6.
⭕অধিকারের সংজ্ঞা:- হ্যারল্ড লাস্কির মতে, অধিকার হলো সমাজ জীবনের সেই সব সুযোগ-সুবিধা যেগুলি ছাড়া কোন ব্যক্তি সাধারণভাবে তার ব্যক্তিত্বের প্রকৃষ্টতম বিকাশ ঘটাতে পারে না।
বার্কারের মতে, সবচেয়ে অধিক সংখ্যক লোকের সর্বাধিক বিকাশসাধনের।। জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বা শর্ত আইন কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয় তাকে অধিকার বলে। বার্কারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী দুটি শর্ত পূরণ করলে কোনো সুযোগ-সুবিধা কে অধিকার বলে অভিহিত করা যেতে পারে-
1) সুযোগ সুবিধাগুলি প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের সহায়ক হবে এবং
2)সুযোগ সুবিধাগুলি রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হবে।
⭕অধিকারের প্রকৃতি:- অধিকার এর প্রকৃতি বিশ্লেষণে বলা যায় যে,
1) শুধুমাত্র সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে ব্যক্তি অধিকার ভোগ করতে পারে। মানব সমাজের বাইরে অধিকারের কোন কর্তৃত্ব নেই।
2)অধিকারের একটি আইনগত দিক আছে। রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।
3) সমাজের সমস্ত মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অধিকার অপরিহার্য।
4) সমাজকল্যাণের সঙ্গে অধিকারের ধারণা জড়িত থাকে। বস্তুত, অধিকার সামাজিক স্বার্থের বিরোধী হওয়া উচিত নয়।
5) সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সঙ্গে অধিকার পরিবর্তিত হয়।
6) অধিকারের সঙ্গে কর্তব্য সম্পাদনের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কর্তব্য পালন না করলে অধিকার ভোগ করা যায় না।
আবার প্রকৃতিগতভাবে অধিকার কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে একটি হলো নৈতিক অধিকার ও অপরটি হল আইনগত অধিকার।
🔺!) নৈতিক অধিকার:- যে সমস্ত অধিকার সামাজিক ন্যায়-নীতি বোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তাদের নৈতিক অধিকার বলা হয়। প্রসঙ্গত, নৈতিক অধিকার ভঙ্গ করলে রাষ্ট্র কোন শাস্তি দিতে পারেনা। নৈতিক অধিকার রাষ্ট্রের দ্বারা স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত নয়।
🔺!!)আইনগত অধিকার:-আইনের মাধ্যমে শিক্ষিত হোক এবং সংরক্ষিত হয় যে সমস্ত অধিকার, তাদের আইনগত অধিকার বলে। এই অধিকার ভঙ্গ করলে রাষ্ট্র শাস্তি দিতে পারে। যেমন ভোটদান করার অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার। এই অধিকারে কেউ হস্তক্ষেপ করলে রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দিতে পারে। আইনগত অধিকার কে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল-
!)পৌর অধিকার,
!!)রাজনৈতিক অধিকার,
!!!)অর্থনৈতিক অধিকার,
!v)সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার।
⭕অধিকার সম্পর্কে মার্কসীয় ধারনা:-মার্কসীয় মতবাদ অনুযায়ী, অধিকার সমাজচরিত্রের অর্থনৈতিক বিন্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গড়ে ওঠে। মানুষের অধিকারের প্রকৃতি উৎপাদন পদ্ধতির সঙ্গে তার সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। বৈষম্যমূলক সমাজে অধিকার হলো উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী মালিক শ্রেণীর অধিকার। একমাত্র শোষনহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার রক্ষা সম্ভব হয়।