Friday, September 10, 2021

অর্থনৈতিক অধিকার এবং সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করো।

 2. 

অর্থনৈতিক অধিকার

অর্থনৈতিক অধিকার বলতে আমরা সেইসব অধিকারকে বুঝি যেগুলি। মানুষকে দারিদ্র্য এবং অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিয়ে দৈনন্দিন জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ নিরাপদ করে গড়ে তােলে| অধ্যাপক ল্যাম্কির মতে, প্রতিদিনের অন্নসংস্থানের ক্ষেত্রে মানুষের ন্যায়সংগত মজুরি পাওয়ার নিরাপত্তা সুযােগকে অর্থনৈতিক অধিকার বলা যায়। অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল


[1] কর্মের অধিকার: অর্থনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল কর্মের অধিকার। কর্মের অধিকার অনুসারে প্রত্যেক ব্যক্তি তার যােগ্যতা অনুযায়ী যে-কোনাে কাজ পাওয়ার অধিকারী। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক যাতে তার যোগ্যতা অনুসারে উপযুক্ত কাজ পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সমাজতান্ত্রিক গণসাধারণতন্ত্রী রাষ্ট্র চিনে কর্মের অধিকার মৌলিক অধিকাররূপে স্বীকৃত


[2] উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অধিকার: উপযুক্ত কাজের জন্য উপযুক্ত মজুরি পাওয়ার অধিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অধিকার জীবনধারণের জন্য প্রতিটি কর্মরত ব্যক্তির পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক পাওয়া একান্ত অপরিহার্য। অর্থনৈতিক অধিকারে কাজের গুণগত পরিমাণগত মান যাচাই করে উপযুক্ত মানদণ্ডে পারিশ্রমিক নির্ধারণের কথা বলা হয় ছাড়া একই কাজে নারীপুরুষনির্বিশেষে সকলের সমান পারিশ্রমিক পাওয়ার বিষয়টিও অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে স্বীকৃত


[3] বিশ্রামের অধিকার: কাজের অধিকারের পাশাপাশি বিশ্রামের অধিকারও অত্যন্ত জরুরি। নিরবচ্ছিন্ন কাজের পরে অবসরযাপনের অবকাশ না থাকলে মানুষের পক্ষে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব নয়। অ্যারিস্টটলের মতে, সুন্দর জীবনের জন্য অবকাশ একান্তভাবে আবশ্যক


[4] বার্ধক্যে অক্ষমতায় প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার: বৃদ্ধ অক্ষম অবস্থায় রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অধিকার। ছাড়াও কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত পঙ্গুত্ব বা অক্ষমতার দরুন আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া শ্রমিকদের অধিকার


সামাজিক কৃষ্টিগত অধিকার

সামাজিক সাংস্কৃতিক জীবনের বিকাশের জন্য যেসব সুযােগসুবিধা একান্তভাবে অপরিহার্য, তাদের সামাজিক কৃষ্টিগত অধিকার বলা হয়। গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কৃষ্টিগত অধিকারগুলি হল


[1] সামাজিক সাম্যের অধিকার: স্ত্রী-পুরুষ-ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সমস্ত নাগরিকের সামাজিক দিক থেকে সাম্যের অধিকার সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। আসলে সামাজিক বৈষম্য বজায় থাকলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা উন্নয়ন সঠিকভাবে রূপায়িত হতে পারে না


[2] সুস্থ জীবনযাপনের অধিকার: সুস্থ সামাজিক পরিবেশে জীবনযাপনের অধিকার নাগরিকদের একটি সামাজিক অধিকার কারণ সমাজজীবনে অসুস্থ পরিবেশ থাকলে ব্যক্তির অসামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সুস্থ সামাজিক পরিবেশে সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, যা নাগরিক জীবনের সুপ্ত গুণাবলির বিকাশের পক্ষে একান্ত উপযােগী


[3] স্বাস্থ্যরক্ষার অধিকার: প্রতিটি রাষ্ট্রে নাগরিকরা যাতে সুস্থ দেহের অধিকারী হতে পারে তার সুব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের একান্ত কর্তব্য। রুগণ এবং দুর্বল মানবসম্পদ কোনাে রাষ্ট্রের উন্নয়নের পক্ষে অনুকূল নয়। তাই স্বাস্থ্যরক্ষার অধিকারকে সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য কর্তব্য


[4] শোষণ মুক্তির অধিকার: মানব সমাজের ইতিহাস শোষণ এক অভিশাপ শােষণের নানান রূপ আছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ-সহ উন্নত বিশ্বে আজও শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়নি। শিশুরা বিভিন্ন কাজে বিভিন্নভাবে শােষিত হয়। কোথাও আবার বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নেওয়ার রীতি অর্থাৎ বেগার শ্রম চালু রয়েছে। রাষ্ট্রের কর্তব্য প্রতিটি ব্যক্তির শােষণমুক্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া


[5] ভাষা সংস্কৃতির অধিকার: প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতির অধিকার সর্বজনস্বীকৃত। তাই রাষ্ট্রের কর্তব্য হল জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে প্রতিটি সম্প্রদায়ের ভাষা সংস্কৃতিকে বিকশিত হওয়ার সুযােগ দেওয়া

 

No comments: