Friday, December 10, 2021

ভূমিধ্বস কারন ফলাফল ও প্রতিরোধ

ভূমিধস

ভূমিধস (Landslide)  আভিকর্ষ বলের প্রভাবে অপেক্ষাকৃত উচ্ছ অঞ্চলের ভূখন্ড, শিলা বা উভয়ের প্রত্যক্ষভাবে নিম্নমুখী অবনমন বা পতনই হল ভূমিধ্বস। প্রায়শই এর কারণ জলের প্রবেশ, যা স্ফীত কাদামাটিকে আরও তরল করে তোলে। ভূমিধস ভূমিক্ষয়ের একটা বড় কারণ এবং জানামতে সবচেয়ে শক্তিশালী অবক্ষয়, যা প্রায়শ বছরে প্রতি বর্গ কিমি ১০০০ টন ছাড়িয়ে যায়। পাহাড়ি এলাকায় এটা বহুল প্রচলিত। এই অঞ্চলের অনবস্থার (instability) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ভূমিধস ঘটনার লিখিত নথিপত্র খুব কম হলেও এখানে বসবাসকারী লোকজনের এটা একটা স্থায়ী দুর্ভোগ। প্রকৃতপক্ষে প্রতি বছরই, বিশেষ করে বর্ষাকালে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয়বিধ ঢালে ভূমিধস সংঘটিত হয়। ভারত ঘন বসতিপূর্ণ দেশ হলেও জনসংখ্যার বিন্যাসের দিক থেকে পাহাড়ি অঞ্চল একেবারে বিপরীত। আর এর পেছনেও বড় কারণ এই ভূমিধস ভীতি, যা সেখানে বসবাস করতে অথবা অবকাঠামো গড়ে তুলতে নিরুৎসাহিত করে, যদিও অসমতা, গভীর অরণ্য এবং বন্ধুর ভূ-প্রকৃতিও এর জন্য দায়ী। ভূমিধসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সড়ক প্রতিবন্ধকতা। 

ভবনাদি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কারণে সৃষ্ট ভূমিধস সাধারণত পার্বত্য জেলা শহরের শহর ও উপশহর কেন্দ্রে সীমিত। বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো, বিশেষ করে খাড়া উঁচু ঢালের উপর যেগুলি বিদ্যমান সেগুলি, ভূমিধসের কারণে ধসে পড়ে জানমালের ক্ষতি সাধন করে। বিগত বছরগুলিতে খাড়া উঁচু ঢালে জুমচাষ এবং অন্যান্য চাষাবাদও ভূমিধস সংঘটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতসব সমস্যা সত্ত্বেও দেশের মোট প্রায় ১৮% অঞ্চলব্যাপী পার্বত্য অঞ্চল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। সম্প্রতি বহু বিদেশি কোম্পানি এই অঞ্চলে তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। কিন্তু পাহাড়ি এলাকায় যখন রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয় তখন ভূমিধসপ্রবণ অঞ্চলগুলির কথা বিবেচনায় আনা হয় নি। এ কারণে প্রতিবছর এসব সড়কে ভূমিধস ঘটছে এবং যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে শুধু সড়কই নয়, বিভিন্ন অবকাঠামোও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

মানব সমাজ ও অর্থনীতির ওপর ভূমিধসের সুনির্দিষ্ট বিরূপ প্রভাব সত্ত্বেও এ সম্পর্কে এদেশে গবেষণা শুরু হয়েছে অপেক্ষাকৃত দেরিতে।  ডুপিটিলা স্তরসমষ্টি দ্বারা গঠিত পাহাড়ে পার্শ্বিক বিস্তার (lateral spreading),  তৎসংলগ্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক ঢালের নতিমাত্রা (১২০ বেশি) স্তরের প্রতিন্যাস (bedding altitude) শিলার লক্ষণ (rock lithology) ও তৃণহীন ঢালে বৃষ্টির জলের অনুপ্রবেশ ঐ অঞ্চলের ভূমিধসের জন্য দায়ী। ভূমিক্ষয়ের জন্য তিন ধরনের ভূমিধস ও ঢাল বিচ্যুতি, যথা পার্শ্বিক প্রসারণ ব্যর্থতা, ডুপিটিলা স্তরসমষ্টি দ্বারা গঠিত পাহাড়ে ঘূর্ণন ও স্থানান্তরিক ব্যর্থতা (rotational and transitional failure) এবং বোকাবিল স্তরসমষ্টি দ্বারা গঠিত পাহাড়ে ত্রিমাত্রিক ব্যর্থতা (block failure) ও টিপাম স্তরসমষ্টি ঘূর্ণন, স্থানান্তরিক ও ত্রিমাত্রিক ব্যর্থতা দায়ী। 


ভূমিধসের প্রকার, কারণ ও প্রকৃতি
 :- ভূমিধস সংঘটনের প্রকৃতি ও প্রক্রিয়াদি সমুহ হচ্ছে: ১) পার্শ্বিক সমর্থনের (lateral support) অপসারণ, যার মধ্যে রয়েছে- (ক) পাহাড়ি নদী কর্তৃক পার্শ্বক্ষয়, (খ) পূর্ববতী ঢাল বিচলন, যেমন স্খলন (slum), যা নতুন ঢালের সৃষ্টি করে, (গ) মানুষ কর্তৃক ঢালের পরিবর্তন, যেমন পাহাড় কাটা, গর্ত করা বা খাল খনন; ২) ঢালে ওজন বৃদ্ধি, যার মধ্যে রয়েছে- (ক) বৃষ্টির পানি জমা, (খ) গাছপালার বৃদ্ধি, (গ) কৃত্রিমভাবে শিলা বা গন্ডশিলা নির্মাণ, (ঘ) ভবনাদি ও অন্যান্য কাঠামোর ভর, (ঙ) ছিদ্রযুক্ত পাইপ লাইন, পয়ঃপ্রণালী, খাল ও জলাধারের নিঃসারিত পানির ওজন; ৩) ভূমিকম্প; ৪) ভূ-অভ্যন্তরস্থ প্রচন্ড শক্তির কারণে পাহাড়সমূহের আঞ্চলিকভাবে একদিকে কাত হওয়া; ৫) ভূনিম্নস্থ সমর্থনের (underlying support) অপসারণ, যার মধ্যে রয়েছে (ক) উজানভাগের পাহাড়ি নদীর স্রোতের দ্বারা নদীখাতের ক্ষয় এবং নদী ও তরঙ্গের দ্বারা কর্তন, (খ) কর্দমশিলার স্ফীতি এবং ৬) জুমচাষ।

প্রতিরোধ (Prevention)  ভূমিধস প্রতিরোধের প্রচলিত প্রকৌশল পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ভূ-পৃষ্ঠস্থ ও অন্তর্ভূ-পৃষ্ঠস্থ নিষ্কাশন, অসংহত ঢাল পদার্থ অপসারণ, ধারক প্রাচীর নির্মাণ অথবা এসবের একত্র সমাবেশ।

No comments: