বায়ুমন্ডল
(Atmosphere):
☻ সংজ্ঞাঃ ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বে যে অদৃশ্য গ্যাসের আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে,তাকে বায়ুমণ্ডল(Atmosphere) বলে । বায়ুমণ্ডল বলতে পৃথিবীকে
চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে বুঝায়,যা পৃথিবী তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে । একে আবহমণ্ডলও বলা হয় । বায়ুমণ্ডলকে চোখে দেখা যায়
না,শুধু এর অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে
পারি।পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে এই বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে
আবর্তিত হয় ।
বিস্তারঃ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে মোটামুটিভাবে প্রায় ১০০০০ কিমি পর্যন্ত
বায়ুমন্ডলের অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হয় ।
বৈশিষ্ট্যঃ এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
ক)বায়ুমন্ডল সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি
রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা করে ।
খ)বায়ুমন্ডল তাপ ধরে রাখার মাধ্যমে
(গ্রীনহাউজ প্রক্রিয়া) ভূপৃষ্টকে উওপ্ত করে এবং দিনের তুলনায় রাতের তাপমাত্রা
হ্রাস করে পৃথিবীর উষ্ণতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
গ)বাতাসের পরিমাণ ও বায়ুমন্ডলীয় চাপ
বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রকম হয় ।
ঘ)স্থলজ উদ্ভিদ ও স্থলজ প্রাণীর বেঁচে
থাকার জন্য উপযুক্ত বাতাস কেবল পৃথিবীর বায়ুমন্ডলেই পাওয়া যায় ।
ঙ)বায়ুমন্ডলের ভর প্রায় ৫×১০১৮ কেজি ।
বায়ুমন্ডলের
উপাদানসমূহ (Components of Atmosphere)- বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ (Blends of
Different Gases),জলীয় বাষ্প ( Water Vapor) এবং জৈব ও অজৈব কণিকা বা অ্যারোসল (Aerosol):
☻
বায়ুমন্ডলের
উপস্থিতি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০০০ কিমি পর্যন্ত ধরা হলেও বায়ুমন্ডল গঠনকারী উপাদানগুলির
শতকরা ৯৭ ভাগই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৭-৩০ কিমির মধ্যে অবস্থান করে । বায়ুমন্ডল
গঠনকারী এইসকল উপাদানগুলি মূলত তিনপ্রকার । যথা- (১) বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ, (২) জলীয় বাষ্প এবং (৩) জৈব ও অজৈব কণিকা ।
নীচে এগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
(১) বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণঃ বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে নাইট্রোজেনের (Nitrogen) পরিমাণ সব চেয়ে বেশী (৭৮%) এবং তার
পরেই অক্সিজেনের (Oxygen) স্থান (২০.৯%) । এরা মিলিত ভাবে
বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৯৮.৯% ভাগ অধিকার করে আছে । এরা ছাড়া বায়ুমণ্ডলের বাকি ১.১ ভাগ
অংশে কার্বন ডাই-অক্সাইড (Carbon dioxide), আর্গন (Argon), নিওন (Neon), হিলিয়াম (Helium), ক্রিপ্টন(Krypton), জেনন (Xenon), হাইড্রোজেন (Hydrogen), মিথেন (Methane), নাইট্রাস অক্সাইড(Nitrous oxide), ওজোন (Ozone) প্রভৃতি নানা গ্যাস রয়েছে ।
গুরুত্বঃ বায়ুমন্ডলের গ্যাসীয় উপাদানগুলির
গুরুত্ব নিম্নরূপ-
ক) নাইট্রোজেন উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে খাদ্য
সরবরাহ,রাসায়নিক সার উৎপাদন,মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি প্রভৃতিতে সাহায্য করে ।
খ) অক্সিজেন জীবজগতের শ্বসনকার্য,লোহায় মরিচা সৃষ্টি,আগুন জ্বালানো,প্রাণীদেহে উত্তাপ ও শক্তির যোগান প্রভৃতিতে সাহায্য করে ।
গ) কার্বন-ডাই-অক্সাইড জীবজগতের খাদ্যের
যোগান,তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ,কার্বনজাতীয় ও চুনজাতীয় খনিজ গঠন প্রভৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।
ঘ) ওজোন গ্যাস সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনী
রশ্মি শোষন,নিম্ন বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
প্রভৃতিতে ভূমিকা রাখে ।
(২) জলীয় বাষ্পঃ জলীয় বাস্প হল জলের গ্যাসীয় অবস্থা । এটি বায়ুমন্ডলের একটি গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান । জলীয় বাষ্প ভরের দিক থেকে বায়ুমন্ডলের প্রায় ০.২৫% । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে
প্রায় ৬ কিমি উচ্চতার মধ্যেই প্রায় ৯০% জলীয় বাস্প অবস্থান করে থাকে । অবস্থান ও
সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে বায়ুমন্ডলে এর গড় উপস্থিতির পরিমাণও পরিবর্তিত হয় ।
গুরুত্বঃ বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব নিম্নরূপ-
ক)বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প সৌরতাপ শোষণ
করে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয় ।
খ)জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির জন্যই পৃথিবীতে
মেঘ, বৃষ্টি,
তুষারপাত, কুয়াশা প্রভৃতির সৃষ্টি হয় ।গ)জলচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে ।
ঘ)বাস্পীভবনের হারকে নিয়ন্ত্রণ করে ।
এবং (৩) জৈব ও অজৈব কণিকা বা অ্যারোসল
(Aerosol):
বুৎপত্তিগত
অর্থঃ ‘Aero’ শব্দের অর্থ ‘বায়ু’ ও ‘Sol’ শব্দের অর্থ ‘ধূলিকণা’।
সংজ্ঞা: বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের জৈব ও অজৈব কণিকাগুলিকে একত্রে অ্যারোসল বলে । এগুলির মধ্যে প্রধান হল- (i)অতি ক্ষুদ্র খনিজ লবণ,(ii)সমুদ্রতীরের ছোটো বালুকণা এবং (iii)কয়লা গুঁড়ো বাধোঁয়া । এছাড়াও খনিজ কনা,জৈব উপাদান,পরাগ রেণু ও গুটিবীজ,সাগরের স্প্রে,আগ্নেয়গিরির ছাই,বিভিন্ন শিল্প দূষকসমূহ যেমন ক্লোরিন
কণা,ফ্লোরিন যৌগ এবং পারদ মৌল বাষ্প
প্রভৃতিও অ্যারোসল রূপে বায়ুমন্ডলে উপস্থিত থাকে ।
গুরুত্বঃ বায়ুমন্ডলের জৈব ও অজৈব কণিকার গুরুত্ব নিম্নরূপ-
ক) এটি বায়ুমন্ডলে অধঃক্ষেপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে ।
খ) এটি বর্ণচ্ছটা,নীল আকাশ প্রভৃতি সংঘটিত হওয়ার পিছনে
ভূমিকা নেয় ।
উপাদান ও
রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস (Atmospheric Stratification,according
to the Materials and Chemical Formation)- সমমন্ডল (Homosphere)
ও বিষমমন্ডল (Heterosphere):
☻
ভূপৃষ্ঠ
থেকে ঊর্ধ্বে যে অদৃশ্য গ্যাসের আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে,তাকে বায়ুমণ্ডল (Atmosphere) বলে । বায়ুমণ্ডল বলতে পৃথিবীকে
চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে বুঝায়,যা পৃথিবী তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে । একে আবহমণ্ডলও বলা হয়
। বায়ুমণ্ডলকে চোখে দেখা যায় না,শুধু এর অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে
পারি।পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে এই বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে
আবর্তিত হয় ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ
থেকে উপরের দিকে মোটামুটিভাবে প্রায় ১০০০০ কিমি পর্যন্ত বায়ুমন্ডলের অস্তিত্ব আছে
বলে মনে করা হয় । এই মোটামুটি প্রায় ১০০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবস্থিত পৃথিবীর
বায়ুমণ্ডলকে উপাদান ও রাসায়নিক গঠন অনুসারে মূলত ২ টি স্তরে ভাগ করা যায় ।
যথা-
(১) সমমন্ডল
(Homosphere) এবং (২) বিষমমন্ডল (Heterosphere) ।
নীচে
এদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
(১) সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere):-
বুৎপত্তিগত অর্থঃ গ্রীক শব্দ “Homo” এর অর্থ ‘সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।
সংজ্ঞাঃ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত
অংশে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের রাসায়নিক গঠন,বিশেষত বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায়
একই রকম থাকে । এই জন্য বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে সমমন্ডলবা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) বলা হয় ।
বিস্তারঃ সমমন্ডল ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে মোটামুটি ৮০ কিমি পর্যন্ত অবস্থিত ।
গঠনঃ সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) প্রধানত- (ক) বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ {নাইট্রোজেন (৭৮%),অক্সিজেন (২০.৯%) এবং কার্বন
ডাই-অক্সাইড,আর্গন,নিওন,হিলিয়াম,ক্রিপটন,জেনন,হাইড্রোজেন,মিথেন,নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন প্রভৃতি গ্যাসের মিশ্রণ (১.১ %)}, (খ) জলীয় বাষ্প এবং (গ) জৈব ও অজৈব কণিকা বা অ্যারোসল (Aerosol) যেমন- অতি ক্ষুদ্র খনিজ, লবণ, সমুদ্রতীরের বালুকণা, কয়লার গুঁড়ো বা ধোঁয়া প্রভৃতি দিয়ে গঠিত ।
স্তরসমূহঃ সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) মূলত তিনটি উপস্তরে বিভক্ত । যথা-
ক)
ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere): ভু-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮ কিমি উচ্চতা
পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের প্রথম স্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere) বলে ।
খ)
স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere): ট্রপোস্ফিয়ারের উপরে ১৮ কিমি থেকে ৫০
কিমি পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের দ্বিতীয় স্তরকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)
বলে ।
গ)
মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere): স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরে ৫০ কিমি থেকে
৮০ কিমি পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের তৃতীয় স্তরকে মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere)
বলে ।
(২) বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere):–
বুৎপত্তিগত অর্থঃ গ্রীক শব্দ “Hetoro” এর অর্থ ‘বিষমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।
সংজ্ঞাঃ বায়ুমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার স্তরের ওপরের অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং
বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো একই রকম থাকে না বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবস্থিত বায়ুস্তরকে বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere) বলা হয় ।
বিস্তারঃ বিষমমন্ডলের বিস্তার মেসোস্ফিয়ারের উপরে মোটামুটি ৮০ কিমি থেকে প্রায় ১০০০০
কিমি পর্যন্ত ।
গঠনঃ বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere)
প্রধানত
বিভিন্ন গ্যাসের (নাইট্রোজেন,অক্সিজেন,হিলিয়াম,হাইড্রোজেন প্রভৃতি) আণবিক মিশ্রণে গঠিত
।
স্তরসমূহঃ বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere)
মূলত
চারটি উপস্তরে বিভক্ত । যথা-
ক)
আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (Molecular Nitrogen
Level): মোটামুটি ৯০ কিমি থেকে প্রায় ২০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত হেটোরোস্ফিয়ারের
প্রথম স্তরকে আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (Molecular
Nitrogen Level) বলে ।
খ)
পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (Atomic oxygen level): আণবিক নাইট্রোজেন স্তরের উপরে প্রায়
১১০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত হেটোরোস্ফিয়ারের দ্বিতীয় স্তরকে পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (Atomic oxygen level) বলে ।
গ)
হিলিয়াম স্তর (Helium level): পারমাণবিক অক্সিজেন স্তরের উপরে প্রায়
৩৫০০ কিমি পর্যন্ত হেটোরোস্ফিয়ারের তৃতীয় স্তরকে হিলিয়াম স্তর (Helium
level) বলে ।
এবং ঘ) হাইড্রোজেন স্তর (Hydrogen Level): হিলিয়াম স্তরের উপরে বায়ুমন্ডলের
সর্বোচ্চ উর্দ্ধসীমা ১০০০০ কিমি পর্যন্ত অবস্থিত স্তরটিকে হাইড্রোজেন স্তর (Hydrogen Level) বলে ।
উচ্চতা ও
উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমন্ডলের স্তরবিন্যাস (Atmospheric Stratification
according to the variation in Height and Warmth):
☻
ভূপৃষ্ঠ
থেকে ঊর্ধ্বে যে অদৃশ্য গ্যাসের আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে,তাকে বায়ুমণ্ডল(Atmosphere) বলে । বায়ুমণ্ডল বলতে পৃথিবীকে
চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে বুঝায়,যা পৃথিবী তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে । একে আবহমণ্ডলও বলা হয়
। বায়ুমণ্ডলকে চোখে দেখা যায় না,শুধু এর অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে
পারি।পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে এই বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে
আবর্তিত হয় ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ
থেকে উপরের দিকে মোটামুটিভাবে প্রায় ১০০০০ কিমি পর্যন্ত বায়ুমন্ডলের অস্তিত্ব আছে
বলে মনে করা হয় । এই মোটামুটি প্রায় ১০০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবস্থিত পৃথিবীর
বায়ুমণ্ডলকে উচ্চতা ও উষ্ণতার ভিত্তিতে মূলত ৬ টি স্তরে ভাগ করা যায় ।
যথা-
ক্ষুব্ধমণ্ডল
বা ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere):
☻ বুৎপত্তিগত অর্থঃ গ্রীক শব্দ “Tropos” এর অর্থ ‘পরিবর্তন’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।
সংজ্ঞাঃ ভূপৃষ্ঠ থেকে মেরু অঞ্চলে প্রায় ৮ কিমি ও,নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় ১৮ কিমি উচ্চতা
পর্যন্ত অবস্থিত বায়ুস্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার বলে । বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে আমরা বাস করি
। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বায়ুতে প্রায় ৯০ শতাংশ ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা,
মেঘ
প্রভৃতি থাকায় এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি,
শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, তুষারপাত প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটতে দেখা
যায়,এজন্য ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলীয় এই
স্তরকে ক্ষুব্ধমন্ডল বলে ।
বিস্তারঃ মেরু অঞ্চলে (Poles) প্রায় ৯ কিমি পর্যন্ত এবং নিরক্ষীয় (Equator) অঞ্চলে প্রায় ১৮ কিমি পর্যন্ত ।
বৈশিষ্ট্যঃ এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৫% গ্যাসীয় পদার্থ
এই স্তরে থাকায় এখানে বায়ুরচাপ সবচেয়ে বেশি ।
(খ) ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে জলীয়বাষ্প বা মেঘ থাকে না বললেই চলে ।
(গ) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় ততই তাপ মাত্রা কমতে
থাকে । এই স্তরে প্রতি কিলোমিটারে ৬.৪°
সেন্টিগ্রেড
করে তাপ কমে যায় । একে ’উষ্ণতা হ্রাসের গড়’ (Average Laps rate of temperature) বলে ।
(ঘ) এই অংশে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর চাপ কমতে থাকে । এই স্তরে বায়ুর
ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ।
ট্রপোপজ (Tropopause):
☻ বুৎপত্তিগত অর্থঃ গ্রীক শব্দ “Tropos” এর অর্থ ‘পরিবর্তন’ ও “Pause” এর অর্থ ‘থেমে যাওয়া’।
সংজ্ঞাঃ ট্রপোস্ফিয়ার এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এই দুই বায়ুস্তরের সীমা নির্দেশক
সংযোগকারী উপস্তরকে ট্রপোপজ বলে । ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুস্তর এই অঞ্চলে এসে থেমে যায়,তাই একে ট্রপোপজ বলে ।
বিস্তারঃ মেরু অঞ্চলে ৮-১০ কিমি ও,নিরক্ষীয় অঞ্চলে ১৮-২০ কিমি ।
বৈশিষ্ট্যঃ এই উপস্তরের বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) ট্রপোপজ অঞ্চলে বায়ুর গড় তাপমাত্রা -৬০° সেন্টিগ্রেড ।
(খ) ট্রপোপজে বায়ু চলাচল বা তাপীয় ফল তেমন
দেখা যায় না,তাই এই স্তরকে স্তব্ধ স্তরও বলে ।
(গ) এটি ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী সীমা নির্দেশক উপস্তর ।
শান্তমণ্ডল
বা স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere):
☻ বুৎপত্তিগত অর্থঃ গ্রীক শব্দ “Stratos” এর অর্থ ‘শান্ত’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।
সংজ্ঞাঃ ট্রপোস্ফিয়ার-এর উপরে ১৮ থেকে ৫০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত অবস্থিত
বায়ুস্তরকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere) বলে । এই স্তরে ধূলিকণা, মেঘ প্রভৃতি না থাকায় এখানে ঝড়,
বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে না । তাই একে শান্তমণ্ডলও বলা হয় ।
বিস্তারঃ ট্রপোপজের পর থেকে প্রায় ৫০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত ।
বৈশিষ্ট্যঃ এই স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, ঝড়,
বৃষ্টি
ও বজ্রপাত দেখা যায় না বলে দ্রুতগতিসম্পন্ন জেটবিমানগুলো ঝড়-বৃষ্টি এড়িয়ে চলার
জন্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে চলাচল করে । জেটবিমানগুলি সাধারণত এই স্তরের
মধ্যে দিয়ে চলার সময়ে আকাশে সাদা দাগ রেখে যায় ।
(খ) এই স্তরের মধ্যে উপরের দিকে ১৫-৩০ কিমি (মতান্তরে ২০-৫০ কিমি) উচ্চতায় যে
বায়ুস্তরটি রয়েছে তাকে ওজোন স্তর (বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টে) ।
(গ) এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ কম হয় ।
(ঘ) এই স্তরে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা ক্রমশ
বৃদ্ধি পেয়ে উর্দ্ধসীমায় ০° সেন্টিগ্রেডে পৌছায় ।
স্ট্র্যাটোপজ
(Stratopause):
☻ বুৎপত্তিগত অর্থঃ গ্রীক শব্দ “Stratos” এর অর্থ ‘শান্ত’ ও “Pause” এর অর্থ ‘থেমে যাওয়া’ ।
সংজ্ঞাঃ স্ট্রাটোস্ফিয়ার এবং মেসোস্ফিয়ার এই দুই বায়ুস্তরের সীমা নির্দেশক
সংযোগকারী উপস্তরকে স্ট্রাটোপজ (Stratopause) বলে । স্ট্রাটোস্ফিয়ার বায়ুস্তর এই
অঞ্চলে এসে থেমে যায়,তাই একে স্ট্রাটোপজ বলে ।
বিস্তারঃ স্ট্রাটোপজ প্রায় ৫০ কিমি উচ্চতায় অবস্থিত হয় ।
বৈশিষ্ট্যঃ এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) স্ট্রাটোপজ অঞ্চলে বায়ুর তাপমাত্রা হয় ৬০°
সেন্টিগ্রেড ।
(খ) এখানে বায়ুর মিশ্রণ থেমে যায় ।
(গ) এটি স্ট্রাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী সীমা নির্দেশক উপস্তর ।
মেসোস্ফিয়ার
(Mesosphere):
☻ বুৎপত্তিগত অর্থঃ গ্রীক শব্দ “Mesos” এর অর্থ ‘মধ্যভাগ’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।
সংজ্ঞাঃ স্ট্র্যাটোপজের ওপর থেকে বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতা
কমতে থাকে । এই অংশটিকে মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere) বলে ।
বিস্তারঃ মেসোস্ফিয়ার স্তরটি স্ট্র্যাটোপজ স্তরের ওপর থেকে প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা
পর্যন্ত অবস্থিত ।
বৈশিষ্ট্যঃ এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতায় এই স্তরে বায়ুর তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে
(প্রায় -৯৩° সেন্টিগ্রেড) ।
(খ) মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলি মেসোস্ফিয়ার স্তরের
মধ্যে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।
(গ) এই স্তরে বায়ুর চাপ ক্রমশ কমতে থাকে ।
মেসোপজ (Mesopause):
☻ বুৎপত্তিগত অর্থঃ গ্রীক শব্দ “Mesos” এর অর্থ ‘মধ্যভাগ’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।
সংজ্ঞাঃ মেসোস্ফিয়ার এবং থার্মোস্ফিয়ার এই দুই বায়ুস্তরের সীমা নির্দেশক সংযোগকারী
উপস্তরকে মেসোপজ (Mesopause) বলে । মেসোস্ফিয়ার বায়ুস্তর এই অঞ্চলে
এসে থেমে যায়,তাই একে মেসোপজ বলে ।
বিস্তারঃ মেসোপজ প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতায় অবস্থিত ।
বৈশিষ্ট্যঃ এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) মেসোপজ অঞ্চলে বায়ুর তাপমাত্রা হয় প্রায় -১০০° সেন্টিগ্রেড ।
(খ) এখানে বায়ুর মিশ্রণ থেমে যায় ।
(গ) এটি মেসোস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী সীমা নির্দেশক উপস্তর ।
থার্মোস্ফিয়ার
(Thermosphere):
☻ বুৎপত্তিগত অর্থঃ গ্রীক শব্দ “Thermos” এর অর্থ ‘উষ্ণতা’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।
সংজ্ঞাঃ মেসোপজের পর থেকে প্রায় ৫০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অবস্থিত হালকা বায়ূস্তরকে থার্মোস্ফিয়ার(Thermosphere) বলা হয় ।
বিস্তারঃ থার্মোস্ফিয়ারের বিস্তার প্রায় ৯০-৫০০ কিমি ।
বৈশিষ্ট্যঃ এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই স্তরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে ।
(খ) হালকা বায়ু দিয়ে গঠিত এই স্তরের ভর বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র ০.৫% ।
(গ) এই স্তরের নিম্নভাগে তড়িৎযুক্ত কণা বা আয়নের উপস্থিতি দেখা যায় । তাই
থার্মোস্ফিয়ারের নিম্নভাগকে আয়নোস্ফিয়ার (বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টে) বলা হয় । এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে
।
(ঘ) তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে এক রকম উজ্জ্বল
আলোক বিচ্ছুরণ দেখা যায়,একে মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা (বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টে) বলে ।
(ঙ) এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে ।
এক্সোস্ফিয়ার
(Exosphere):
☻ সংজ্ঞাঃ থার্মোস্ফিয়ারের উর্দ্ধে প্রায় ১৫০০ কিমি পর্যন্ত বায়ূস্তরকে এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere) বলা হয় ।
বিস্তারঃ এক্সোস্ফিয়ারের বিস্তার প্রায় ৫০০-১৫০০ কিমি ।
বৈশিষ্ট্যঃ এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) এই স্তরের বায়ু এত হালকা যে এই এর অস্তিত্ব প্রায় বোঝাই যায় না ।
(খ) এই স্তরে হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায় ।
(গ) কৃত্রিম উপগ্রহ,স্পেস স্টেশন প্রভৃতি এই স্তরে অবস্থান
করে ।
(ঘ) এই স্তরে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়,তবে তা দ্রুত নয় ।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
(Magnetosphere):
☻ সংজ্ঞাঃ এক্সোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ স্তরকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere)
বলে ।
বিস্তারঃ ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের বিস্তার প্রায় ১৫০০-১০০০০ কিমি ।
বৈশিষ্ট্যঃ এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) এই স্তরের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নিত কণার উপস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয় ।
(খ) এখানে ইলেকট্রন ও প্রোটন আয়নগুলি বলয়াকারে অবস্থান করে ।
(গ) এই স্তরের উর্দ্ধসীমা ধীরে ধীরে মহাশূণ্যে বিলীন হয়ে যায় ।
ওজন স্তর
(Ozonosphere Or, Ozone Layer):
☻ আবিস্কারকঃ ১৯১৩ সালে ফরাসী বিজ্ঞানী ফ্যাব্রি ও বুশন সর্বপ্রথম ওজোন স্তরের উপস্থিতি
প্রমাণ করেন ।
সংজ্ঞাঃ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডলের মধ্যে ১৫-৩০ কিমি (মতান্তরে ২০-৫০ কিমি)
উচ্চতার মধ্যে ওজন গ্যাসযুক্ত যে বায়ুস্তরটি রয়েছে তাকে ওজোনমণ্ডল বা ওজোনস্তর (Ozonosphere Or, Ozone Layer) বলা হয় ।
বিস্তারঃ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে ১৫-৩০ কিমি (মতান্তরে ২০-৫০ কিমি) উচ্চতায় ওজোন
স্তর অবস্থিত ।
বৈশিষ্ট্যঃ এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) এই স্তরটি মূলত ওজন গ্যাস (O3)
দ্বারা
গঠিত ।
(খ) এই স্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে ।
(গ) এই স্তরটি বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে ।
গুরুত্বঃ ওজোন স্তরের গুরুত্বগুলি হল নিম্নরূপ-
(ক) এই স্তরে ওজোন গ্যাসের একটি পর্দা আছে,যা সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত অতিবেগুনি রশ্মিকে (Ultra-Violet Ray) শোষণ করে ভূপৃষ্ঠে আসতে দেয় না,যার ফলে জীবজগৎ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায় ।
(খ) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে ।
(গ) জীববৈচিত্র রক্ষা করে ।
(ঘ) ওজোন গ্যাস সূর্যের তাপ ও অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে,ফলে এই স্তরের তাপমাত্রা খুব বেশি হলেও তা বায়ুমন্ডলীয় তাপের ভারসাম্য বজায়
রাখতে সাহায্য করে ।
ওজোন
বিনাশন (Ozone Dipletion),ওজোন ছিদ্র বা ওজোন গহবর (Ozone
Hole)-কারণ,প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায় (Reason,Effects and Way
of Resistance):
☻ ওজোন বিনাশন (Ozone Dipletion) এবং ওজোন ছিদ্র বা ওজোন গহবর (Ozone Hole): ওজোন স্তর একটি প্রাকৃতিক সৌরপর্দা,যা বায়ুমন্ডলে উপস্থিত থেকে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মিকে ভূপৃষ্ঠে
প্রবেশ করতে বাঁধা দেয় । কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্দ্ধমান ক্লোরিন পরমানুর
প্রভাবে এই ওজোন স্তর ধংসপ্রাপ্ত হয়ে ক্রমশ পাতলা হয়ে পড়ছে,যাকে ওজোন বিনাশন (Ozone Dipletion) বলা হচ্ছে ।
আন্টার্কটিকায়
শীতকালে সূর্যের অনুপস্থিতির জন্য নিম্ন স্ট্রাটোস্ফিয়ারে উষ্ণতা কমে গিয়ে বায়ুর
তাপ দ্রুত হ্রাস পায় । বায়ুর এই দ্রুত তাপহ্রাস ও পৃথিবীর দ্রুত ঘূর্ণনের জন্য
আন্টার্কটিকায় ভর্টেক্স (Vortex) সৃষ্টি হয় । এই ভর্টেক্স মধ্যস্থ বায়ুর
গতিবেগ ঘন্টায় ৩০০ কিমির বেশি হয় । ফলে এই ভর্টেক্স মধ্যস্থ হাইড্রোজেন ক্লোরাইড ও
ক্লোরিন নাইট্রেটের সংঘাতে আনবিক ক্লোরিন গ্যাস উৎপন্ন হয়,যা পরবর্তীকালে বসন্তের শুরুতে অতিবেগুনী রশ্মির দ্বারা বিয়োজিত হয়ে
ক্লোরিন পরমানু সৃষ্টি করে । এই ক্লোরিন পরমানু ঐ অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ ওজোন অনুকে
ক্রমশ ভেঙ্গে দিতে থাকে;যার ফলস্বরূপ আন্টার্কটিকার ওজোন স্তর
ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্রমশ পাতলা হয়ে পড়ছে এবং স্থানে স্থানে তা প্রায় পুরোপুরি বিনষ্ট
হয়ে পড়েছে,যেখান দিয়ে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী
রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ছে । একেই ওজোন ছিদ্র বা ওজোন গহবর (Ozone Hole)বলা হচ্ছে ।
☻
ওজোন
স্তর বিনাশনের কারণ (Causes of Ozone
Layer Dipletion):
ওজোন
বিনাশনের কারণগুলি মূলত দুই প্রকার । যথা- ক) প্রাকৃতিক কারণ ও খ) মনুষ্যসৃষ্ট কারণ । নীচে এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
(ক) প্রাকৃতিক কারণঃ ওজোন স্তর বিনাশনের জন্য দায়ী প্রাকৃতিক কারণগুলি হল- ১. বজ্রপাত ২. অগ্নুদ্গম ৩.
আলোক-রাসায়নিক বিক্রিয়া ৪. অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব প্রভৃতি । রাখা দরকার
যে প্রাকৃতিক কারণে ওজোন স্তর যেমন ধংস হয়,তেমন প্রাকৃতিক কারণে এটি গড়েও ওঠে ।
তাই ওজোন স্তর বিনাশনের পিছনে প্রাকৃতিক কারণগুলি তেমন মারাত্মক প্রভাব ফেলেনা ।
(খ) মনুষ্যসৃষ্ট কারণঃ ওজোন স্তর বিনাশনের পিছনে মূলত মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলিই বেশী দায়ী । এগুলি হল
নিম্নরূপ-
a) ক্লোরোফ্লোরোকার্বন(CFC):
ক্লোরোফ্লোরোকার্বন(CFC) বা ফ্রেয়ন একটি বিশেষ যৌগ,যা ওজোন স্তর বিনাশনের জন্য বিশেষভাবে
দায়ী । এটি আবার ৩ ধরনের,যথা-CFC-11(CFCl3),CFC-12(CF2Cl2),CFC-113(CF2Cl.CF2Cl);
১৯৯৫
সালের পর থেকে বিশেষজ্ঞরা এটি থেকে নির্গত ক্লোরিনকে ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী
করেন । একটি ক্লোরিন পরমানু প্রায় এক লক্ষ ওজোন অনুকে ভেঙে দেওয়ার পরও অপরিবর্তিত
থাকে ।
O3 + Cl > O2 + O + Cl
উৎসঃ রেফ্রিজারেটর,এয়ার কন্ডিশনার,ফোম শিল্প,রং শিল্প,প্লাস্টিক শিল্প,সুগন্ধি শিল্প,কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রের সার্কিট পরিষ্কার প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে CFC নির্গত হয় । এছাড়াও,কলকারখানা-যানবাহনের বিষাক্ত কালো
ধোঁয়া, ট্যাঁনারি কারখানার বর্জ্য পদার্থ যা
পরবর্তীতে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ক্লোরিন গ্যাস তৈরিতে
ভূমিকা রাখে ।
b) নাইট্রাস
অক্সাইড(N2O): নাইট্রাস অক্সাইড হল অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস যা ওজোন বিনাশনে ভূমিকা
নেয় ।
উৎসঃ কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার,যানবাহন,নাইলন শিল্প প্রভৃতি ।
c) নাইট্রোজেন
অক্সাইড(NO): ওজোন স্তর বিনাশনের পিছনে দায়ী অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নাইট্রোজেন
অক্সাইড ।
উৎসঃ জেট বিমান
d) ব্রোমিন
পরমানুঃ হ্যালোন যৌগ অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে
ভেঙে গিয়ে ব্রোমিন পরমাণুর সৃষ্টি হয় । এই ব্রোমিন পরমাণু ওজোন বিনাশক হিসাবে
কার্যকরী ভূমিকা নেয় ।
উৎসঃ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র
e) সালফারের
কণাঃ ওজোন ধংসের পিছনে দায়ী উপাদানগুলির
মধ্যে সালফারের কণাও ভুমিকা রাখে ।
উৎসঃ কলকারখানা,যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া প্রভৃতি ।
উপরে
উল্লিখিত কারণগুলি ছাড়াও f) মিথেন,
g) মিথাইল
ব্রোমাইড, h) মিথাইল ক্লোরাইড প্রভৃতিও ওজোন
ধ্বংসকারী অন্যান্য মনুষ্যসৃষ্ট কারণ ।
☻ ওজোন স্তর বিনাশনের প্রভাব (Effects of Ozone Layer Dipletion):
জীবজগতের
ওপর ওজন স্তর ক্ষয়ের প্রভাব সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা নানা তথ্য দিয়েছেন । তাঁরা ধারণা
করছেন ওজন স্তর ক্ষয়ের কারণে অতি বেগুনী রশ্মি পৃথিবী পৃষ্ঠে চলে এলে নিম্নলিখিত
ক্ষতিগুলি হতে পারে-
মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর উপর প্রভাবঃ-
a) রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে ।
b) চোখে
ছানি পড়বে ।
c) ত্বকের
ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগব্যাধির সূচনা হবে । (ধারনা করা হচ্ছে যে,৫%ওজন স্তরের ক্ষয়ের জন্য সারা বিশ্বে ৫ লাখ লোক স্কীন ক্যান্সারে ভুগবে ।
একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে,১% অতি বেগুনী রশ্মি বৃদ্ধির ফলে সাদা
চামড়ার লোকদের মধ্যে নন মেলোনোমা ত্বকের ক্যান্সার বৃদ্ধি পাবে ৪ গুণ ।)
d) প্রাণী
জগতের অনেক প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে ।
e) অতি
বেগুনী রশ্মির প্রভাব কোষের উপর খুবই ক্ষতিকারক । এটা কোষের সৃষ্টি এবং বৃদ্ধিকে
ব্যাহত করতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে কোষগুলোকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে ।
f) প্রজনন
ক্ষমতা হ্রাস পাবে ।
g) নখ ও
চুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।
h) গড় আয়ু
হ্রাস পাবে ।
i) উভচর
প্রাণীর সংখ্যা দ্রুত কমবে ।
উদ্ভিদের উপর প্রভাবঃ-
a) অতি
বেগুনী রশ্মি খাদ্যশস্যের ক্ষতি করবে ।
b) বৃক্ষাদি
এবং অরণ্যসমূহের পরিমান ক্রমশ হ্রাস পাবে ।
c) উদ্ভিদের
পাতাগুলো আকারে ছোট ও হলুদ হয়ে যাবে অর্থাৎ উদ্ভিদ ক্লোরোসিস রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে
।
d) বীজের
উৎকর্ষতা নষ্ট হবে ।
e) ফসলের
আগাছা,রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পাবে
।
f) ক্ষুদ্র
মাইক্রোঅর্গানিজম,সমুদ্র শৈবাল এবং প্লাংকটন অতি বেগুনী
রশ্মির প্রভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে ।
g) অতি
বেগুনী রশ্মির প্রভাব উদ্ভিদ কোষের উপর খুবই ক্ষতিকারক ।এটা উদ্ভিদ কোষের সৃষ্টি
এবং বৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে কোষগুলোকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে ।
h) উদ্ভিদের
অকালমৃত্যুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে ।
i) উদ্ভিদের
উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে ।
j) উদ্ভিদের
স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে ।
পরিবেশের উপর প্রভাবঃ-
a) প্রাকৃতিক
খাদ্যচক্রের ক্ষতিসাধন করবে ।
b) উষ্ণতার
বৈপরীত্য ঘটবে ও পৃথিবীর উষ্ণতার ভারসাম্য বিপন্ন হবে ।
c) জীব
বৈচিত্র বিপন্ন হবে ।
d) বিশ্ব
উষ্ণায়নের হার বৃদ্ধি পাবে ।
e) ধোঁয়াশা
ও অ্যাসিড বৃষ্টির পরিমান বৃদ্ধি পাবে ।
☻ ওজোন স্তর বিনাশন প্রতিরোধের উপায় (Way of Resistance of Ozone Layer Dipletion):
ওজোন
স্তর বিনাশন প্রতিরোধের উপায়গুলি নিম্নরূপ-
ক) CFC-এর ব্যবহার হ্রাসঃ ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (CFC11,CFC12) বা ফ্রেয়ন একটি বিশেষ যৌগ,যা ওজোন স্তর বিনাশনের জন্য বিশেষভাবে দায়ী । এই CFC প্রধানত রেফ্রিজারেটর,এয়ার কন্ডিশনার,ফোম শিল্প,রং শিল্প,প্লাস্টিক শিল্প,সুগন্ধি শিল্প,কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রের সার্কিট পরিষ্কার প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে
নির্গত হয় । CFC নির্গমনের এই সকল উৎসগুলিকে
ক্ষেত্রবিশেষে বন্ধ অথবা সর্বোচ্চমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
খ)
নাইট্রাস অক্সাইড,নাইট্রোজেন অক্সাইড,সালফারের কণা নিয়ন্ত্রণঃ কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার,যানবাহন,নাইলন শিল্প প্রভৃতি
কলকারখানা-যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া,
ট্যাঁনারি
কারখানার বর্জ্য পদার্থ, জেট বিমান,রকেট উৎক্ষেপণ,অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র প্রভৃতি থেকে
নাইট্রাস অক্সাইড,নাইট্রোজেন অক্সাইড,সালফারের কণা নির্গত হয়,যেগুলি ভীষণভাবে এক একটি গুরুত্বপূর্ণ
ওজোন বিনাশক । এদের উৎসগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশে এদের পরিমান কমাতে হবে ।
গ)
মন্ট্রিল চুক্তির বাস্তবায়নঃ ওজোন স্তর সংরক্ষনের উদ্দ্যেশ্যে ১৯৮৭
সালে কানাডার মন্ট্রিলে সাক্ষরিত মট্রিল চুক্তি যাতে বাস্তবে সবাই মেনে চলে তার
জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে ।
ঘ)
এজেন্ডা ২১ এর রূপায়ণঃ ১৯৯২ সালের জুন মাসে ব্রাজিলের রিও ডি
জেনিরোতে অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা সম্মেলনে গৃহীত এজেন্ডা ২১ এর অন্তর্ভূক্ত সকল পালনীয়
বিষয়গুলিকে সবাইকেই মেনে চলতে হবে ।
ঙ)
বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব দ্রব্য ব্যবহারঃ ওজোন বিনাশক উপাদানগুলির বিকল্প ও
পরিবেশবান্ধব দ্রব্যগুলি ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে ।
চ)
নাগরিক দায়িত্বঃ পরিবেশ রক্ষা নাগরিকদের মৌলিক দায়িত্ব
। তাই CFC সহ অন্যান্য ওজোন বিনাশক উপাদানগুলি
যাতে পরিবেশে কম পরিমানে উৎপাদিত হয়,সে বিষয়ে সকলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে ।
আয়নোস্ফিয়ার
(Ionsphere):
☻ সংজ্ঞাঃ মেসোপজের পর থেকে প্রায় ৫০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অবস্থিত হালকা বায়ুস্তরকে
থার্মোস্ফিয়ার বলা হয় । এই স্তরের নিম্নভাগে তড়িৎযুক্ত কণা বা আয়নের উপস্থিতি দেখা
যায় । তাই থার্মোস্ফিয়ারের নিম্নভাগকে আয়নোস্ফিয়ার (Ionsphere) বলা হয় ।
আবিস্কারকঃ বিজ্ঞানীদ্বয় কেনেলি ও হেভিসাইড সর্বপ্রথম আয়নোস্ফিয়ারের উপস্থিতি প্রমাণ
করেন ।
বিস্তারঃ থার্মোস্ফিয়ারের নিম্নভাগে (৮০-১২০ কিমি) অবস্থিত ।
শ্রেণীবিভাগঃ এটি আবার দুটি উপস্তরে বিভক্ত ।
যথা- ক) D-স্তর (বিস্তার ৮০-৯০ কিমি) ও
খ) E-স্তর বা কেনেলি-হেভিসাইড স্তর (বিস্তার ৯০-১২০ কিমি) ।
বৈশিষ্ট্যঃ আয়নোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল
নিম্নরূপ-
ক) আয়ন মন্ডল সৃষ্টি-এই স্তরের বায়ু আয়নিত অবস্থায় রয়েছে অর্থাৎ এই বিরাট
অঞ্চলটি বিদ্যুতযুক্ত অসংখ্য আয়ন ও ইলেকট্রনে পূর্ণ হয়ে আছে । এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে
।
খ) মেরুজ্যোতি সৃষ্টি-তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে এখানে সুমেরু ও
কুমেরু অঞ্চলে এক রকম উজ্জ্বল আলোক বিচ্ছুরণ দেখা যায়,একে মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বলে ।
গ) বেতার সংযোগ-ভূপৃষ্ঠের বেতার তরঙ্গগুলি আয়নোস্ফিয়ার ভেদ করে আরও ওপরে যেতে
পারে না বলে এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে । তাই
বিভিন্ন রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত গান,
বাজনা, নাটক, কবিতা,
সংবাদ
প্রভৃতি আমরা রেডিও মারফত বাড়ি বসে শুনতে পাই ।
ঘ) X-রশ্মির থেকে রক্ষা-বিপজ্জনক X-রশ্মির থেকে আয়নোস্ফিয়ার জীবজগতকে
রক্ষা করে ।