4.
মানবাধিকারের সংজ্ঞা
বর্তমান বিশ্বে বিশেষভাবে আলােচিত ও সমালােচিত বিষয় হল মানবাধিকার (Human
Rights)। সাধারণভাবে মানবাধিকার বলতে মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য অধিকারগুলিকে বােঝায়।
মানবাধিকার হল মানুষের অধিকার, যা জাতি-ধর্মবর্ণ-স্ত্রী-পুরুষ ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য। মানুষ বা মানবিক সত্তার অস্তিত্ব রক্ষা ও কল্যাণসাধন এবং মানুষের মর্যাদা ও তার মনুষ্যসত্তার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানাের সঙ্গে মানবাধিকার সম্পর্কিত। শুধুমাত্র মানবসমাজের সদস্য হিসেবেই প্রতিটি মানুষের ন্যূনতম কিছু অধিকার ভােগ আবশ্যিক। এই ন্যূনতম অধিকারই হল মানবাধিকার।
আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী মানবাধিকার বলতে সংবিধানগতভাবে সকলের আত্মমর্যাদা নিয়ে জীবনধারণের অধিকার, স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার এবং সকলের সমানাধিকারকে বােঝায়। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের মাননীয় বিচারপতি নগেন্দ্র সিংহ বলেন, বিশ্বের যেকোনাে অংশে বসবাসকারী প্রতিটি পুরুষ অথবা নারী একজন মানুষ হিসেবে যেসব মৌলিক অধিকার ভােগ করতে পারে, সেগুলিকে মানবাধিকার বলে। ভারত সরকার প্রণীত 'মানবাধিকার রক্ষা আইন' (The
Protection of Human Right Act, 1993)-এ বলা হয়েছে,
"মানবাধিকার হল ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, সাম্য ও মর্যাদা সংক্রান্ত সেইসব অধিকার, যেগুলি সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত অথবা আন্তর্জাতিক চুক্তিপত্রের অঙ্গীভূত এবং ভারতের আদালত কর্তৃক বলবৎযােগ্য।"
মানবাধিকার সম্পর্কিত ধারণার ইতিহাস বহু প্রাচীন। বস্তুত, অতি প্রাচীন প্রাকৃতিক অধিকার থেকে মানবাধিকারের সূচনা। তবে .নিঃসন্দেহে, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভায় গৃহীত বিখ্যাত মানবাধিকার সম্পর্কিত বিশ্বজনীন ঘােষণাপত্র মানবাধিকারের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তরফলক। এই ঘােষণাপত্রের ৩০টি ধারায় মানবিক বিকাশের জন্য প্রয়ােজনীয় পৌর, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার স্থান পেয়েছে। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে বৈষম্য ছাড়াই বিশ্বের যে-কোনাে অংশের মানুষ ওই অধিকার ও স্বাধীনতা ভােগ করতে পারে। মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘােষণাপত্রের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে—“মানব পরিবারের সকল সদস্যের সহজাত মর্যাদা এবং অভিন্ন ও অপরিহার্য অধিকারের স্বীকৃতি হল স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং বিশ্বশান্তির মূলভিত্তি”।
জাতিপুঞ্জের ঘােষণাপত্রে বিবৃত মানবাধিকারসমূহ
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশ্বজনীন ঘােষণাপত্রে মােট ৩০টি অনুচ্ছেদে মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে। মূলত ব্যক্তির পৌর ও রাজনৈতিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। প্রথম অংশে রয়েছে। (প্রথম ২১টি অনুচ্ছেদ)一
·
[1] জীবন, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার,
·
[2] দাসত্ব ও অত্যাচার থেকে মুক্তি,
·
[3] আইনের চোখে সমানাধিকার,
·
[4] চিন্তা-বিবেকধর্ম-মতামত বক্তব্য প্রকাশের মৌলিক অধিকার,
·
[5] যথেচ্ছ গ্রেফতার থেকে অব্যাহতি লাভের অধিকার ইত্যাদি।
দ্বিতীয় অংশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে一
·
[1] কাজ করার ও পাওয়ার অধিকার,
·
[2] সমান কাজের জন্য সমান মজুরি পাওয়ার অধিকার,
·
[3] ভদ্রস্থ জীবনযাপনের অধিকার,
·
[4] শিক্ষার অধিকার ইত্যাদি।
এ ছাড়া মানবাধিকার সংক্রান্ত জাতিপুঞ্জের কিছু আন্তর্জাতিক দলিলও রয়েছে। এইসব দলিলে লিপিবদ্ধ অধিকারের মধ্যে রয়েছে। বাঁচার অধিকার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের মৌল অধিকার, যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও শরণার্থীদের মানবিক অধিকার, শিশুদের অধিকার, আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment