থান ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তিকে আত্মমর্যাদার সঙ্গে জীবনধারণের অধিকার ও স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার প্রদান করে। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকারের যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য এর সন্ধান পাওয়া যায় সেগুলি হল-
1)মানবাধিকার মানুষের জন্মগত সহজাত অধিকার,
2)মানবাধিকার এর মাধ্যমেই মানুষ নিজের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারে,
3)মানব অধিকার একটি বিশ্বজনীন অধিকার,
4)মানবাধিকারের আদর্শ ব্যক্তির কল্যান নয়,
5)সমষ্টির কল্যাণ সদা জাগ্রত জনতা মানবাধিকারের শ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ,
6)নৈতিক মূল্যবোধ মানবাধিকারের মূলভিত্তি মানবাধিকারের কোন আইনগত ভিত্তি নেই।
🔶🔶মানবাধিকার এবং অন্যান্য অধিকারের মধ্যে পার্থক্য
আপাতদৃষ্টিতে মানবাধিকার ও অন্যান্য অধিকার উভয়ই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের পক্ষে সহায়ক সেদিক থেকে এই দুই অধিকারকে অভিন্ন বলে ধরা যেতে পারে তবে মানবাধিকারের সঙ্গে অন্যান্য অধিকারের কয়েকটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে সেগুলি হল-
(উদ্ভব সার্বজনীনতা জাতীয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক নজরদারি আইনগত বাধ্যবাধকতা কমিশনের ভূমিকা আদালতের ভূমিকা)
🔸মানবাধিকারের ধারণা জন্ম হয় বিংশ শতাব্দীর চারের দশকে।
🔸মনুষ্যত্বের অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে মানবাধিকারের ধারণা উপর গুরুতর হয় এই কারণে মানবাধিকারের প্রকৃতি সর্বজনীন।
🔸মানবাধিকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এই আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্বীকৃতি অর্জন করে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সর্বজনীন মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশ্বজনীন ঘোষণায় 1948 সালের 10 ডিসেম্বর মানব অধিকার কে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়।
🔸মানব অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য আন্তর্জাতিক নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে 1993 সালের মানবাধিকার সম্পর্কিত বিশ্ব সম্মেলন গৃহীত ভিয়েনা ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচিতে বলা হয় মানবাধিকার কে উৎসাহ দেওয়া ও তার সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক মহলের একটি দায়িত্ব।
🔸মানবাধিকার রূপায়নের ক্ষেত্রে কোন ধরনের আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। মানবাধিকার একটি নৈতিক অধিকার।
🔸মানবাধিকারের বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরে মানবাধিকার কমিশন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। জাতিপুঞ্জের অধীনে মানবাধিকার হাইকমিশনারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য জাতীয় স্তরে বিভিন্ন দেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন করেছে।
🔸মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে সেই সংক্রান্ত অভিযোগ সরাসরি আদালতে পেশ করা যায় না এ জন্য মানব অধিকার কমিশন বা কমিটির কাছে আবেদন জানাতে হয়।
Othr
🔹সাধারণ অধিকারের ধারণার উদ্ভব ঘটে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকে।
🔹রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা সংরক্ষিত সাধারণ অধিকার শুধুমাত্র সেই রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট জনসমষ্টির পক্ষেই ভোগ করা সম্ভব। তাই সাধরন অধিকারকে কোনভাবেই সার্বজনীন আখ্যা দেয়া যায় ন।
🔹 সাধারণ অধিকারের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেখা যায় না। সাধারণ অধিকার কেবল জাতীয় ক্ষেত্রে নিজের রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডের সীমানায় স্বীকৃতি পায়।
🔹অন্যান্য অধিকারের ক্ষেত্রে কোন আন্তর্জাতিক নজরদারির কথা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের কারণে কল্পনা করা যায় না। সাধারণ অধিকারের সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্র নিজেই নজরদারি করে থাকে।
🔹রাষ্ট্রীয় এক্তিয়ারের অধীন মৌলিক অধিকারগুলি সংবিধান কতৃক বিধিবদ্ধ থাকে বলেতার আইনগত বাধ্যবাধকতা লক্ষ করা যায়। নাগরিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে আইন নির্ভর।
🔹সাধারণ অধিকারের রক্ষণাবেক্ষণ বা তার রূপায়ণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কমিশনের ভূমিকা লক্ষ করা যায় না।
🔹যেসব সাধারণ অধিকার সংবিধানে লিপিবদ্ধ হওয়ার কারণে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা লাভ করেছে তা লঙ্ঘিত হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগ বা শীর্ষ আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
উপসংহার:- মানবাধিকার ও অন্যান্য অধিকারের মধ্যে প্রকৃতিগত পার্থক্য রয়েছে। তবে মানবাধিকার সভ্য দুনিয়ার মনুষ্যত্বের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে এক মহত্তম বিশ্বজনীন আদর্শের অঙ্গীকার।
No comments:
Post a Comment