Friday, December 10, 2021

ভূমিধ্বস কারন ফলাফল ও প্রতিরোধ

ভূমিধস

ভূমিধস (Landslide)  আভিকর্ষ বলের প্রভাবে অপেক্ষাকৃত উচ্ছ অঞ্চলের ভূখন্ড, শিলা বা উভয়ের প্রত্যক্ষভাবে নিম্নমুখী অবনমন বা পতনই হল ভূমিধ্বস। প্রায়শই এর কারণ জলের প্রবেশ, যা স্ফীত কাদামাটিকে আরও তরল করে তোলে। ভূমিধস ভূমিক্ষয়ের একটা বড় কারণ এবং জানামতে সবচেয়ে শক্তিশালী অবক্ষয়, যা প্রায়শ বছরে প্রতি বর্গ কিমি ১০০০ টন ছাড়িয়ে যায়। পাহাড়ি এলাকায় এটা বহুল প্রচলিত। এই অঞ্চলের অনবস্থার (instability) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ভূমিধস ঘটনার লিখিত নথিপত্র খুব কম হলেও এখানে বসবাসকারী লোকজনের এটা একটা স্থায়ী দুর্ভোগ। প্রকৃতপক্ষে প্রতি বছরই, বিশেষ করে বর্ষাকালে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয়বিধ ঢালে ভূমিধস সংঘটিত হয়। ভারত ঘন বসতিপূর্ণ দেশ হলেও জনসংখ্যার বিন্যাসের দিক থেকে পাহাড়ি অঞ্চল একেবারে বিপরীত। আর এর পেছনেও বড় কারণ এই ভূমিধস ভীতি, যা সেখানে বসবাস করতে অথবা অবকাঠামো গড়ে তুলতে নিরুৎসাহিত করে, যদিও অসমতা, গভীর অরণ্য এবং বন্ধুর ভূ-প্রকৃতিও এর জন্য দায়ী। ভূমিধসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সড়ক প্রতিবন্ধকতা। 

ভবনাদি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কারণে সৃষ্ট ভূমিধস সাধারণত পার্বত্য জেলা শহরের শহর ও উপশহর কেন্দ্রে সীমিত। বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো, বিশেষ করে খাড়া উঁচু ঢালের উপর যেগুলি বিদ্যমান সেগুলি, ভূমিধসের কারণে ধসে পড়ে জানমালের ক্ষতি সাধন করে। বিগত বছরগুলিতে খাড়া উঁচু ঢালে জুমচাষ এবং অন্যান্য চাষাবাদও ভূমিধস সংঘটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতসব সমস্যা সত্ত্বেও দেশের মোট প্রায় ১৮% অঞ্চলব্যাপী পার্বত্য অঞ্চল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। সম্প্রতি বহু বিদেশি কোম্পানি এই অঞ্চলে তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। কিন্তু পাহাড়ি এলাকায় যখন রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয় তখন ভূমিধসপ্রবণ অঞ্চলগুলির কথা বিবেচনায় আনা হয় নি। এ কারণে প্রতিবছর এসব সড়কে ভূমিধস ঘটছে এবং যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে শুধু সড়কই নয়, বিভিন্ন অবকাঠামোও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

মানব সমাজ ও অর্থনীতির ওপর ভূমিধসের সুনির্দিষ্ট বিরূপ প্রভাব সত্ত্বেও এ সম্পর্কে এদেশে গবেষণা শুরু হয়েছে অপেক্ষাকৃত দেরিতে।  ডুপিটিলা স্তরসমষ্টি দ্বারা গঠিত পাহাড়ে পার্শ্বিক বিস্তার (lateral spreading),  তৎসংলগ্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক ঢালের নতিমাত্রা (১২০ বেশি) স্তরের প্রতিন্যাস (bedding altitude) শিলার লক্ষণ (rock lithology) ও তৃণহীন ঢালে বৃষ্টির জলের অনুপ্রবেশ ঐ অঞ্চলের ভূমিধসের জন্য দায়ী। ভূমিক্ষয়ের জন্য তিন ধরনের ভূমিধস ও ঢাল বিচ্যুতি, যথা পার্শ্বিক প্রসারণ ব্যর্থতা, ডুপিটিলা স্তরসমষ্টি দ্বারা গঠিত পাহাড়ে ঘূর্ণন ও স্থানান্তরিক ব্যর্থতা (rotational and transitional failure) এবং বোকাবিল স্তরসমষ্টি দ্বারা গঠিত পাহাড়ে ত্রিমাত্রিক ব্যর্থতা (block failure) ও টিপাম স্তরসমষ্টি ঘূর্ণন, স্থানান্তরিক ও ত্রিমাত্রিক ব্যর্থতা দায়ী। 


ভূমিধসের প্রকার, কারণ ও প্রকৃতি
 :- ভূমিধস সংঘটনের প্রকৃতি ও প্রক্রিয়াদি সমুহ হচ্ছে: ১) পার্শ্বিক সমর্থনের (lateral support) অপসারণ, যার মধ্যে রয়েছে- (ক) পাহাড়ি নদী কর্তৃক পার্শ্বক্ষয়, (খ) পূর্ববতী ঢাল বিচলন, যেমন স্খলন (slum), যা নতুন ঢালের সৃষ্টি করে, (গ) মানুষ কর্তৃক ঢালের পরিবর্তন, যেমন পাহাড় কাটা, গর্ত করা বা খাল খনন; ২) ঢালে ওজন বৃদ্ধি, যার মধ্যে রয়েছে- (ক) বৃষ্টির পানি জমা, (খ) গাছপালার বৃদ্ধি, (গ) কৃত্রিমভাবে শিলা বা গন্ডশিলা নির্মাণ, (ঘ) ভবনাদি ও অন্যান্য কাঠামোর ভর, (ঙ) ছিদ্রযুক্ত পাইপ লাইন, পয়ঃপ্রণালী, খাল ও জলাধারের নিঃসারিত পানির ওজন; ৩) ভূমিকম্প; ৪) ভূ-অভ্যন্তরস্থ প্রচন্ড শক্তির কারণে পাহাড়সমূহের আঞ্চলিকভাবে একদিকে কাত হওয়া; ৫) ভূনিম্নস্থ সমর্থনের (underlying support) অপসারণ, যার মধ্যে রয়েছে (ক) উজানভাগের পাহাড়ি নদীর স্রোতের দ্বারা নদীখাতের ক্ষয় এবং নদী ও তরঙ্গের দ্বারা কর্তন, (খ) কর্দমশিলার স্ফীতি এবং ৬) জুমচাষ।

প্রতিরোধ (Prevention)  ভূমিধস প্রতিরোধের প্রচলিত প্রকৌশল পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ভূ-পৃষ্ঠস্থ ও অন্তর্ভূ-পৃষ্ঠস্থ নিষ্কাশন, অসংহত ঢাল পদার্থ অপসারণ, ধারক প্রাচীর নির্মাণ অথবা এসবের একত্র সমাবেশ।

Monday, October 11, 2021

অভিশপ্ত প্রহর

 আজ সোমবার। সূর্য মহাশয় আকাশ থেকে সকল গাছপালাকে যেন হাসিয়ে তুলেছে। এরকম সকাল বেশ মনোরম এমন অবস্থায় কফি খেতে খেতে মেঘশুন‍্য আকাশের কল্পনা করতে আমার বেশ ভালো লাগে। মনে হয় প্রসারিত দিগন্তে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়, হয়ত সেখানে অনেক কিছুর সাথে দেখা মিলতে পারে। মনে হয় প্রকৃতির অজানা সব রহস্য ওখানেই লুকিয়ে রয়েছে। ইচ্ছে করে ওখানে একটু উঁকি দিয়ে আসতে। এসব চিন্তাভাবনার মধ্যে হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে উপস্থিত হল রামনরেশ ওরফে রামু। আমার কফির কাপটা পড়তে পড়তে বেঁচে গেল। ওর কথাবার্তা শুনে মনে হল ওর এক বিপদ হয়েছে এবং আমাকে এখুনি যেতে হবে। আগত‍্যা কি আর করি যেতেই হল ওদের ওখানে। যাওয়ার পথে আমার খুরতুতো মাসতুতো বোন সেলেনাকে ডেকে নিলাম। ঘণ্টাখানেক পথ যাওয়ার পর হাটাপথ ধরে গলির ভিতর দিয়ে গিয়ে আমরা ফাঁকা কংক্রিটের রাস্তা ধরে যেতে লাগলাম। সেই সময় শোনা গেল দূর থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। কাছে যেতেই দেখলাম বেশ ভিড় জমেছে। ভিড় কাটিয়ে ভিতরে গিয়ে দেখলাম দুজন মরে পড়ে আছে, একটা মেয়ে ও একটা ছেলে। দেখে বুঝলাম মেয়েটার বয়স নয় বা দশ ও ছেলেটির বয়স মধ‍্য চল্লিশের। এরকম আশ্চর্য মৃত্যু আমার জীবনে আমি প্রথম দেখলাম।জিজ্ঞেস করে জানতে পারা গেল সম্পর্কে তারা বাবা ও মেয়ে।


Read more......

Saturday, October 9, 2021

শিশু শিক্ষায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশের গুরুত্ব আলোচনা করো ।

 


আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল-শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ জীবন বিকাশের সহায়তা করা। আর যেখানে বর্তমানের প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষার্থীর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ সমানভাবে প্রভাবিত করে।


শিক্ষার্থীর প্রাকৃতিক পরিবেশে বিভিন্ন দিক দিয়ে শিক্ষার্থীকে প্রভাবিত করে। যেমন-

1️⃣ খাদ্য সরবরাহ:-প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্গত উদ্ভিদজগৎ শিক্ষার্থীকে ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রভাবিত করে।

 2️⃣সুস্থ জীবন যাপন:-প্রাকৃতিক পরিবেশের এমন কিছু জীবাণু জন্মায় যেগুলি দূষিত পদার্থ নষ্ট করে এবং পরিবেশের সুস্থতা বজায় রাখে। প্রাকৃতিক পরিবেশের এর প্রভাবে শিক্ষার্থীর মধ্যে সুস্থ জীবনজাপনের প্রয়াসের শিক্ষা দেয়। 

 3️⃣দৈনন্দিন চাহিদা :- প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্গত যে অংশে মানুষ বাস করে তাকে বলা হয় বায়োস্ফিয়ার। এই বায়োস্ফিয়ারই পৃথিবীর দূষিত পদার্থগুলি শোষণ করে। সুতরাং মানুষের জন্য যা কিছু দূষিত তা দূর করার প্রবণতা শিক্ষার্থী এই প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে লাভ করে।

4️⃣বস্তুর ধারণা:-  প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে পাহাড়, পর্বত, নদ-নদী এবং সমুদ্র ইত্যাদি বর্তমান এবং তাদের সমন্বয়ে পরিবেশকে সুন্দর দেখায়। প্রাকৃতিক পরিবেশের এই সৌন্দর্যমূল্য শিক্ষার্থীকে রুচিসম্মতভাবে জীবনযাপনের অনুপ্রাণিত করে এবং সক্রিয় করে তোলে।

 5️⃣কৃষি মূলক মূল্যায়ন :- প্রাকৃতিক পরিবেশ, শিক্ষার্থীকে প্রাচীন সভ্যতা গুলির সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে। এই ধারণা শিক্ষার্থীকে তার নিজের বসবাসের স্থান, তার কৃষ্টি ইত্যাদির মূল্যায়ন সঠিকভাবে করতে সাহায্য করে।


 সামাজিক পরিবেশের উপর গুরুত্ব:-- 

সামাজিক পরিবেশ যে সমস্ত দিক থেকে শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশে প্রভাবিত করে তাদের মধ্যে হল-

1️⃣শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিকাশ:- সামাজিক পরিবেশের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যাভ‍্যাস(Health Habit), খাদ্যাভ্যাস(Food Habit) ইত‍্যাদি গড়ে ওঠে।

2️⃣সামাজিক বিকাশ:-সামাজিক পরিবেশের বিশেষভাবে সমাজর অন্তর্গত পরিবারের প্রভাবে শিক্ষার্থী, অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পর্কে সচেতন হয় এবং তার দরুন তাদের জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ হয়।

3️⃣জীবনযত্রার মান উন্নয়ন:-সামাজিক পরিবেশের প্রভাবে শিক্ষার্থী তার নিজস্ব সংস্কৃতি এবং কৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যগুলি অর্জন করে। এক কথায় বলা যায় সামাজিক পরিবেশ বিশেষভাবে শিক্ষার্থীর সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে।

4️⃣শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ:-শিক্ষালয়(School) ধর্মীয়সংস্থা(Religious Institution) ইত্যাদির মতো সামাজিক পরিবেশ অন্তর্গত সংস্থাগুলি শিক্ষার্থীর আচরণ কে প্রভাবিত করে তার মধ্যে আধ্যাত্মিক নৈতিক এবং চারিত্রিক বিকাশে সহায়তা করে।

5️⃣সু অভ্যাস গঠন:- সামাজিক পরিবেশের অন্তর্গত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংস্থাগুলি সমাজেরই উপাদান হিসেবে কাজ করে। শিক্ষার্থীর মধ্যে আদর্শ জীবনযাপনের উপযোগী শৃঙ্খলা বোধ স্থায়ীভাবে জাগ্রত করে।


সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী কাকে বলে ? সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর উদ্দেশ্য লেখ ? সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর তাৎপর্য উল্লেখ করো।

 


যেসব কার্যাবলী শিক্ষার্থীর বৈদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে তার জীবনের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের অন্যান্য দিকে সহায়তা করে তাদের একত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী বলা হয়।



শিক্ষার আধুনিক লোক্ষ‍্যর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিবর্তনের ধারায় সাপেক্ষ শিক্ষার্থীর শিক্ষার লক্ষ্যকে সফল করার জন্যে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর ভূমিকা অনবদ্য।
এই কার্যাবলীর উদ্দেশ্য গুলি হল নিম্নলিখিত-
❶শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সহায়তা করা।
❷শিক্ষার্থীর সক্রিয়তার মধ্যে বৈচিত্র এনে প্রথাগত শিক্ষার একঘেয়েমি দূর করা।
❸শিক্ষার্থীদের কর্মী স্বাধীনতা দিয়ে তাদের মধ্যে স্থায়ী শৃঙ্খলা বোধ জাগ্রত করা।
❹ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থীকে বিকাশের সুযোগ দান করা।
❺শিক্ষার্থী সামাজিক ও চারিত্রিক বিকাশের সহায়তা করা।


শ্রেণিবহির্ভূত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী তাৎপর্য গুলি হল-

1️⃣মানসিক বিকাশ:- সুস্থ দেহে সুস্থমনের দৈহিক বিকাশ সঠিকভাবে হলে তার প্রভাব মনের উপর পড়ে। ফলে, বিতর্ক সভা, আলোচনা সভা, চিত্র অংকন ও পত্রিকা প্রকাশ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা প্রভৃতিতে শিক্ষার্থীর বৈদিক বিকাশ যথাযথ হয়।

 2️⃣সামাজিক বিকাশ:- N.C.C, N.A.S.S প্রভৃতি সমাজসেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর সমাজবোধের বিকাশ ঘটে।

 3️⃣শৃঙ্খলাবোধে বিকাশ:-  শিক্ষার্থী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী গুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে করার ফলে তারমধ্যে শৃঙ্খলাবোধের বিকাশ ঘটে ।

4️⃣আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি:-  সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে যেহেতু এই কাজটি তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পড়ে থাকে ।

5️⃣উৎপাদনমূলক কার্য ও বৃত্তি:-  সূচের কাজ, বাগান তৈরি, সাবান তৈরি, মোমবাতি তৈরি, মাটির জিনিস তৈরি প্রভৃতি উৎপাদন মূলক কাজে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে যা অনেক ক্ষেত্রে বৃত্তির রূপ নেয় ।

6️⃣একঘেয়েমি দূরীকরণ:- কর্ম বৈচিত্র, কর্ম স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য তার আনন্দ অনুভূতি আসে এরকম বৈচিত্র্যপূর্ণ কার্যাবলী শিক্ষার্থীরা একঘেয়েমি দূর করে ।

7️⃣প্রাক্ষোভিক বিকাশ:- শিক্ষার্থীরা যখন নানা সহপাঠক্রমিক কাজে যোগ দেয় তখন তাদের মধ্যে এক অভিনব আবেগের সৃষ্টি হয় যার ভিতর দিয়ে তাদের মধ‍্যে বিভিন্ন প্রাক্ষোভিক বিকাশ ঘটে। 

Friday, September 17, 2021

ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত সাম্যের অধিকার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। ভারতীয় সংবিধানে 16 নং ধারায় বর্ণিত সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমানাধিকারের ব্যতিক্রম গুলি কি? অথবা ভারতীয় সংবিধানে প্রদত্ত সাম্যের অধিকার আলোচনা করো।

add

 11.

🏯ভারতের সাম্যের অধিকার



ভারতীয় সংবিধানে ১৪-১৮ নং ধারায় সাম্যের অধিকার ঘােষিত স্বীকৃত হয়েছে

[1] আইনগত সাম্য প্রতিষ্ঠা: সংবিধানের ১৪ নং ধারায় দুটি অধিকারের উল্লেখ রয়েছে

🕴️) আইনের দৃষ্টিতে সমতা: আইনের দৃষ্টিতে সমতার অর্থ হল সব নাগরিক আইনের চোখে সমান। ক্ষমতা, পদমর্যাদা অবস্থা নির্বিশেষে কোনাে ব্যক্তি দেশের আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানে 'আইনের দৃষ্টিতে সমতা নীতির কয়েকটি উল্লেখযােগ্য ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন

সাধারণ নাগরিকের তুলনায় পুলিশ কর্মচারীরা ব্যাপক ক্ষমতা ভােগ করে থাকেন এবং

o    সংবিধানের ৩৬ নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যায় না


·         👬)আইন কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার: আইনসমূহ কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকারের মাধ্যমে সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আইন সমভাবে প্রযুক্ত হবে। এই অধিকারের অর্থ হল লােকের অবস্থা বা প্রকৃতির বিভিন্নতা বিচার করে প্রত্যেক আইনকে সব ব্যক্তির ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়ােগ করতে হবে। অবশ্য রাষ্ট্র যুক্তিযুক্তভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে শ্রেণিবিভক্ত করতে পারে এবং পৃথক পৃথক শ্রেণির জন্য রাষ্ট্র পৃথক আইন প্রণয়ন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রত্যেকে সমানভাবে কর দেবে এরূপ নয়। আয়কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগণকে আয়ের পরিমাণ অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করে বিভিন্ন হারে আয়কর ধার্য করা হয়

[2] বৈষম্যমূলক আচরণ নিষিদ্ধকরণ: সংবিধানের ১৫ নং ধারায় বলা হয়েছে যে ধর্ম-জাতিবর্গস্ত্রী-পুরুষ এবং জন্মস্থানজনিত কারণে কোনাে নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। ছাড়া কোনাে নাগরিককে উপরোক্ত যে-কোনাে কারণের জন্য দোকান, সাধারণের ব্যবহার্য রেস্তোরাঁ, হােটেল প্রমােদস্থলে প্রবেশ এবং রাষ্ট্র কর্তৃক পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে তৈরি করা কূপ, জলাশয়, স্নানের ঘাট, রাস্তা আশ্রয়স্থল ব্যবহার করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা চলবে না। তবে রাষ্ট্র নারী, শিশু সামাজিক বা শিক্ষাগত দিক থেকে অনগ্রসর শ্রেণিসমূহ, তপশিলি জাতি উপজাতিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন, করতে পারে

[3] সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমানাধিকার: ১৬ নং ধারায় বলা হয়েছে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, স্ত্রী, পুরুষ, বংশধারা, বর্ণ, জন্মস্থান বা বাসস্থানের ভিত্তিতে কোনাে নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা চলবে না। নিয়ােগ ছাড়াও বেতন, পদোন্নতি, ছুটি, পেনশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে। অবশ্য এই অধিকারের কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমন

·        a) রাষ্ট্র প্রয়ােজন মনে করলে কোনাে বিশেষ অনুন্নত শ্রেণির জন্য সরকারি চাকরি সংরক্ষণ করতে পারে। সরকারি চাকরিতে তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং অনগ্রসর (OBC) শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়

·         b)ধর্ম বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত চাকরি সংশ্লিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে

·         c)সংসদ আইন করে কোনাে রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সরকারি চাকরিতে নিয়ােগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বসবাসগত যােগ্যতাকে আবশ্যিক শর্ত হিসেবে আরােপ করতে পারে

[4] অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধকরণ: ১৭ নং ধারায় অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংসদে ১৯৫৫ সালে অস্পৃশ্যতাবিরােধী আইন পাস করা হয়। এর দ্বারা অস্পৃশ্যতা আচরণকারীদের শাস্তির বিধান লিপিবদ্ধ হয়েছে

[5] উপাধি নিষিদ্ধকরণ: সংবিধানে ১৮ নং ধারায় নাগরিকদের মধ্যে গণতন্ত্রসুলভ সাম্য প্রতিষ্ঠাকল্পে বলা হয়েছে যে, কোনাে ভারতীয় নাগরিক দেশি বা বিদেশি পদবি বা উপাধি গ্রহণ করতে পারবে না, কিন্তু সামরিক বা শিক্ষা-সংস্কৃতিমূলক উপাধির ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযােজ্য হবে না

 🏯সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমানাধিকারের ব‍্যতিক্রম  

16নং ধারায় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমানাধিকারের ব‍্যতিক্রমগুলি হল--

 i) রাষ্ট্র প্রয়োজন মনে করলে কোনো বিশেষ অনুন্নত শ্রেণীর জন্য সরাসরি চাকরি সংরক্ষণ করতে পারে।সরকারি চাকরিতে তপশীলি জাতি, উপজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণ ব‍্যবস্থার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়।

ii) ধর্ম বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত চাকরি সংশ্লিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংরক্ষণের ব‍্যাবস্থা করা যেতে পারে।

iii) সংসদ আইন করে কোন রাজ‍্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বসবাসগত যোগ্যতাকে আবশ্যিক শর্ত হিসাবে আরোপ করতে পারে।