Wednesday, July 13, 2022

14/07/2022 polsc.

 ক্ষমতা কাকে বলে ? ক্ষমতার উপাদান গুলি কি কি আলোচনা করো।


                  অথবা


জাতীয় শক্তি বলতে কী বোঝো ? এর উপাদান গুলি আলোচনা করো।


অথবা


জাতীয় শক্তির উপাদান বিশ্লেষন করো ।



ক্ষমতা 


ক্ষমতা বা শক্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Power , যা ফরাসি শব্দ Pouvoir  এবং লাতিন শব্দ Potestas থেকে উৎপত্তি । এর অর্থ হলো সমক্ষমতা।

      আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো জাতীয় শক্তি । এককথায় এর সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয় । তবে " হ্যান্স মরগেনথাউ (Hans Morgenthau )-এর মতে," ক্ষমতা হলো অন্যের মন ও কাজকর্মের ওপর একজন মানুষের নিয়ন্ত্রণ "  জোসেফ ফ্র্যাঙ্কেল বলেছেন " অন্যের মন ও কার্যকে নিয়ন্ত্রণ করে কাঙ্ক্ষিত ফললাভের সামর্থ্যই হল ক্ষমতা"



অর্থনীতি:-


বর্তমানে অর্থনীতি হলো একটি দেশের অন্যতম মানদণ্ড । শিল্পের প্রসার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি , বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনুকূল অবস্থা ইত্যাদি হল জীবনযাত্রার মান-উন্নয়নের সঙ্গে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সূচকসমূহ ।



মনস্তত্ত্ব:-


একটি জাতির মধ্যে যখন আত্মবিশ্বাস থাকবে , তখন তারা নিজেদের উন্নতিতে সার্বিকভাবে সচেষ্ট হবে তখন তাদের সামগ্রিক উন্নতি ঘটবে । এই কারণে হিটলার জার্মানির মধ্যে আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেছিলেন।



সামরিক শক্তি:-


কোন দেশকে তখনই শক্তিশালী বলা হবে যখন তার সামরিক শক্তি বেশি থাকবে । তবে এই ক্ষেত্রে শুধু সৈন্য সংখ্যা যথেষ্ট নয় , সামরিক বাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হতে হবে । যেমন জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকির ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ,দুটি শহরকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল ।



সরকার:-


 পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ ও নির্ধারিত নীতির পক্ষে জনসমর্থন সংগ্রহ সরকারের গুরুদায়িত্ব।




কূটনীতি:-


 কূটনীতির  গুণগত দিকটি হলো জাতীয় ক্ষমতার উপাদান সমূহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের সরকার যে পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ করে তার বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় কূটনীতিবিদদের উপর। শান্তির সময়ে একটি জাতির পররাষ্ট্রবিষয়ক আচরণের ওপর তার জাতীয় শক্তির হ্রাসবৃদ্ধি যথেষ্ট পরিমাণে নির্ভরশীল। বলাবাহুল্য , এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশে অবস্থানকারী রাষ্ট্রদূতদের উপর ।




উপসংহার


পরিশেষে বলা যেতে পারে যে কোন একটি দেশের জাতীয় শক্তি কতখানি তা বিচার করার সময় কেউ কেউ বিশেষ কোনো একটি উপাদানকে এরূপ শক্তির নির্ধারকের আসনে বসিয়ে অন্যান্য উপাদানের গুরুত্ব কে কার্যত অস্বীকার করেন। এরূপ করা আদৌ যুক্তিসঙ্গত নয়। যেসব উপাদান একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে অন্য সময়ে সেই সব উপাদানের ওই ভূমিকা নাও থাকতে পারে। জাতীয় শক্তির বিভিন্ন উপাদানের অবস্থিতি যথেষ্ট নয় একটি দেশের সরকার সেগুলির যথাযথ ব্যবহার করতে পারছে কিনা তার ওপর ওই দেশের জাতীয় শক্তি নির্ভর করে ।

Thursday, June 23, 2022

 

থার্স্টোনের দলগত উপাদান তত্ত্ব আলোচনা করো।Thurstone's Multiple Factor Theory .

Multiple Factor Theory : Thurstone

 দলগত উপাদান তত্ত্ব : থার্স্টোন 


মনোবিজ্ঞানী স্পিয়ারম্যান বলেন, যে কোনো বৌদ্ধিক কাজে দুই ধরনের মানসিক ক্ষমতার প্রয়োজন হয়। যথা: একটি সাধারণ মানসিক উপাদান বা G উপাদান এবং অন্যটি বিশেষ মানসিক ক্ষমতা বা S উপাদান ।

            ঠিক তেমনই মার্কিন মনোবিজ্ঞানী L.L.Thurstone বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর তিনি বলেন , বুদ্ধি সাতটি প্রাথমিক মানসিক উপাদান দ্বারা গঠিত । এই উপাদানগুলি মৌলিক ও পরস্পর নিরপেক্ষ। এদের একত্রে  থার্স্টোনের " দলগত উপাদান তত্ত্ব " বলা হয়। এই সাতটি প্রাথমিক মানসিক উপাদানগুলি হল - 


1. সংখ্যাগত উপাদান ( N ) : দ্রুত এবং সঠিকভাবে সংখ্যা ব্যবহারের ক্ষমতা ।

2. বাচনিক উপাদান ( V ) : ভাষা বোঝা ও সঠিক সাবলীলভাবে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা ।

3. স্থান - প্রত্যক্ষণের ক্ষমতা ( S ) : সঠিক স্থান সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা অর্জন ।

4. স্মৃতি ( M ) : দ্রুত মুখস্থ করা এবং প্রয়োজনমত তা মনে করা বা চেনার ক্ষমতা ।

5. যুক্তি নির্ণয়ের ক্ষমতা ( R ) : কোনো কাজের সাথে নিয়ম - নীতি বা সূত্র আবিষ্কার করা ও কাজ সম্পন্ন করার ক্ষমতা ।

6. শব্দ ব্যবহারের ক্ষমতা ( W ) : দ্রুত এবং সঠিকভাবে উপযুক্ত শব্দ ব্যবহারের ক্ষমতা।

7. প্রত্যক্ষনের উপাদান ( P ) : দ্রুত এবং সঠিকভাবে সামগ্রিক পরিস্থিতি প্ৰত্যক্ষণের ক্ষমতা ।

            কোনো বৌদ্ধিক কাজে যত বেশি পরিমাণে প্রাথমিক মানসিক উপাদান থাকবে সেই কাজটি তত তাৎপর্যপূর্ণ হবে। এক বা একাধিক মানসিক উপাদানগুলি দ্বারা কোনো কাজ সম্পন্ন করা হয় তাই একে " দলগত উপাদান তত্ত্ব " বলা হয়। 

 চিত্রসহ থার্স্টোনের দলগত উপাদান তত্ত্ব ব্যাখ্যা : 

থার্স্টোনের দলগত উপাদান তত্ত্ব  চিত্র


থার্স্টোনের দলগত উপাদান তত্ত্বটিকে উপরের চিত্রে রূপ দেওয়া যায় - 

               ক , খ , গ তিনটি বৌদ্ধিক কাজ। 

ক কাজে প্রয়োজন হয় সংখ্যাগত উপাদান ( N ) ,  স্থান - প্রত্যক্ষণের ক্ষমতা ( S ) , প্রত্যক্ষনের উপাদান ( P )।

খ কাজে প্রয়োজন হয় বাচনিক উপাদান ( V ) , প্রত্যক্ষনের উপাদান ( P ) , যুক্তি নির্ণয়ের ক্ষমতা ( R ) , স্মৃতি ( M ) ।

গ কাজে প্রয়োজন হয় 3. স্থান - প্রত্যক্ষণের ক্ষমতা ( S ) ,  শব্দ ব্যবহারের ক্ষমতা ( W ) ।

          এখানে এই তিনটি বৌদ্ধিক কাজের মধ্যে যে কাজটিতে সব থেকে বেশি বৌদ্ধিক উপাদানের ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা ততবেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের মধ্যে ততবেশি সহ সম্পর্ক থাকবে ।

বুদ্ধির সংজ্ঞা দাও। সাধারণ মানসিক ক্ষমতা ও বিশেষ মানসিক ক্ষমতার পার্থক্যগুলি লেখো।

 

বুদ্ধির সংজ্ঞা

স্টার্নের মতে, বুদ্ধি হল জীবনের নতুন সমস্যাবলি এবং পরিস্থিতিসমূহের সঙ্গে অভিযােজন করার ক্ষমতা।

প্যাটারসনের মতে, যে জৈবিক কৌশলের সহায়তায় কোনাে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে একক প্রতিক্রিয়া করা যায় তাই হল বুদ্ধি।

সাধারণ ও বিশেষ মানসিক ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য


চার্লস স্পিয়ারম্যান বৌদ্ধিক কাজ করার ক্ষেত্রে দু-ধরনের মানসিক ক্ষমতা যথাক্রমে G ও S উপাদানের কথা বলেন। বিশেষ উপাদান হল অর্জিত ও শিক্ষাসাপেক্ষ, তবে সাধারণ উপাদান সর্বজনীন। নীচে এই দুটি উপাদানের পার্থক্য ব্যাখ্যা করা হল—

সাধারণ মানসিক ক্ষমতা

  • এই মানসিক উপাদানের সাহায্যে মানুষ সমস্ত বৌদ্ধিক কর্মসম্পাদন করতে পারে। এটি পরিবেশের সঙ্গে সংগতি বজায় রাখে।
  • সাধারণ মানসিক ক্ষমতা বা বুদ্ধি সাধারণধর্মী।
  • সাধারণ মানসিক ক্ষমতা একক ক্ষমতা, এটি সকল প্রকার কাজে অপরিহার্য।
  • সাধারণ মানসিক ক্ষমতা জন্মগত।
  • সাধারণ মানসিক ক্ষমতা পরিমাপের জন্য বুদ্ধি অভীক্ষা ব্যবহৃত হয়। এর সূচক হল বুদ্ধ্যঙ্ক।
  • সাধারণ মানসিক ক্ষমতা একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত বিকাশলাভ করে।
  • সাধারণ মানসিক ক্ষমতার পরিমাণ কর্মভেদে পরিবর্তনশীল।।
  • সাধারণ মানসিক ক্ষমতা সর্বজনীন।
  • সাধারণ মানসিক ক্ষমতা মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে। বণ্টন হয়।
  • সাধারণ মানসিক ক্ষমতা অনুশীলনসাপেক্ষ নয়।
  • সাধারণ মানসিক ক্ষমতা কর্মনিপুণ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি তৈরি করতে পারে না।
  • সাধারণ মানসিক উপাদান পূর্বের অভিজ্ঞতা বা বিভিন্ন কর্মে সঞ্চালনের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষ মানসিক ক্ষমতা

  • এই মানসিক উপাদান বিশেষ বিশেষ বৌদ্ধিক কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতা বিশেষধর্মী।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতা সংখ্যায় বহু।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতা কিছুটা জন্মগত, কিছুটা অর্জিত।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতা পরিমাপের জন্য প্রবণতা অভীক্ষা ব্যবহৃত হয় এটি সূচকহীন।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে বয়সের সীমারেখা নেই।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতায় কর্মভেদে প্রকৃতিগত পরিবর্তন ঘটে।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতা সর্বজনীন নয়।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে বণ্টন হয় না।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতা অনুশীলনসাপেক্ষ।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতা সাধারণ মানসিক ক্ষমতার সহায়তায় কর্মনিপুণ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি তৈরি করতে পারে।
  • বিশেষ মানসিক ক্ষমতা পূর্বের অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে সঞ্চালনে খুব কম ব্যবহৃত হয়।

উপরােক্ত আলােচনা থেকে বােঝা যায়, উভয় প্রকার মানসিক ক্ষমতা বৌদ্ধিক কাজ করতে সক্ষম। তবে এই দু-ধরনের মানসিক ক্ষমতা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে সম্পর্কিত। তবে সাধারণ মানসিক ক্ষমতা যার যত বেশি তার বৌদ্ধিক কাজ করার ক্ষমতাও তত বেশি। এই দু-ধরনের মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম।

থর্নডাইকের মতে শিখনের সূত্র গুলি কয় প্রকার ও কি কি ? থর্নডাইকের শিখনের সূত্র শিক্ষাগত তাৎপর্য লেখ।

 

 Laws of learning : Thorndike. Educational implications of Thorndike's Theory of learning.

 Laws of Learning : Thorndike 

শিখনের সূত্রাবলী : থর্নডাইক 


মনোবিজ্ঞানী থর্নডাইক তার শিখন কৌশল এর পদ্ধতি নিয়ে গবেষণার ভিত্তিতে কতগুলি সূত্র আবিষ্কার করেছেন । তাদেরকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় । যথা : 

A.  প্রধান সূত্র বা মুখ্য সূত্র।

B.  অপ্রধান সূত্র বা গৌণ সূত্র । 

 

 থর্নডাইকের শিখনের সূত্রাবলী 

শিখন সম্পর্কিত থর্নডাইকের মুখ্য বা প্রধান সূত্রাবলী 


থর্নডাইকের শিখন সংক্রান্ত প্রধান সূত্র বা মুখ্য সূত্রগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় । যথা - 
1. প্রস্তুতির সূত্র (Law of Preparation). 
2. অনুশীলনের সূত্র (Law of Experience). 
3. ফললাভের সূত্র (Law of Effect). 

                      নিম্নে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হল - 

1. প্রস্তুতির সূত্র (Law of Preparation) :

থর্নডাইকের প্রস্তুতির সূত্রে বলা হয়েছে, "প্রাণী যখন উদ্দীপক ও প্রক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ তৈরি করার জন্য প্রস্তুত হয়, তখন সংযোগ ঘটালেন সে তৃপ্ত হয় এবং না ঘটলে বিরক্ত হয়। অন্যদিকে, যখন সংযোগ তৈরীর জন্য প্রস্তুত নয়, তখন সংযোগ ঘটলে সে বিরক্ত হয়।" 
2. অনুশীলনের সূত্র (Law of Experience) : 

                                         থর্নডাইকের  অনুশীলনের সূত্র দুটি অংশ। যথা - 
      i. ব্যবহারের সূত্র (Law of Use) : 

অন্য সব অবস্থা ঠিক রেখে একই উদ্দীপক এবং একই প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যদি বারবার সংযোগ করা হয় , অর্থাৎ অনুশীলন করা হয় , তাহলে সংযোগটি দৃঢ় হয়, এটি ব্যবহারের সূত্র(Law of Use)। 

      ii. অব্যবহারের সূত্র (Law of Disuse) : 

যদি বহুদিন একই উদ্দীপক এবং প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন না হয়, অর্থাৎ যদি অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায় , তবে সংযোগ শিথিল হবে বা দুর্বল হয়ে পড়ে, এটাই থর্নডাইকের  অব্যবহারের সূত্র (Law of Disuse) । 

 3. ফললাভের সূত্র (Law of Effect) :

থর্নডাইকের ফললাভের সূত্রে বলা হয়েছে , একটি উদ্দীপক ও তার প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংশোধনযোগ্য সংযোগ স্থাপিত হলে, সেই সংযোগের ফলে যদি প্রানীর কাছে তৃপ্তিদায়ক হয় , তবে সেই সংযোগ শক্তিশালী হয় , আর যদি সংযোগকারী প্রাণীর কাছে বিরক্তিকর হয় তবে সেই সুযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে , এটাই ফললাভের সূত্র (Law of Effect)। 

B.  অপ্রধান সূত্র বা গৌণ সূত্র :

                    শিখন সম্পর্কিত থর্নডাইকের অপ্রধান বা গৌণ সূত্র গুলি হল - 

1. বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সূত্র :   

উদ্দীপক ও প্রক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের পূর্বে প্রাণী বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া বা প্রচেষ্টা করে থাকে । এর মধ্যে থেকে নির্ভুল প্রতিক্রিয়াকে বেছে নেওয়াই হল শিখন। বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা যার যত বেশি হবে ততই তার শিখনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। 

2. মানসিক অবস্থার সূত্র :

 শিখনের জন্য চাই মানসিক প্রস্তুতি । অর্থাৎ যেকোন কাজ করার ক্ষেত্রে চাই  ইতিবাচক মানসিক অবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। 

3. আংশিক প্রতিক্রিয়ার সূত্র : 

শিখনের জন্য সামগ্রিক অবস্থা বা সমগ্র অংশকে ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত করে, প্রতিটি অংশের প্রতি বিশেষ প্রতিক্রিয়া করেই শিখন প্রক্রিয়া সম্ভব হয় । 
4. সাদৃশ্যের সূত্র : 

নতুন কোনো অবস্থার সম্মুখীন হলে আমরা পূর্বের কোনো অবস্থার সঙ্গে নতুন অবস্থার মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, অর্থাৎ সাদৃশ্য খোঁজার চেষ্টা করি এবং সেই ভাবেই প্রতিক্রিয়া করি। 
5. অনুষঙ্গমূলক সঞ্চালনের নীতি : 

মূল উদ্দীপক যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে , মূল উদ্দীপকের সঙ্গে যুক্ত গৌণ উদ্দীপকগুলিও সেই একই প্রতিক্রিয়া ঘটায়।
যেমন : তেতুঁল খেলে জিভে জল আসে, পরবর্তীতে তেতুঁল দেখলেই জিভে জল চলে আসে। 


 EDUCATIONAL IMPLICATIONS OF THORNDIKE'S THEORY OF LEARNING 

থর্নডাইকের শিখন সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য 

শিক্ষাক্ষেত্রের থর্নডাইকের সূত্রগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । নিম্নে থর্নডাইকের সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য উল্লেখ করা হল - 
A. প্রস্তুতির সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

i. দৈহিক প্রতিক্রিয়ার জন্য যে প্রস্তুতির প্রয়োজন , সেটি পুরোপুরি পরিণমনের ওপর নির্ভর করে। 
ii. শিক্ষক/শিক্ষিকা পড়ানোর আগে শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব দেবেন। 
iii. শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক পরিণমন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে শিক্ষক মহাশয় শিক্ষাদান করবেন।
B. অনুশীলনের সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

    i. শিক্ষার্থীদের প্রচুর সুযোগ দিতে হবে যাতে তারা অর্জিত জ্ঞানকে পুনরাবৃত্তি করতে পারে ।
  ii. পুরনো বিষয় বারবার অনুশীলন বা প্র্যাকটিস করতে হবে নইলে শিখন দুর্বল হয়ে পড়বে।
  iii. বর্ণমালা , নামতা , সূত্র ইত্যাদি শিখনের সময় অনুশীলনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। 
  iv. নিম্নশ্রেণির গুলিতে অনুশীলন সূত্রের ওপর ব্যাপকভাবে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
C. ফল লাভের সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

   i. শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ পদ্ধতি অবশ্যই শিক্ষার্থীর কাছে সুখকর ও তৃপ্তিদায়ক হতে হবে।
  ii. শ্রেণি শিক্ষন শিক্ষার্থীর কাছে অবশ্যই বোধগম্য এবং তৃপ্তিদায়ক হবে। 
  iii. পাঠ্য বিষয় যেন শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। 
  iv. শ্রেণিকক্ষের পাঠ্য বিষয়বস্তু অবশ্যই শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন জীবনের সাথে মিল রেখে অর্থাৎ বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে হবে, তবেই শিখন প্রক্রিয়া অর্থপূর্ণ হয় এবং শিখন সুখদায়ক হয়। 
  v. শিখন প্রক্রিয়া অবশ্যই সবথেকে কঠিন এর নিয়ম অনুসারে হবে।
D. বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 
i. শিক্ষার্থী যাতে বহুমুখী চিন্তা করতে পারে সে ব্যাপারে শিক্ষক-শিক্ষিকার সাহায্য করা উচিত। 
ii. শিক্ষার্থীকে বহুমুখী চিন্তনের ও ভুল প্রচেষ্টার সুযোগ দিতে হবে। 
E. মানসিক অবস্থার সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

i. শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সহযোগিতা শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষের প্রতি ধনাত্মক মনোভাব এবং উপযুক্ত মানসিক অবস্থার সৃষ্টিতে সাহায্য করে। 
ii. প্রাক্ষোভিক নিরাপত্তা শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থাকে উপযুক্তভাবে তৈরি করে । 
F. আংশিক প্রতিক্রিয়া সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 
 কোন বিষয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কি সংক্ষেপে ছোট ছোট অংশের এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি শিক্ষার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করানো উচিত তাহলে শিখন প্রক্রিয়া সহজ হবে। 
G. সাদৃশ্যের সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

i. শিক্ষার্থী যখন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে তখন শিক্ষকের উচিত পুরাতন বিষয়গুলি সম্পর্কে সাদৃশ্য খুঁজে বের করা এবং শিক্ষার্থীদের তা দেখানো।
ii. শিক্ষার্থীকে জানা থেকে অজানা জ্নের দিকে নিয়ে যেতে হবে ।
iii. শিক্ষার্থীর জীবনের সঙ্গে পাঠ্যবিষয়ের কোন অবস্থার যদি মিল থাকে , তবে অবশ্যই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উচিত সেটিকে ব্যাখ্যা করা। 
I. অনুষঙ্গমূলক সঞ্চালন সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য : 

i. শিশুরা যে সমস্ত অভ্যাস , মনোভাব , আগ্রহ ইত্যাদি অর্জন করে সেগুলো যেন তারা বড় হয়ে প্রয়োগ করতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে । 
ii. শিক্ষক-শিক্ষিকার দায়িত্ব হল শিক্ষার্থীদের এমন অভ্যাস বা মনোভাব গঠনে সাহায্য করা যা তারা ভবিষ্যতে প্রয়োগ করতে পারবে। 
           সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি যে, শিক্ষাক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানী থর্নডাইকের শিখনের সূত্র গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষার্থীর শিখনে গুরুত্বপূর্ণ। শিখন এর উপযুক্ত সূত্রগুলি দ্বারা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ শিখন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে হবে এবং শিক্ষার্থী পাঠ্য বিষয়বস্তু কে শিক্ষার্থীর বোধগম্যতার স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করা।

Friday, April 22, 2022

2prct

 

On an average, at least 100 people are affected by corona every hour in India.  According to the estimates provided by the Union Ministry of Health, 2,451 people in the country have been infected with corona in the last 24 hours.  Which is the highest in terms of daily infections since March 16.  Earlier, on April 16, the number of daily infections had crossed 2,000.  As a result, there will be an eye on how many infections there are today, Saturday.

 There is a possibility of rain in some districts of South Bengal today.  According to the meteorological department, there will be cloudy skies in several districts of South Bengal from this morning.  This may result in light to moderate rainfall in some districts.

 Objections have been raised at various levels of the education camp.  Where the problem is, it has already been reported in various ways.  This time the meeting of the Vice-Chancellors of West Bengal Universities with the University Grants Commission (UGC) was informed directly that it is not realistic at all to admit students at the undergraduate level in colleges and universities through Uniform Entrance Test (CUET) across the country.  Some of the arguments are not realistic, they were explained in a meeting with UGC chairman Jagadesh Kumar on Friday, and one of the arguments was India's diversity.

 Representatives of the University of Health and the National Law University of Calcutta were also present at the UGC-Head's online meeting with various universities aided by the state government.  According to education sources, Jagdesh argued that the country's education system will change if the national education policy is introduced.  In addition to the proposed uniform entrance examination, admission opportunities for students in two courses at colleges and universities were also discussed.  Shivaji Pratim Basu, Vice Chancellor of Vidyasagar University, said that in a huge country like India, not all boards and colleges and universities have the same curriculum.  Therefore, it is not realistic to get admission through uniform entrance examination at the undergraduate level everywhere.

 Soma Bandyopadhyay, vice-chancellor of State BEd University, also told the UGC chairman that before implementing any policy, the uniqueness of each state and each university should be given importance.  Somadevi's statement on the opportunity for students to study in two courses at the same time requires a lot of teachers.  Which is not the case.  During the meeting, Jadavpur University Vice-Chancellor Suranjan Das suggested that 'advanced' colleges and universities should extend their hand towards 'underdeveloped' universities and colleges as compared to the same region.

 Central and state conflicts over the proposed national education policy have been going on for a long time.  In addition to trying to "impose" that policy, there are allegations that it has enslaved education and deprived the educational institutions of their rights and privileges.  Similarly, allegations are being made that the UGC has recommended admission in the state-run universities on the basis of the marks obtained in the uniform entrance examination without consulting the states.  A ten-member committee has been set up to look into issues like the proposed national education policy, uniform entrance exams and formulate the state's own education policy, said state education minister Bratya Basu.  The committee is scheduled to hold its first meeting next week.  Apart from the national education policy, the committee will look into the education policy being formulated by various states including Maharashtra and Kerala.

 On the occasion of the 400th birth anniversary of Sikh Guru Tegh Bahadur, Prime Minister Narendra Modi addressed the nation from the Red Fort.  He said, "This Red Fort witness is how Teg Bahadur, the guru of the thunderbolt mentality, fought against the tyranny of Aurangzeb."

 As the anniversary of the birth of the Sikh Guru, various programs have been going on in different parts of the country, including the capital Delhi, since Thursday morning.  The main attraction, the Prime Minister's address to the nation from the courtyard of the Red Fort.  This is the first time that a Prime Minister of the country has given a speech from a place other than the gate of the Red Fort.  Besides, after this first sunset, a Prime Minister gave a speech from Lalkella.  On the occasion of the ceremony, a huge langar was organized in Lalkella.  With cultural events.

 According to the Union Ministry of Culture, the Mughal Emperor Aurangzeb issued a death warrant for Guru Tegh Bahadur from this Red Fort in 175 AD.  Standing in that red fort, the Prime Minister addressed the nation on the occasion of the 400th birth anniversary of the Sikh Guru.  In his speech, Modi said, "India has never established itself as a threat to any other country or nation.  We are still responsible for following the path shown by Guru Tegh Bahadur.  India is still working for the welfare of the world.  And that role will never change. "

 The topic of Aurangzeb came up in Modi's speech.  The Prime Minister said, "This Red Fort witness, Aurangzeb and his oppressors may have beheaded many people, but they have not been able to erase faith from their minds."

 Just before his address to the nation, the Prime Minister unveiled a commemorative coin and stamp on the occasion of the birth anniversary of the Sikh Guru.

 During their joint venture printing business, Ishwar Chandra Vidyasagar and Madan Mohan Tarkalankar both wrote several books.  Among them were three parts of Tarkalankar's Shishu Sathy.  After his death, his son-in-law Jogendranath Vidyabhushan handed over the lawyer's letter to Vidyasagar, claiming the copyright of the books.  But as evidenced by Tarkalankar's old letter, he gave the rights to the books to the printing press, not to his or his successors.  Although that time was over, later in the life of his father-in-law, Jogendranath slandered Vidyasagar as 'Parasvahari'.  Many people believe that Ishwar Chandra brought the whole incident to light by printing a pamphlet in his defense.

 The notice sent to Dinas Bose Vidyasagar by Bagbazar lawyer was based on the Copyright Act of 1848.  Under the Companies Act, the authorship of a book published during the author's lifetime was valid until seven years after his death, for a total of 42 years.  This was followed by a new copyright law in England, which was introduced in India in 1914 with slight modifications.  The law extends the copyright to 50 years after the author's death.

 In 1934, a lawsuit was filed among his grandchildren over the copyright of Bankimchandra's book under that Act.  Bankimjaya Rajalakshmi Devi in ​​her absence donated the copyright of Bankim's book to her daughter Saratkumari Devi.  Accordingly, Saratkumari's only son Brajendrasundara Bandyopadhyay gave permission to Satish Chandra Mukherjee of Basumati Sahitya Mandir to print and sell those books.  But Bankimchandra did not give the copyright to Goddess Rajalakshmi in his will, so Rajalakshmi cannot legally give the copyright of the book to any 'one' daughter.  He filed a case against Brajendra Sundar and Satish Chandra.  After winning the case, the Mukherjee brothers also got three-thirds of the copyright of Bankim's book.

ভারতে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে অন্তত ১০০ জন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন । কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২ হাজার ৪৫১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। যা গত ১৮ মার্চের পর থেকে দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে সর্বাধিক। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা দু’হাজার পেরিয়েছিল। ফলে আজ, শনিবার সংক্রমণ কত থাকে সে দিকে নজর থাকবে।

আজ দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সকাল থেকেই দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় মেঘলা আকাশ থাকবে। এর ফলে কিছু জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।

আপত্তি উঠেছে শিক্ষা শিবিরের বিভিন্ন স্তরে। অসুবিধা কোথায়, ইতিমধ্যে তাও বিভিন্ন ভাবে জানানো হয়েছে । এ বার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের বৈঠকে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হল, দেশ জুড়ে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার (সিইউইটি) মাধ্যমে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়া মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। কোন কোন যুক্তিতে সেটা বাস্তবোচিত নয়, শুক্রবার ইউজিসি-র চেয়ারম্যান জগদেশ কুমারের সঙ্গে বৈঠকে তা ব্যাখ্যা করা হয় এবং অন্যতম যুক্তি হিসেবে ওঠে ভারতের বৈচিত্রের কথা।

রাজ্য সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউজিসি-প্রধানের এ দিনের অনলাইন বৈঠকে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতার জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষা সূত্রের খবর, জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বদল আসবে বলে যুক্তি দেখান জগদেশ। প্রস্তাবিত অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’টি পাঠ্যক্রমে পড়ুয়াদের ভর্তির সুযোগ নিয়েও আলোচনা হয়। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিবাজীপ্রতিম বসু জানান, ভারতের মতো বিশাল দেশে সব বোর্ড এবং কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম এক রকম নয়। তাই সর্বত্র স্নাতক স্তরে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া বাস্তবসম্মত নয়।

রাজ্য বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইউজিসি-র চেয়ারম্যানকে জানান, কোনও নীতি বাস্তবায়িত করার আগে যেন প্রতিটি রাজ্য এবং প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতা, তার বৈচিত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পড়ুয়াদের একই সঙ্গে দু’টি পাঠ্যক্রমে পড়ার সুযোগের ব্যাপারে সোমাদেবীর বক্তব্য, তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর শিক্ষকের। যা বাস্তবে নেই। বৈঠকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের প্রস্তাব, ‘উন্নত’ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি একই অঞ্চলের তুলনায় ‘অনুন্নত’ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের দিকে হাত বাড়িয়ে দিক।

প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের সংঘাত চলছে বহু দিন ধরেই। ওই নীতি ‘চাপিয়ে দেওয়া’র চেষ্টার পাশাপাশি এর মাধ্যমে শিক্ষার গেরুয়াকরণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্বতা ও স্বাধিকার হরণের অভিযোগ উঠছে। একই ভাবে অভিযোগ উঠছে, রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা না-করেই অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে রাজ্যের অধীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও ভর্তি নেওয়ার সুপারিশ করেছে ইউজিসি। একতরফা কেন্দ্রের নির্দেশ না-মেনে প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষানীতি, অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার মতো বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে এবং রাজ্যের নিজস্ব শিক্ষানীতি তৈরির লক্ষ্যে দশ সদস্যের কমিটি একটি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আগামী সপ্তাহে সেই কমিটির প্রথম বৈঠকে বসার কথা। জাতীয় শিক্ষানীতি ছাড়াও মহারাষ্ট্র, কেরল-সহ বিভিন্ন রাজ্য যে-শিক্ষানীতি তৈরি করছে, তা খতিয়ে দেখবে কমিটি।

শিখ গুরু তেগ বাহাদুরের ৪০০তম আবির্ভাববার্ষিকী উপলক্ষে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘‘এই লালকেল্লা সাক্ষী, ঔরঙ্গজেবের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়াই করেছিলেন বজ্রকঠিন মানসিকতার গুরু তেগ বাহাদুর।’’

শিখ গুরুর আবির্ভাববার্ষিকী হিসাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী দিল্লি-সহ দেশের নানা প্রান্তে চলেছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। মূল আকর্ষণ, লালকেল্লার উঠোন থেকে প্রধানমন্ত্রীর জাতির প্রতি সম্বোধন। এই প্রথম লালকেল্লার ফটকের বদলে অন্য কোনও জায়গা থেকে ভাষণ দিলেন দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি এই প্রথম সূর্যাস্তের পর কোনও প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লা থেকে ভাষণ দিলেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে লালকেল্লায় ছিল এক বিরাট লঙ্গরের আয়োজন। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের দাবি, ১৬৭৫-এ এই লালকেল্লা থেকেই গুরু তেগ বাহাদুরের মৃত্যু ফরমান জারি করেন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। সেই লালকেল্লাতে দাঁড়িয়েই শিখ গুরুর ৪০০তম আবির্ভাব বার্ষিকীতে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। নিজের ভাষণে মোদী বলেন, ‘‘ভারত কখনওই অন্য কোনও দেশ বা জাতির বিপদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেনি। গুরু তেগ বাহাদুরের দেখানো পথে, আজও আমরা চলতে দায়বদ্ধ। ভারত আজও বিশ্বের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। এবং সেই ভূমিকার কখনও বদল হবে না।’’

মোদীর ভাষণে ঘুরেফিরে এসেছে ঔরঙ্গজেবের প্রসঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই লালকেল্লা সাক্ষী, ঔরঙ্গজেব এবং তাঁর মতো অত্যাচারীরা হয়তো বহু মানুষের মুণ্ডচ্ছেদ করেছেন, কিন্তু মন থেকে বিশ্বাসকে মুছতে পারেননি।’’

জাতির উদ্দেশে ভাষণের ঠিক আগে, প্রধানমন্ত্রী শিখ গুরুর আবির্ভাববার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্মারক মুদ্রা ও ডাকটিকিট উদ্বোধন করেন।

যৌথ ভাবে ছাপাখানার ব্যবসা করার সময়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মদনমোহন তর্কালঙ্কার দুজনেই বেশ কিছু বই লিখেছিলেন। তার মধ্যে ছিল তর্কালঙ্কারের শিশুসাথী-র তিনটি ভাগ। তাঁর মৃত্যুর পর বইগুলির গ্রন্থস্বত্ব দাবি করে তাঁর জামাতা যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ বিদ্যাসাগরকে উকিলের চিঠি ধরিয়েছিলেন। কিন্তু তর্কালঙ্কারের পুরনো চিঠি থেকে প্রমাণিত হয়, তিনি বইগুলির স্বত্ব ছাপাখানাকে দিয়েছেন, তাঁর বা উত্তরসূরিদের তা প্রাপ্য নয়। সে সময় মিটে গেলেও, পরে শ্বশুরমশাইয়ের জীবনীতে বিদ্যাসাগরকে ‘পরস্বহারী’ অপবাদ দেন যোগেন্দ্রনাথ। অনেকে সে কথা বিশ্বাসও করায়, আত্মপক্ষ সমর্থনে পুস্তিকা ছাপিয়ে পুরো ঘটনা সামনে এনেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র, ১৮৮৮ সালে।

বাগবাজারের উকিল দীননাথ বসু বিদ্যাসাগরকে যে নোটিস পাঠিয়েছিলেন, তার ভিত্তি ছিল ১৮৪৭-এর ‘কপিরাইট’ সংক্রান্ত আইন। কোম্পানি আমলের সেই আইনে লেখকের জীবৎকালে প্রকাশিত বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব বলবৎ থাকত তাঁর মৃত্যুর সাত বছর পর্যন্ত, সব মিলিয়ে প্রকাশের ৪২ বছর পর্যন্ত। এর পর ইংল্যান্ডে নতুন কপিরাইট আইন আসে, সামান্য হেরফের করে ভারতে তা চালু হয় ১৯১৪ সালে। এই আইনে গ্রন্থস্বত্বের মেয়াদ বাড়িয়ে লেখকের মৃত্যুর পর ৫০ বছর পর্যন্ত করা হয়।

১৯৩৪ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব নিয়ে তাঁর দৌহিত্রদের মধ্যে মামলা হয় সেই আইনের আওতায়। বঙ্কিমজায়া রাজলক্ষ্মী দেবী নিজের অবর্তমানে বঙ্কিমের বইয়ের কপিরাইট দান করে যান কন্যা শরৎকুমারী দেবীকে। সেই অনুযায়ী শরৎকুমারীর একমাত্র পুত্র ব্রজেন্দ্রসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বসুমতী সাহিত্য মন্দির’-এর সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে সেই সব বই ছাপা ও বিক্রির অনুমতি দেন। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র নিজের ইচ্ছাপত্রে নির্দিষ্ট ভাবে রাজলক্ষ্মী দেবীকে গ্রন্থস্বত্ব দিয়ে যাননি, রাজলক্ষ্মী তাই আইনত সেই বইয়ের স্বত্ব কোনও ‘এক’ কন্যাকে দিতে পারেন না— যুক্তি দেখিয়ে বঙ্কিমের অন্য কন্যা নীলাব্জকুমারী দেবীর তিন পুত্র, নীলাদ্রিনাথ, হিমাদ্রিনাথ ও বিন্ধ্যাদ্রিনাথ মুখোপাধ্যায় উত্তরাধিকার সূত্রে সেই গ্রন্থস্বত্বের অংশ দাবি করে মামলা করেন ব্রজেন্দ্রসুন্দর ও সতীশচন্দ্রের বিরুদ্ধে। মামলা জিতে মুখোপাধ্যায় ভাইরাও বঙ্কিমের বইয়ের গ্রন্থস্বত্বের তিন ভাগের অধিকারী হন।

স্বাধীনতার পর ১৯৫৭-তে নতুন ‘কপিরাইট অ্যাক্ট’ চালু হয় দেশে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে, বিশেষত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিতে ভারত স্বাক্ষরকারী হওয়ায়, একাধিক বার সংশোধিত হয়েছে এই আইনও।

বই পড়া, প্রকাশনা ও গ্রন্থস্বত্বের গুরুত্বকে তুলে ধরতে প্রতি বছর আজকের দিনে পালিত হয় ‘বিশ্ব বই ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’, সেই আবহে বাংলা বই আর তার গ্রন্থস্বত্বের যাত্রার নানা বাঁক বদলকে ফিরে দেখা। ছবিতে এ কালের কলেজ স্ট্রিট, রেলিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে বইয়ের ঠাঁই।

পুরোধা স্মরণে

সিন্ধু সভ্যতা, মহেঞ্জোদড়ো আবিষ্কার ছাড়াও সামগ্রিক ভাবেই দেশের পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস চর্চাকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবিতে)। হরপ্পা-গবেষণার শতবার্ষিকী ও ১২ এপ্রিল রাখালদাসের জন্মদিন উদ্‌যাপনের অঙ্গ হিসেবে কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরের উদ্যোগে ১২-১৩ এপ্রিল হয়ে গেল দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান। ‘রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা’-য় হরপ্পা সংস্কৃতি-গবেষণার শতবর্ষী যাত্রা নিয়ে বললেন পুণে ডেকান কলেজের প্রাক্তন উপাচার্য বসন্ত শিন্ডে, জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা হরপ্পার প্রত্ননিদর্শনের প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লিলি পাণ্ডেয়। পুরাতত্ত্ব চর্চায় রাখালদাসের ভূমিকা নিয়ে বললেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন অধিকর্তা গৌতম সেনগুপ্ত ও সংস্থার প্রাক্তন আঞ্চলিক নির্দেশক ফণীকান্ত মিশ্র।

যাত্রা শুরু

বাংলা বই নিয়ে নতুন একটি পত্রিকার যাত্রা শুরু শহরে— বইকথা। কবিতা গদ্য প্রবন্ধগ্রন্থ অনুবাদবইয়ের আলোচনা করেছেন অগ্রজ ও তরুণ লেখকেরা। সম্পাদকদের বাছাই সর্বদা চোখের সামনে না-থাকা বই; রয়েছে শঙ্খ ঘোষ ও মিহির সেনগুপ্তের স্মরণ, বাণী বসুর নিজের বই নিয়ে কথা। অনিতা অগ্নিহোত্রী যশোধরা রায়চৌধুরী সেবন্তী ঘোষ তৃষ্ণা বসাক মহাশ্বেতা রায়ের একত্র এই উদ্যোগে গতকাল ২২ এপ্রিল সন্ধে সাড়ে ৫টায় রোটারি সদন প্রেক্ষাগৃহে উন্মোচন হল পত্রিকার, ছিলেন সাধন চট্টোপাধ্যায় সুধীর দত্ত সোমেশ্বর ভৌমিক রাজশ্রী ভট্টাচার্য প্রমুখ। প্রবন্ধ ও উপন্যাসের জন্য সম্মানিত হলেন তরুণ দুই লেখক শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য ও পলাশ দে— ‘নমিতা চট্টোপাধ্যায় সাহিত্য সম্মান’ পড়ল অষ্টম বছরে।

মননের অঙ্গন
সারা দেশের ও আন্তর্জাতিক নাট্যব্যক্তিত্বদের দুর্লভ সব লেখায় খচিত অঙ্গন। বাদল সরকার প্রবর্তিত ‘থার্ড থিয়েটার’-এর এই নাট্যপত্রটির ২৮টি সংখ্যা একত্রে সঙ্কলিত হল সদ্য, ১৯৮৬-র প্রথম সংখ্যা থেকে ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ‘শতাব্দীর ২৫ বছর’ সংখ্যা পর্যন্ত— বাদল সরকার নাট্যচর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে, মীরা প্রকাশন থেকে দেবাশিস চক্রবর্তীর সম্পাদনায়। নাটক-সাক্ষাৎকার-প্রবন্ধের সমাহারে পাঠকের চিন্তার অনন্য রসদ। শুরুতে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন: “যে ইতিহাসবোধে ও ইতিহাসপাঠে গভীর প্রত্যয় ও দায়পালনের অঙ্গীকারে আমরা সেদিনও যেমন আজও তেমনই এই থিয়েটার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত... অঙ্গন নাট্যপত্র-এর লক্ষ্যকল্পের পুনরুজ্জীবন... নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।” বাদল সরকারের নাট্যচিন্তা ও দর্শন নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র পাখিরা দেখানো হবে ২৭ এপ্রিল বিকেল ৫টায়, কফি হাউস বই-চিত্র সভাঘরে, সঙ্গে বলবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও অশোক বিশ্বনাথন।

কলকাতা-কথা
একটি পত্রিকার সঙ্গে যখন জড়িয়ে থাকেন বিশিষ্ট লেখক- সংগ্রাহক, ইতিহাস-সংস্কৃতিপ্রেমী তথা কলকাতাপ্রেমী মানুষেরা, তখন তার পাতায় শহরের অচর্চিত বা বিস্মৃত ইতিহাসের নানা দিক ও আঙ্গিক উঠে আসতে বাধ্য। কলকাতা কথকতা (সম্পাদক: চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়) পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যাটি সমৃদ্ধ বিচিত্র বিষয়ে: বাঙালির সুগন্ধ-চর্চা, কলকাতার গোরার বাদ্যি, বৌবাজারে ভুলু পালের ঠাকুরবাড়ি, ‘সুলেখা’ ও কলকাতার অন্যান্য কালি, আলোকচিত্র-চর্চা, ব্যাঙ্কশাল কোর্ট ও হারিয়ে যাওয়া বরফঘর, কলকাতার টাঁকশালে অস্ট্রেলীয় পেনি তৈরির ইতিহাস, সেকেলে শহরের জল-কথা, আরও কত কী। পুরনো বিজ্ঞাপনচিত্র, পিকচার পোস্টকার্ড ও দেশলাইবাক্সের লেবেল-ছবি— টুকরো ইতিহাস সব।

প্রতিরোধচিত্র
স্বাধীনতার পঁচাত্তর পূর্তি স্মরণে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লেখ্যাগারের উদ্যোগে ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে লেখ্যাগার সপ্তাহ উদ্‌যাপন ও প্রদর্শনী ইমেজেস অব রেজ়িস্ট্যান্স— প্রায় দু’শতকে ভারতীয় জনজাতি, স্থানীয় ও গণ আন্দোলনের খণ্ডচিত্র। তিতুমিরের প্রতিরোধ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ থেকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন— বঙ্গভঙ্গ, সশস্ত্র বিপ্লববাদ, মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে আন্দোলনের বিস্তার বা নেতাজির ভিন্ন পথ, বামপন্থী আন্দোলন— উঠে এসেছে ছবিতে; তুলে ধরা হয়েছে মেয়েদের ভূমিকাও। সমস্ত তথ্যের উৎস ব্রিটিশ প্রশাসনিক নথি। ইতিহাসের ছাত্র গবেষক থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই চিন্তার রসদ এই প্রদর্শনীতে। ৪৩ নং শেক্সপিয়র সরণির প্রদর্শনীকক্ষে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত, সকাল ১১টা-সন্ধ্যা ৬টা।

উপেক্ষিত
কলকাতার পূর্ব সীমানা নির্দেশ করতে গিয়ে রূপচাঁদ পক্ষীর উক্তি ‘পুবে বাদাচিংড়িহাটা পদ্মা নদী তদুত্তর’। এই সীমানার কথা তেমন ভাবে উঠে আসেনি কলকাতা-চর্চায়, অথচ এখানেই লুকিয়ে কলকাতার প্রাচীনত্বের অন্যতম সূত্র। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে শহরের এই পুবমুখী বিস্তার পূর্ব কলকাতার জলাভূমির মূল্যেই; নগরায়ণের ফলে (নীচে ছবিতে) সঙ্কুচিত হয়েছে জলাভূমি, হারিয়ে গিয়েছে বহু নিদর্শন, যার সঙ্গে যুক্ত ছিল শহরের প্রাচীন সংস্কৃতি, বাণিজ্য, স্বাধীনতা সংগ্রামেরও স্মৃতি। ‘দেশকাল’, ‘গ্রিন পিপল’স সোসাইটি’ ও ‘দমদম হেরিটেজ প্রিজ়াভের্শন সোসাইটি’-র উদ্যোগে শহরের পূর্ব প্রান্তের স্থাবর-অস্থাবর ঐতিহ্য নিয়ে ক্ষেত্রসমীক্ষা ভিত্তিক কাজ চলছে, সেই নিয়েই গত ১৪ এপ্রিল, লেকটাউন শ্রীভূমির গান্ধী সেবা সঙ্ঘে হয়ে গেল আলোচনা— ইতিহাসবিদ, গবেষক, পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ আধিকারিক, পরিবেশবিজ্ঞানীদের উপস্থিতিতে। এই কাজের ভিত্তিতে পূর্ব শহরতলি ও সল্টলেক উপনগরী এবং রাজারহাট-নিউটাউনের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ নিয়ে বেরোবে বইও।
শিল্পের স্বাক্ষর
শুক্তিশুভ্রা ও নিরঞ্জন প্রধান শিল্পী দম্পতি। কলকাতার সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এই যুগল, শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিলেন চিন্তামণি কর, ধীরেন ব্রহ্ম, গোপাল ঘোষ প্রমুখ দিকপাল শিল্পীদের, পরবর্তী কালে দু’জনেই শিক্ষকতা করেছেন এই ঐতিহাসিক শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই। শুক্তিশুভ্রা চর্চা করেছেন ভারতীয় রীতিতে ছবি আঁকার, প্রকৃতি ও নারী তাঁর মূল বিষয়। পাশাপাশি ভাস্কর্য চর্চায় বলিষ্ঠ স্বাক্ষর রেখেছেন নিরঞ্জন প্রধান— রাজা রামমোহন রায়ের ব্রিস্টলে স্থাপিত পূর্ণাবয়ব ব্রোঞ্জ মূর্তি তাঁরই শিল্পকৃতি। শিল্পজগতে ভাস্কর হিসাবে বেশি সমাদৃত হলেও, নিয়মিত ছবি এঁকেছেন তিনি (ছবিতে তারই একটি)। দু’জনেরই চিত্রকৃতি নিয়ে এ বার প্রদর্শনী নেচার অ্যান্ড বিয়ন্ড, মায়া আর্ট গ্যালারিতে, আজ সন্ধ্যা ৬টায় উদ্বোধন। চলবে ১ মে অবধি, দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা।

বড় পর্দায়
“চিত্রভাষার দিক দিয়ে আমার মতে অরণ্যের দিনরাত্রি আমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছবি, যদিও এদেশে বিশেষ সমাদর পায়নি।” সত্যজিতের খেদ কতটা মেটাবে নতুন প্রজন্ম, জানা যাবে ২৫ এপ্রিল। ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে নজরুল মঞ্চ ও রবীন্দ্র সদনে দেখানো হবে ছবিটি। এ প্রজন্মের ক’জনই বা সত্যজিতের ছবি দেখেছেন বড় পর্দায়? আফসোস কিছুটা মিটবে উৎসবে, থাকছে সোনার কেল্লা, হীরক রাজার দেশে, সুকুমার রায়-ও, সব ‘রেস্টোর্ড ভার্সন’-এ। সঙ্গে গৌতম ঘোষের ছবি রে। ২৬ এপ্রিল থেকে নন্দন-২ অঙ্গনে সত্যজিৎ-প্রদর্শনী, সত্যজিতের কলাকুশলীদের নিয়ে আড্ডা ১ মে রবীন্দ্র সদনে। কার্লোস সওরা, পেদ্রো আলমোদোভার, নান্নি মোরেত্তি, আসগর ফারহাদি, টনি গ্যাটলিফ প্রমুখের নতুন ছবি; ‘কান্ট্রি ফোকাস’— ফিনল্যান্ড।

 India has food surplus today, but India is not free from malnutrition. Malnutrition is weakening the poor people of India like a silent epidemic, they are easy prey for various germs. One of them is tuberculosis. Scientists at a university in Mangalore have looked at the link between malnutrition and tuberculosis outbreaks, finding that at least nine million TB-infected people in India fall victim to tuberculosis each year due to malnutrition, accounting for one-third of all new infections (2.7 million a year). In a country like India, the TB germs are present in almost everyone's body. The lethality of tuberculosis virus is more severe than that of covid virus. In India, four and a half lakh TB patients die every year, an average of one thousand daily. Even so, owning one is still beyond the reach of the average person. India has the highest number of TB patients in the world, with the highest number of TB deaths. Isn't this a shame for India? Why TB prevention is not important in India?


The same answer has been found again and again. That is, the covid virus does not see the rich-poor, but the TB germs attack the poor more, because their bodies are malnourished, weak. The resources and manpower of the state, both of them, are more engaged in the protection of the rich. Tuberculosis patients are therefore more at risk in covid conditions. One of the reasons is that health workers have been deployed to monitor corona infections. As a result, the pace of identifying TB patients and bringing them into the treatment circle slows down. India is at the top of the list of countries with the lowest number of new TB cases, according to the World Health Organization. According to the agency, the number of deaths from tuberculosis has risen steadily over a decade, increasing in 2020 and 2021. The death toll from tuberculosis in India is likely to be higher this year than in 2019. This disparity in the distribution of disease prevention and medical services explains the nature of governance in India.


However, the biggest reason for the country's danger is the increase in malnutrition. Malnutrition was on the rise in India even before the outbreak. According to the latest report of the National Family Health Survey (2019-20), the symptoms of malnutrition among children have increased more than before. The Tuberculosis Research Report indicates that the prevalence of malnutrition is also high among adults. Its causes are not difficult to understand. On the one hand, the agrarian crisis, mass unemployment, rising food prices, the agrarian, working families have reduced the cost of daily necessities, milk-fruit-eggs have gone beyond their means. On the other hand, the Center has reduced its expenditure on food security and social security projects only. The thinner and weaker the body of the poor, the more contagious the disease. Performance has decreased, premature death of working people has increased. Poverty traps are being created anew in the country.

ভারতে আজ খাদ্য উদ্বৃত্ত, কিন্তু অপুষ্টির গ্রাস থেকে মুক্ত হয়নি ভারত। এক নীরব মহামারির মতো অপুষ্টি ভারতের দরিদ্র মানুষকে দুর্বল করছে, নানা ধরনের জীবাণুর সহজ শিকার হচ্ছেন তাঁরা। এর অন্যতম যক্ষ্মা। মেঙ্গালুরুর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা অপুষ্টির সঙ্গে যক্ষ্মার প্রকোপের সম্পর্ক সন্ধান করতে গিয়ে দেখেছেন, ভারতে প্রতি বছর অন্তত নয় লক্ষ যক্ষ্মা-আক্রান্ত মানুষ অপুষ্টির জন্য যক্ষ্মার শিকার হচ্ছেন, যা প্রতি বছর মোট নতুন সংক্রমণের (বছরে ২৬ লক্ষ) এক-তৃতীয়াংশ। ভারতের মতো দেশে যক্ষ্মার জীবাণু প্রায় সকলের শরীরে রয়েছে, দীর্ঘ দিন অন্নাভাবে শীর্ণ শরীর তাকে প্রতিরোধ করতে পারে না বলে সেই জীবাণু সক্রিয় হয়ে উঠে অনর্থ ঘটায়। যক্ষ্মা জীবাণুর মারণক্ষমতা কোভিড ভাইরাসের চেয়েও তীব্র। ভারতে প্রতি বছর সাড়ে চার লক্ষ যক্ষ্মা-আক্রান্ত মারা যান, দৈনিক গড়ে এক হাজার। তা সত্ত্বেও, কোভিড নিবারণে যে তৎপরতা দেখা গেল, তার অতি ক্ষুদ্রাংশও কেন দেখা যায় না যক্ষ্মা নিবারণে। বিশ্বের সর্বাধিক যক্ষ্মা রোগী বাস করেন ভারতে, যক্ষ্মাজনিত মৃত্যুর সংখ্যাও সর্বাধিক। এ কি ভারতের লজ্জা নয়? কেন যক্ষ্মা নিবারণ ভারতে গুরুত্ব পায় না?


এর একটিই উত্তর খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বার বার। তা হল, কোভিড ভাইরাস ধনী-দরিদ্র দেখে না, কিন্তু যক্ষ্মার জীবাণু দরিদ্রদের আক্রমণ করে বেশি, কারণ তাঁদের শরীরই অপুষ্ট, দুর্বল। রাষ্ট্রের সম্পদ ও কর্মশক্তি, দুই-ই বরাবর অধিক নিয়োজিত হয় বিত্তবানের সুরক্ষায়। কোভিড পরিস্থিতিতে তাই আরও বিপন্ন হয়েছেন যক্ষ্মারোগীরা। তার একটি কারণ, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োজিত করা হয়েছে করোনা সংক্রমণের উপর নজরদারির কাজে। ফলে, যক্ষ্মারোগী চিহ্নিত করা এবং তাঁদের চিকিৎসার বৃত্তে আনার কাজের গতি শিথিল হয়ে যায়। যে দেশগুলি থেকে নতুন যক্ষ্মা সংক্রমণের তথ্য আসা সবচেয়ে কমেছে, তার শীর্ষে রয়েছে ভারত, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ওই সংস্থার তথ্য অনুসারে, এক দশক ধরে যক্ষ্মায় মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে কমে আসার পরে ২০২০ এবং ২০২১ সালে বেড়েছে। চলতি বছরেও ভারতে যক্ষ্মায় মৃত্যুর সংখ্যা ২০১৯-এর চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা পরিষেবার বণ্টনে এই বৈষম্য ভারতে প্রশাসনের স্বরূপটি বুঝিয়ে দেয়।

তবে দেশবাসীর বিপন্নতার আরও বড় কারণটি হল অপুষ্টিতে বৃদ্ধি। অতিমারি দেখা দেওয়ার আগেই ভারতে অপুষ্টির প্রকোপ বাড়ছিল। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে (২০১৯-২০) ধরা পড়েছে, শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির নানা লক্ষণ আগের তুলনায় বেড়েছে। যক্ষ্মা বিষয়ক গবেষণার রিপোর্টটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও অপুষ্টির প্রকোপ ব্যাপক। তার কারণগুলি বোঝা কঠিন নয়। এক দিকে কৃষির সঙ্কট, ব্যাপক কর্মহীনতা, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বেসামাল কৃষিজীবী, শ্রমজীবী পরিবারগুলি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে ব্যয় কমিয়েছে, দুধ-ফল-ডিম চলে গিয়েছে তাদের সাধ্যের বাইরে। অন্য দিকে, কেন্দ্র কেবলই খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তার প্রকল্পগুলিতে ব্যয় কমিয়েছে। দরিদ্রের দেহ যত শীর্ণ, দুর্বল হয়েছে, ততই সংক্রামক রোগ ছড়িয়েছে। কর্মক্ষমতা কমেছে, বেড়েছে কর্মক্ষম মানুষের অকালমৃত্যু। দেশে নতুন করে তৈরি হচ্ছে দারিদ্রের ফাঁদ।


Thursday, March 31, 2022

করোনা ভাইরাস প্রবন্ধ রচনা

 সূচনা‍:- সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে মানুষ নিজের প্রখর বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত থেকে উন্নততর সভ্যতার পথে অগ্রসর হয়েছে । কালের নিয়মে জন্ম নিয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান , অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ; জীবন লাভ করেছে এক অনন্য মাত্রা । সভ্যতার জয়যাত্রার পথে মানুষ আজ ভূগর্ভ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছে । কিন্তু পাশাপাশি একথাও সত্য যে পৃথিবীর বুকে সভ্যতা যতই জাঁকিয়ে বসেছে , ততই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের জীবনের নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ । ভিন্ন ভিন্ন যুগে জীবনের এই প্রতিকূলতার রূপও ভিন্ন ভিন্ন । কখনো আঘাত আসে ভূমিকম্প , বন্যা বা খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ রূপে ; কখনো বা পৃথিবীর বুকে কোন মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় মানুষ ভোগে অস্তিত্ব সংকটে ; আবার কখনো সভ্যতার মৃত্যুর পদধ্বনি শোনা যায় কোন মারণরোগ কিংবা মহামারীর আগমনে । বিশ্বব্যাপী প্রাণসংহারী এই মহামারীর তালিকায় নবতম সংযোজন ঘটায় ।

বৈশিষ্ট্য :- একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে এটি বৃহৎ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে বলে একে এপিডেমিক বা মহামারী নামে আখ্যায়িত করা হয়। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ এ পর্যবেক্ষিত এই ভাইরাসটির শরীরজুড়ে খাজকাটা অসংখ্য কন্টক একে আপাতভাবে একটি রাজমুকুটের আকার দেয় । এই ভাইরাসটি ভাইরাসগোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের তুলনায় আয়তনে বেশ খানিকটা বড় । এটি ডায়ামিটারে ০.০৬ মাইক্রন থেকে ০.১৪ মাইক্রন বা গড়ে ০.১২৫ মাইক্রন পর্যন্ত হয়ে থাকে । করোনাভাইরাস এই পৃথিবীর রোগের দুনিয়ায় নতুন নয় । ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব চিহ্নিত হয় । তারপর থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মানুষের শরীরে রোগ বহনকারী প্রায় পাঁচ প্রকারের । নোভেল করোনা ভাইরাস ঘটিত রোগটিকে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন কোভিড -১৯ নামে । যার পুরো কথা হল Corona Virus Disease 19 ( COVID - 19 ) .

সংক্রমণের রুপ:- মিউকাস এর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এই ভাইরাসটি বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে । এক্ষেত্রেও প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে মানুষের শ্বাসযন্ত্র । অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই ভাইরাসটি প্রধানত মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ ঘটায় ।

সারাবিশ্বে এর প্রভাব:- বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসটির সংক্রমণের কারণ সংক্রান্ত ব্যাপারে আর বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না । কি কি ভাবে এই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে সে ব্যাপারে বড় বড় চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অব্দি কেউই এখনো সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারেননি । তবে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের মতে চারটি পর্যায়ে বিভক্ত । প্রথমটি হল , এমন ধরনের মানুষ যারা বিশেষভাবে সংক্রমিত অঞ্চল থেকে সরাসরি সংক্রমিত হয়ে এসেছে । দ্বিতীয় পর্যায়টি হল , যেখানে সরাসরিভাবে সংক্রমিত হওয়া সেই সব মানুষ গুলি নিজেদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্য মানুষদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায় । তৃতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এক বৃহত্তর অঞ্চল জুড়ে । যার ফলে বিশ্বে হাসপাতালে হাহাকার দেখা গেছে, দেশগুলোতে লকডাউন দেখা দিয়েছে, কলকারখানা সব বন্ধ যার কারণে পরিবেশ সবুজ হয়ে উঠলেও রোজগারহীন মানুষেদের না খেতে পেয়ে দিন কাটাতে হয়েছে।

সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন:- করোনা ভাইরাস মানুষ মানুষের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি করেছে ফলে মানুষের মধ‍্যে সমাজিকতার মধ‍্যে প্রাচীর গড়ে দিয়েছে। যেখানে মানুষ বেশি পরিমাণে ব‍্যাক্তিতান্ত্রিক হয়ে পড়েছে।

পরিত্রাণের উপায়:- কোভিড -১৯ এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা বলে কোন কিছু নেই । উপসর্গ অনুযায়ী এর চিকিৎসা হয়ে থাকে । তাই এই ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল ভ্যাক্সিনেশন বা টিকাকরণ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ । বিশেষজ্ঞদের মতে এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বলতে প্রধানত মানুষে মানুষে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রথাকে বোঝানো হয় । এই নিয়মের পালনের নিমিত্তই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলি দেশ বা নির্দিষ্ট সংক্রমিত অঞ্চল জুড়ে জারি করে লকডাউন । তাছাড়া বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বারবার বিশেষ ধরনের মাস্কের ব্যবহার এবং হাত পরিষ্কার রাখার উদ্দেশ্যে ৭০ % আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল দ্বারা তৈরি স্যানিটাইজার তথা সাবান ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন । এছাড়াও তারা জানিয়েছেন সংক্রমণ চলাকালীন বিশেষ প্রয়োজন এবং মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে । তা না হলে করোনাভাইরাস কে প্রতিরোধ করা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে না ।

টিকাকরণ কর্মসূচি:- সমগ্র বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ গবেষণার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে । সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল দীর্ঘ গবেষণার পর করোনাভাইরাসের একটি টিকা আবিষ্কার করে তার ট্রায়াল শুরু করে । এর পরবর্তীতে প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ও চীন নিজের স্বদেশে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে দেয় । রাশিয়াতে সর্বপ্রথম এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের কন্যা । আমাদের উপমহাদেশও ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেনি । ভারতের দুটি সংস্থা : সিরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেক দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভারতে তৈরি দুটি ভ্যাকসিন নিয়ে আসে । এর একটির নাম হলো কোভিশিল্ড এবং অপরটি ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন । প্রথমে পরীক্ষামুলকভাবে এর প্রয়োগ শুরু হয় এবং ট্রায়ালের পর্যায় সফলভাবে শেষ হবার পর ধাপে ধাপে ব্যাপকহারে জনমানসে টিকাকরণ শুরু হয়ে যায় ।

উপসংহার:- সভ্যতা যখন নিজের গতিকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করে , সৃষ্টি তখন সমগ্র সভ্যতাকে ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ করে দেয় । একটি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক ভাইরাস যেন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে এই প্রবাদ বাক্যের সত্যতাই প্রমাণ করে দিল । আবারো আমরা দেখতে পেলাম সৃষ্টির কাছে আমরা ঠিক কতখানি অসহায় । তবে মানুষের এই অসহায়তায় প্রকৃতি বিশ্বজুড়ে দূষণকে কমিয়ে বায়ুকে আবারো বিশুদ্ধ করে তুলেছে ধীরে ধীরে । লকডাউনে শুনশান হাইওয়েতে বন্য নীলগাইয়ের চরে বেড়ানো এই দুর্যোগের পরিস্থিতিতেও আমাদের মুগ্ধ করেছে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে করোনাভাইরাস পরবর্তী পৃথিবী আর আগের মতন থাকবে না । রাজনৈতিক তথা আর্থসামাজিক দিক থেকে এই বিশ্বে হয়তো আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে । মানুষের জীবন যাপনের ক্ষেত্রেও হয়তো আসবে জন্য স্থায়ী পরিবর্তন । তবে একথা সত্যি যে এই দুর্যোগের মেঘ কাটিয়ে উঠে আমরা খুব তাড়াতাড়ি আবার সুস্থ পৃথিবীতে শ্বাস নিতে পারব । নতুন নিয়মের সেই পৃথিবীতে আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে সৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে সভ্যতার যাপনেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা ।