Wednesday, September 19, 2018

Xiiphil প্রাকল্পিক ও বৈকল্পিক ন‍্যায়

সাপেক্ষ

Xiiphil নিরপেক্ষ ন‍্যয়

নিরপেক্ষ ন্যায়(categorical syllogism):- যে আরোহমূলক মাধ্যম অনুমানের দুটি যুক্তিবাক্যের প্রতিটি এবং সিদ্ধান্তটি নিরপেক্ষ বচন হিসাবে গণ্য হয় সেই অবরোহ অনুমানকে নিরপেক্ষ ন্যায় বা ন্যায় অনুমান বলা হয়।

সাপেক্ষ ন্যায়(conditional syllogism):- যে অবরোহ মূলক মাধ্যমে অনুমানের অন্তর্গত দুটি যুক্তি বাক্যের মধ্যে অন্ততপক্ষে একটি যুক্তিবাক্যে সাপেক্ষ বচন রূপে গণ্য হয় সেই ন‍্যায়কে সাপেক্ষ ন‍্যায় বলা হয়।

 সংস্থান(figure):- ন্যায় অনুমানের দুটি যুক্তিবাক্যের মধ্যে হেতু পদের অবস্থান অনুযায়ী ন্যায় অনুমানের যে বিশেষ বিশেষ রুপ বা আকৃতি দেখা যায় তাকেই বলা হয় সংস্থান।

 মূর্তি(moods):- নিরপেক্ষ ন্যায়ের বচনগুলির গুণ ও পরিমাণ অনুসারে ন‍্যায়ের যে বিভিন্ন রূপ দেখা যায়, তাকেই বলা হয় ন্যায় অনুমানের মূর্তি।

সাধ‍্যপদ(major term):- অনুমানে যে পদকে সিদ্ধ বা প্রমাণ করা হয় তাকেই বলা হয় সাধ‍্যপদ। সাংকেতিক নাম P.

পক্ষপদ(minor term):- অনুমানের সাধ্যপদকে যেখানে প্রমাণ বা সিদ্ধ করা হয় তাকে বলা হয় পক্ষপদ। সাংকেতিক নাম S.

হেতুপদ (middle term):- অনুমানে যে পদের সাহায্যে মধ্যপদকে পক্ষে প্রমাণ বা সিদ্ধ করা হয় তাকে বলা হয় হেতুপদ। সাংকেতিক নাম M.

প্রথম সংস্থান:- ন্যায়ের সংস্থানে হেতুপদটি প্রধান যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য স্থানে এবং প্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয়স্থানে অবস্থান করলে সেরুম অবস্থানকে প্রথম সংস্থান বলা হয়।

দ্বিতীয় সংস্থান:- ন্যায়ের সংস্থানে হেতুপদটি প্রধান বা অপ্রধান যুক্তিবাক‍্যের দুটিতেই বিধেয় স্হানে অবস্হিত হলে ঐরূপ সংস্থানকে দ্বিতীয় সংস্হান বলে।

  তৃতীয় সংস্থানের চতুর্থ স্থান বৈধ বা শুদ্ধ মূর্তি অবৈধ বা অশুদ্ধ মূর্তি চতুষ্পদ বা চারিপদ ঘটিত দোষ অব্যক্ত হেতু দোষ অবৈধ সাধ্য দোষ অবৈধ পক্ষ দোষ দুটি নঙর্থক যুক্তিবাক্য জনিত দোষ অনুপপত্তি নিরপেক্ষ ন্যায় এর দশটি নিয়ম অনেকার্থি 10 অনেক আদর সংক্ষিপ্ত ন্যায় উপপাদ্য সম্পাদ্য আকার মুক্ত নয় আকারহীন 

Xiiphil অমাধ‍্য‍্যম অনুমান

অনুমান(reason):- জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হবার মানসিক প্রক্রিয়াটি হল অনুমান।

 যুক্তি(logic):- অনুমানের ভাষাগত রূপ হল যুক্তি।

অবরোহ অনুমান(deductive argument):- দুই বা ততোধিক আশ্রয় বাক্যের উপর নির্ভর করে বেশি ব্যাপকতর থেকে কম ব্যাপকতর সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা কেই বলা হয় অবরোহ অনুমান।

আরোহ অনুমান(conductive argument):- যুক্তিবাক্যে কম ব্যাপকতর অংশ থেকে অধিক ব্যাপক অংশের সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করাই হল আরোহ অনুমান।

 ন্যায় অনুমান(syllogism):- পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি যুক্তিবাক্য বা আশ্রয়বাক্যের উপর নির্ভর করে যথাযথ নিয়মের মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা ওকেই বলা হয় ন্যায় অনুমান।

 আবর্তন(conversion):- কোন বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের ন্যায়সঙ্গত পরিবর্তনকেই আবর্তন বলা হয়।

বিবর্তন(obversion):- কোন বচনের বিধেয়ের ন্যায়সঙ্গত বিরুদ্ধ পদকে প্রতিষ্ঠা করাই হল বিবর্তন।

 সিদ্ধান্ত(conclusion):- যুক্তিবাক্য থেকে অনিবার্যভাবে শেষে যে বাক্যটি নিঃসৃত হয় তাকে সিদ্ধান্ত বলে।

সরল আবর্তন(simple conversion):- আবর্তনের সব নিয়ম গুলো যথাযথভাবে মেনে আবর্তন করা হলে তাকে সরল আবর্তন বলা হয়।

অসরল আবর্তন(conversion by limitation):- আবর্তনের সব নিয়ম গুলো যথাযথভাবে না মেনে আবর্তন করা হলে তাকে অসরল আবর্তন বলা হয়।

বিপরীত সম্বন্ধভিত্তিক আবর্তন(inference by Converse relation):- কোন বচনের আবর্তন যদি উদ্দেশ্য বিধেয়ের বিপরীত সম্মন্ধভিত্তিক হয়, তবে তাকে বলা হয় বিপরীত সম্মন্ধভিত্তিক আবর্তন।

 আকারগত বিবর্তন(formal obversion):- বিবর্তনের নিয়মগুলোকে যথাযথভাবে মেনে বিবর্তন করাকে আকারগত বিবর্তন বলা হয়।

 বস্তুগত বিবর্তন(material obversion):- আবর্তনের নিয়মগুলোকে যথাযথভাবে না মেনে যদি শুধুমাত্র বাস্তব বা বস্তুগত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে বিবর্তন করা হয় তবে সে বিবর্তনকে বস্তুগত বিবর্তন বলে।

প্রধান যুক্তিবাক্য(major Premise):- প্রতিটি ন্যায় অনুমানের দুটি আশ্রয় বাক্যের মধ্যে প্রথমটিকে প্রধান আশ্রয় বাক্য বলা হয়। এই বাক্যের অপর নাম সাধ্য আশ্রয় বাক্য+হেতু বাক্য।

অপ্রধান যুক্তিবাক্য(minor permise):- প্রতিটি ন্যায় অনুমানের দুটি আশ্রয় বাক্যের মধ্যে শেষেরটিকে অপ্রধান আশ্রয় বাক্য বলা হয়। এই বাক্যের অপর নাম পক্ষ আশ্রয় বাক্য+হেতু বাক্য

Xiiphil বচনের বিরোধিতা


🧾সমজাতীয় বচন:-
 যদি একটি বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় আরেকটি বচনের যথাক্রমে উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের সঙ্গে এক হয় তবে বচন দুদিকে সমজাতীয় বচন বলে।

 🧾বচনের বিরোধিতা:- দুটি সমজাতীয় বচনের মধ্যে গুণ ও পরিমাণের উভয়ের বৈপরীত্যই  বচনের বিরোধিতা।

🧾বিরোধানুমান:- বিরোধ+অনুমান, অর্থাৎ বচনের বিরোধিতার উপর নির্ভর করে যে অনুমান গঠন করা হয় তাকেই বিরোধানুমান বলে।

  🧾বিপরীত বিরোধিতা:-  দুটি সামান্য বা সার্বিক বচনের মধ্যে শুধুমাত্র গুণের পার্থক্যকেই বিপরীত বিরোধিতা বলে।

🧾বিপরীত বিরোধানুমান:- বিপরীত বিরোধিতার উপর নির্ভর করে যে অনুমান গঠন করা হয় তাকে বিপরীত বিরোধানুমান বলা হয়।

🧾অধীন-বিপরীত বিরোধিতা:- দুটি বিশেষ বচনের মধ্যে শুধুমাত্র গুণের পার্থক্যকেই অধীন-বিপরীত বিরোধিতা বলে।

🧾অধীন-বিপরীত বিরোধানুমান:- অধীন-বিপরীত বিরোধিতার ওপর নির্ভর করে যে অনুমান গঠন করা হয় তাকে অধীন-বিপরীত বিরোধানুমান বলে।

 🧾অসম বিরোধিতা:- দুটি বচনের মধ্যে শুধুমাত্র পরিমাণের পার্থক্যকেই অসম বিরোধিতা বলে।
 🧾অসম বিরোধানুমান:- অসম বিরোধিতার উপর নির্ভর করে যে অনুমান গঠন হয় তাকে অসম বিরোধানুমান বলা হয়।

🧾বিরুদ্ধ বিরোধিতা:- দুটি বচনের মধ্যে গুণ ও পরিমাণ উভয়ের পার্থক্য পরিলক্ষিত হলে সেই বচন দুটির সম্পর্ককে বিরুদ্ধ বিরোধিতা বলে।

🧾বিরুদ্ধ বিরোধানুমান:- বিরুদ্ধ বিরোধিতার উপর নির্ভর করে যে অনুমান গঠিত হয় তাকে বিরুদ্ধ বিরোধানুমান বলা হয়।

🧾বিরোধ-চতুষ্কোণ:- বচনের বিরোধিতার নির্দেশমূলক বর্গক্ষেত্রকেই বিরোধ-চতুস্কোণ বলে।

🧾অমাধ্যম অনুমান:- যে অনুমানে একটিমাত্র যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে অমাধ্যম অনুমান বলা হয়।

🧾মাধ্যম অনুমান:- যে অনুমানে একাধিক যুক্তিবাক্য থেকে কোন সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে মাধ্যম অনুমান বলা হয়।

🧾সংশয়াত্মক:- যাকে সত্য(T) বা মিথ্যা(F) কোনভাবে নির্ণয় করা যায় না তাকেই বলা হয় সংসয়াত্মক।

🧾 অনুসিদ্ধান্ত:- কোন একটি সিদ্ধান্ত থেকে যদি অন্য কোন একটি সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়, তবে তাকে অনুসিদ্ধান্ত বলে।

Xiiphil বচন


🧾অবধারণ:-
 আমরা একাধিক বিষয়কে মনে মনে সংযুক্ত বা বিযুক্ত করি অর্থাৎ চিন্তা ভাবনা করি সেই সমস্ত চিন্তা ভাবনা বা সংযুক্ত বা বিযুক্তকেই অবতরণ বলা হয়।

 🧾বাক্য:- চিন্তার প্রকাশিত রূপকে বাক্য বলে।

🧾বচন:- বাক্যের পরিশ্রুত ও তর্ক বিজ্ঞানসম্মতরূপকে বচন বলে।

 🧾পরিমাণক:- বচনের যে অংশটি তার পরিমাণকে নির্দেশ করে তাকে পরিমাণ বলা হয়।

🧾উদ্দেশ্য:- বচনে যার সম্পর্কে কোন কিছু বলা হয় তাকেই উদ্দেশ্য বলে।

 🧾সংযোজক:- বাক্যের ক্ষেত্রে আমরা যাকে ক্রিয়াপদ বলি, তাকেই বচনে সংযোজক বলা হয়।

🧾 বিধেয়:- কোন বচনে উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয় তাকেই বিধেয় বলে।

 🧾সদর্থক বচন:- যে বচনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়তে কিছু স্বীকার করে নেওয়া হয় তাকেই সদর্থক বচন বলে।

  🧾নঞর্থক বচন:- যে বচনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়তে কিছু অস্বিকার করে নেয়া হয় তাকেই নঞর্থক বচন বলে।

🧾নিরপেক্ষ বচন(শর্তহীন বচন):- যে বচনে কোন শর্ত ছাড়াই উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়তে কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করে নেয়া হয়, সেই বচনকে নিরপেক্ষ বচন বলা হয়।

🧾সাপেক্ষ বচন(শর্তসাপেক্ষ বচন):- যে বচনে কোন শর্তের মাধ্যমে উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়তে কোন কিছুকে স্বীকার বা অস্বীকার করে নেয়া হয়, সেই বচনকে সাপেক্ষ বচন বলে।

  🧾ঘোষক বাক্য:- যে বচনে উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়তে কোন কিছু সদর্থক বা নঞর্থকভাবে ঘোষণা করা হয় তাকে ঘোষক বাক্য বলে, তবে এটিই নিরপেক্ষ বচনের একটি বিশেষ রূপ।

  🧾প্রশ্নসূচক বাক্য:-যে বাক্যে উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়তে কিছু জিজ্ঞাসার সূচনা করা হয় সেই বাক্যকেই জিজ্ঞাসাসূচক বা প্রশ্নসূচক বাক্য বলে।

 🧾নির্দেশ সূচক বাক্য:- যে বাক্যে উদ্দেশ্য পদের মাধ্যমে বিধেয়তে কিছু নির্দেশ দেওয়া হয় তাকেই বলা হয় নির্দেশ সূচক বাক্য।

🧾গুণের দৃষ্টিকোণ:- গুন অর্থাৎ হয় অথবা নয় এর দিক দিয়ে যখন কোন কিছুকে নির্দেশ করা হয় তখন তাকে বলা হয় গুণের দৃষ্টিকোণ।

🧾পরিমাণের দৃষ্টিকোণ:- দর্শনের পরিভাষায় পরিমাণ অর্থাৎ সার্বিক (সামান্য) বা আংশিক (বিশেষ) এর দিক দিয়ে যখন কোন কিছুকে নির্দেশ করা হয় তখন তাকে পরিমাণের দৃষ্টিকোণ বলা হয়।

🧾সম্বন্ধের দৃষ্টিকোণ:- কোন বচনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের সম্বন্ধের দিক দিয়ে যখন কোনো কিছুকে বিচার করা হয় তখন তাকে সম্বন্ধের দৃষ্টিকোণ বলা হয়।

 🧾বচনের আকার:- ভাষায় ব্যবহৃত বচনকে যখন কোন একটি বিশেষ সাংকেতিক আকারে লেখা হয় বা উপস্থাপন করা হয় তখন তাকে বচনের আকার বলে।

🧾ব্যাপ্যতা:- ব্যাপ্যতার বিষয়টি পদের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত। ব্যাপ্যতার অর্থ হলো পদটি হয় ব্যাপ্য অথবা অব্যাপ্য।

 🧾ব্যাপ্য:- কোন পদের মাধ্যমে যদি সেই পদের পরিপূর্ণ পরিমাণকে সূচিত করে তবে তাকেই বলা হয় পদটি ব্যাপ্য।

 🧾অব্যাপ্য:- কোন পদের মাধ্যমে যদি সেই পদের আংশিক পরিমাণকে সূচিত করে তবে তাকেই বলা হয় যে পদটি অব্যাপ্য।

🧾 ব্যক্তর্থ:- পদের পরিমাণগতদিককে ব‍্যক্তর্থ বলে।

 🧾জাত‍্যর্থ:- পদের গুণগতদিককেই জাত‍্যর্থ বলে।

🧾বচন কয় প্রকার ও কি কি?
বচন চারপ্রকার।যথা-
1)A বচন(সামান্য সদর্থক),
2)E বচন(সামান্য নঞর্থক)
3)I বচন(বিশেষ সদর্থক) ও
4)O বচন(বিশেষ নঞর্থক)।

🧾L.f এর পুরো নাম কি?
Logical form.

Xiiphil যুক্তি


🧾যুক্তিবিদ্যা:-
 তর্ক বা যুক্তি সম্পর্কিত এক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও আলোচনা হল যুক্তিবিদ্যা।
যুক্তিবিদ্যা অন্য নামেও পরিচিত যথা তর্কবিদ্যা, তর্কবিজ্ঞান, যুক্তিবিজ্ঞান এবং logic।

🧾Logic শব্দের উৎপত্তি:- logic কথাটি এসেছে একটি গ্রিক শব্দ logos থেকে, যার অর্থ হলো চিন্তার প্রকাশক রুপ ভাষার বিশেষ আলোচনা।

🧾চিন্তা:- চিন্তার সাধারণ অর্থ হলো সংবেদন স্মৃতি প্রত্যক্ষ অনুভূতি কল্পনা প্রভৃতি। কিন্তু শব্দটি তর্ক বিজ্ঞানসম্মত অর্থ হলো অনুমান বা বিচার করা।
 
🧾অনুমান:- জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়া কি বলা হয় অনুমান।

🧾যুক্তি:- ভাষায় প্রকাশিত অনুমানকে চুক্তি বলা হয়।

 🧾যুক্তিবাক্য:- যে বাক্য বা বচন গুলির উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গঠন করা হয় সেই বাক্য গুলিকে যুক্তিবাক্য বলা হয়।

 🧾যুক্তিবাক্যের অপর নাম:-যুক্তিবাক্যগুলিকে হেতু বাক্য বা আশ্রয় বাক্যও বলা হয়।

🧾সিদ্ধান্ত বাক্য:- কোন যুক্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্তটি বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ পায় তাকে সিদ্ধান্ত বলে।

🧾যুক্তি কয় প্রকার কি কি?
A) যুক্তি দুই প্রকার। যথা-
1) অবরোহ যুক্তি ও 2)আরোহ যুক্তি।
🧾অবরোহ যুক্তি(Deductive Argument):-  অবরোহ শব্দের অর্থ নেমে আসা।
 দুই বা ততোধিক আশ্রয় বাক্যের উপর নির্ভর করে বেশি ব্যাপক থেকে কম ব্যাপকতর সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করাই হল অবরোহ যুক্তি।
 
🧾আরোহ যুক্তি:- আরোহ কথার অর্থ হল উঠে আসা।
যুক্তিবাক্যের কম বা সংকীর্ণ বিষয় থেকে ব্যাপকতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করাই হল আরোহ যুক্তি।

 🧾বৈধতা:- বৈধতার শব্দটি কোন যুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। শব্দটির অর্থ হলো একটি যুক্তি বৈধ কিনা অবৈধ রূপে গণ্য হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন হবে তা বোঝায়।

 🧾বৈধ যুক্তি:- বৈধ শব্দটির সাধারণ অর্থ হল যথাযথ।
কোন যুক্তি যদি যথাযথভাবে নিয়ম মেনে চলে সেই যুক্তিকেই বলা হয় বৈধ যুক্তি।

🧾 অবৈধ যুক্তি:- অবৈধ শব্দটির অর্থ হলো যথাযথভাবে নিয়ম মেনে না চলা।
কোন যুক্তি যদি যুক্তির নিয়মগুলোকে ঠিকমতো মেনে না চলে তাহলে সেই যুক্তিকে অবৈধ যুক্তি বলা হয়।

🧾যুক্তির আকার:- ভাসাই উপস্থাপিত কোন যুক্তিকে যখন একটি নির্দিষ্ট সাংকেতিক আকারে হাজির করা হয় তখন তাকে যুক্তির আকার বলা হয়।

 🧾পদ:- পদ হলো সেই শব্দ বা শব্দসমষ্টি যা কোন বচনের উদ্দেশ্য বিধেয় রূপে গণ্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে।

🧾সম্ভাব্য:- সম্ভাব্য শব্দটির অর্থ হলো যা নিশ্চিতভাবে সত্য নয় আবার নিশ্চিতভাবে মিথ্যাও নয় অর্থাৎ যা হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে।

 🧾বিশেষ বচন:- কোন বচনের ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য পদটি আংশিক পরিমাণ উল্লেখ করে তখন সেই বচন কে বিশেষ বচন বলা হয়। যেমন- I,O বচন।

🧾সামান্য বচন:- কোন বচনের ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্যপদটির মাধ্যমে যখন তার সার্বিক বা সমগ্র পরিমাণকে উল্লেখ করা হয়, তখন তাকে সামান্য বচন বলা হয়।

🧾বিশ্লেষণ বচন:- যে বচনের উদ্দেশ্যের ধারণাটিকে বিশ্লেষণ করলে বিধেয়ের ধারণাটি পাওয়া যায় তাকেই বলা হয় বিশ্লেষক বচন।

 🧾সংশ্লেষক বচন:- যে বচনের উদ্দেশ্যের ধারণাটিকে বিশ্লেষণ করলে বিধেয়ের ধারণাটি না পেয়ে যদি নতুন কিছু পাওয়া যায় তবে তাকেই সংশ্লেষক বচন বলে।

🧾 সত্যতা:- শব্দটি বচন ও বাক্যের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত। সততার অর্থ হলো-কোন বচন সত্য অথবা মিথ্যা রূপে গণ্য হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন।

 🧾সত্য:- শব্দটি বাক্য বা বচনের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত। কোন বাক্যের বক্তব্য বিষয় যদি বাস্তবের সাথে মিল থাকে তাকে সত্য বচন বলা হয়।

 🧾মিথ্যা:- শব্দটি বাক্য ও বচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোন বাক্যের বক্তব্য বিষয় যদি বাস্তবের সাথে মিল না থাকে তাকে মিথ্যা বচন বলা হয়।

 🧾আকারগত সত্যতা:- কোন যুক্তি বা যুক্তি আকারের মধ্যে যদি অসংগতি বা স্ববিরোধিতা না থাকে তবে সেই যুক্তিকে আকারগত সত্য যুক্তি বলা যাবে।

 🧾বস্তুগত সত্যতা:- কোন যুক্তির বক্তব্য বিষয়ের সাথে যদি বাস্তবের মিল থাকে তবে বলা যায় যে যুক্তির বস্তুগত ভাবে সত্য।

Tuesday, September 18, 2018

Xi সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার

সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার বলতে বোঝায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ-স্ত্রী-পুরুষ-শিক্ষিত-অশিক্ষিত-ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে দেশের সব প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি।
ভারতে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার এর একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত রয়েছে। ভারত ব্রিটিশ সরকারের কাছে হাজার 1920 সালে কংগ্রেস ভারতীয় জনগণের জন্য প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার দাবি করে। 1935 সালে ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করে সম্পত্তি, শিক্ষা, কর দান প্রভৃতি যোগ্যতার ভিত্তিতে মুষ্টিমেয় ভারতবাসীকে ভোটাধিকার প্রদান করে। 1945 সালে সপ্রু কমিটির রিপোর্টে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের স্বপক্ষে জোরালো দাবি রাখা হয়। পরবর্তীকালে ভারতের সংবিধান প্রণয়ন পরিষদ গঠন হলে সব সদস্যরাই ভারতবাসীর জন্য সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার এর পক্ষে সওয়াল হয়। ফলে ভারতীয় সংবিধানের 32 নম্বর ধারায় ভারতবাসীর জন্য সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়। সেই সময় ভোটাধিকারের জন্য নির্ধারিত বয়স সীমা ছিল একুশ বছর। 1988 সালে 61 তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে বয়স কমিয়ে 18 বছর করা হয়।

সংসদীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোয় নির্বাচন পরিচালনার প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতীয় সংবিধানের রচয়িতাগন নির্বাচনী ব্যবস্থা গুরুত্ব উপলব্ধি করে একটি সতন্ত্র ও স্বাধীন সংস্থার উপ নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব অর্পণ করে। এই সংস্থার নাম নির্বাচন কমিশন বা ইলেকশন কমিশন। সংবিধানের 328(1)  নং ধারায় নির্বাচন কমিশনের হাতে নির্বাচন পরিদর্শন, পরিচালন এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

Xi রাজনৈতিক দল এবং চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী

দলব‍্যবস্থা আধুনিক রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপে বিভিন্ন ধরনের গোষ্ঠী, ক্লাব, গিল্ডের আবির্ভাব ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে এগুলি রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক উৎস।মরিস দ‍্যুভারজার তাঁর The Origin of Parties রচনায় এই অভিমত প্রকাশ করেন যে,1850 সালের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও রাজনৈতিক দলর ধারণা গড়ে ওঠেনি।

ভারতের সংবিধানে রাজনৈতিক দলব‍্যবস্থার কোনো উল্লেখ করা হয়নি। 1985 সালে 52 তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ভারতের দলব‍্যবস্থা সর্বপ্রথম সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করে।

ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র হল দলব‍্যবস্থা। এই দলব‍্যবস্থায় জাতীয় দল, আঞ্চলিক দল এবং স্বীকৃতিবিহীন নথিভুক্ত দলের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। লোকসভা নির্বাচনে কমপক্ষে 4টি রাজ‍্যে মোট ভোটের 6% পেলে তাকে জাতীয় দল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অন‍্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনে কোনো রাজ‍্যে মোট ভোটের 6% পেলে সংশ্লিষ্ট দলকে আঞ্চলিক দল হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে। ভারতের উল্লেখযোগ্য জাতীয় দল হল, কংগ্রেস, বি. জে. পি., সি. পি. আই. এম., সি. পি. আই., বহুজন সমাজবাদী পার্টি প্রভৃতি। অন‍্যদিকে, উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে রয়েছে ডি. এম. কে., এ. আই. এ. ডি. এম. কে
, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, বিজু জনতা দল, তেলুগু দেশম, তৃণমূল কংগ্রেস, শিরোমণি আকালি দল, ন‍্যাশনাল কনফারেন্স, এন. সি. পি. প্রভৃতি।

ভারতীয় দলব‍্যবস্থা ব্রিটেন বা আমেরিকার মতো সুস্পষ্টভাবে দ্বিদলীয় ব‍্যবস্থায় বিভক্ত হয়নি। আবার ফ্রান্সের মতো বহুদলীয় ব‍্যবস্থা এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে 1989 সালের পরে 'কতৃত্বযুক্ত দলীয় ব‍্যবস্থার অবসান ঘটায় এবং ভারতের আঞ্চলিক দলগুলি প্রথম সারিতে উঠে আসায়, ভারতীয় দলব‍্যবস্থা য় এক নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে।

Xi মৌলিক অধিকার ও কর্তব্য

প্রতিটি ব‍্যক্তির মধ্যে যে অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে তা কতগুলি সুনির্দিষ্ট সুযোগসুবিধা ছাড়া বিকশিত হতে পারে না। এই সুযোগসুবিধাগুলি অধিকার নামে পরিচিত। অধ্যাপক হ‍্যারল্ড ল‍্যস্কিকে অনুসরণ করে বলা যায় যে, অধিকার হল সমাজজীবনের সেইসব সুযোগসুবিধা যেগুলি ছাড়া কোনো ব‍্যক্তি তার ব‍্যক্তিত্বের সর্বোত্তম বিকাশ ঘটাতে পারে না।

নাগরিকরা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার বিনিময়ে রাষ্ট্রপ্রদত্ত এই সুযোগসুবিধা বা অধিকার ভোগ করে থাকে। পেরিক্লিসের গণতন্ত্রে, সফিস্টদের ব‍্যক্তিস্বাতন্ত্র‍্যের ধারণায়, রোমে প্রথম যুগের প্রজাতান্ত্রিক আইনের শাসনে, মধ‍্যযুগের দাস বিদ্রোহে, ষোড়শ শতকে ইউরোপের নবজাগরণে ও সংস্কার আন্দোলনে, সপ্তদশ শতকের গৌরবময় বিপ্লবে, অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্পবিপ্লবে, আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং ফরাসি বিপ্লবে অধিকারের ধারণা মানবসভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নানাভাবে বিকশিত হয়েছে।

অধিকারকে মূলত দু-ভাগে ভাগ করা যায়--
(1) নৈতিক, 
(2) আইনগত অধিকার । 

নৈতিক অধিকার সামাজিক ন‍্যায়নীতিবোধকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এগুলি ভঙ্গ করলে রাষ্ট্র কোনো শাস্তি দিতে পারে না। অন‍্যদিকে, আইনগত অধিকার আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়। এগুলি লঙ্ঘিত হলে রাষ্ট্র শাস্তি দিতে পারে। আইনগত অধিকার প্রধানত চারভাগে বিভক্ত-- 
(1)পৌর বা ব‍্যক্তিগত অধিকার, 
(2) রাজনৈতিক অধিকার, 
(3) অর্থনৈতিক অধিকার এবং 
(4) সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার।
1945 সালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে মানবাধিকার- সংক্রান্ত ধারণার উদ্ভব ঘটে। জাতিপুঞ্জের উদ‍্যোগে 1948 সালে গৃহিত হয় 'মানবাধিকার-সংক্রান্ত বিশ্বজনীন ঘোষনা'। অবশ‍্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, মানবাধিকারের ধারণা বহু পূর্বে 'প্রাকৃতিক অধিকার তত্বে'র মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। মানবাধিকার এমন এক অধিকার যা জন্মসূত্রে সব মানুষের সমানাধিকার ও সমমর্যাদার নীতিকে ঘোষণা করে। প্রতিটি মানুষের আত্মমর্যাদাসহ জীবনধারণ, স্বাধীনভাবে বাঁচা এবং সমতা ও সমমর্যাদার অধিকার হল মানবাধিকার।

আধুনিক যুগে অধিকারের পাশাপাশি কর্তব্যের বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কর্তব‍্যহীন অধিকার বলে কিছু থাকতে পারে না। অনুরূপভাবে অধিকারহীন কর্তব‍্যও কাম‍্য নয়। রাষ্ট্র-ব‍্যবস্থায় উভয়ই একান্তভাবে অপরিহার্য। রাষ্ট্র যেমন নাগরিকদের জন্য অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে তাকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত রেখে তার দায়িত্ব পালন করে, নাগরিকদেরও তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব‍্য রয়েছে। অধ‍্যাপক হ‍্যারল্ড ল‍্যাস্কি বলেছেন, যে কর্তব‍্য পালন করবে না সে অধিকার ভোগ করতে পারবে না। প্রসঙ্গত বলা যায়, আমাদের দেশের সংবিধান যখন চালু করা হয়, তখন নাগরিকদের কর্তব‍্যের বিষয়টি সংবিধানে উল্লিখিত ছিল না। পরে 42তম সংশোধনীর (1976) সাহায্যে নাগরিকদের মৌলিক কর্তব‍্যসমূহ সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক কর্তব‍্যের সংখ্যা হল 11টি।

Xi সরকারের বিভিন্ন রুপ

রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য মৌলিক উপাদান হল সরকার। বাস্তুত state বা রাষ্ট্রকে আমরা চোখে দেখতে পাই না; এটি নিতান্তই একটি তত্বগত বা বিমূর্ত ধারণা। সরকার-ই হল রাষ্ট্রের বাস্তব রূপ। অধ‍্যাপক গেটেলের মতে, সরকার হল রাষ্ট্রের একটি যন্ত্র বা সংগঠন।
গ্রিক দার্শনিক অ্যরিস্টটল তাঁর The Politics গ্রন্থে সরকারের শ্রেণীবিন্যাস-এর বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি শাসনব্যবস্থাকে তিনটি  শ্রেণীতে ভাগ করেছেন- (1) রাজতন্ত্র (বিকৃত রূপ-স্বৈরতন্ত্র); 
                                   (2) অভিজাততন্ত্র(বিকৃতরূপ - ধনতন্ত্র)
                                   (3) নিয়মতন্ত্র(বিকৃতরূপ - গণতন্ত্র)


প্রাচীন গ্রিসের প্রেক্ষিতে অ্যারিস্টটলের এই শ্রেণিবিভাগ আধুনিক যুগে প্রযোজ্য নয়। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ‍্যে লিকক ও ম‍্যারিয়ট সরকারের এক ভিন্নতর রূপ উপস্থাপিত করতে চেয়েছেন। পরবর্তীকালে আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে অ্যালমণ্ড ও পাওয়েল সরকারের বদলে রাজনৈতিক ব‍্যবস্থার শ্রেণিবিভাজন উপস্থাপিত করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞাননী ম‍্যারিয়ট বর্তমান যুগে সরকারের শ্রেণিবিভাজনকে তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর মতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ হল---
(1) এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্টীয় (ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে),
(2) সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় (সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতির দিক থেকে) এবং
(3) মন্ত্রীপরিষদ-শাসিত ও রাষ্ট্রপতি -শাসিত (আইন বিভাগের সঙ্গে শাসন
বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে)।

আচরণবাদী বিজ্ঞানীরা মনে করেন, রাষ্ট্রচরিত্রের আভাস সরকারের শ্রেণিবিভাজনের মধ্যে পাওয়া যায় না। এই কারনে তাঁরা সরকারের বদলে রাজনৈতিক ব‍্যবস্থার শ্রেণিবিভাজন করেছেন তা হল-
(1) উদারনৈতিক গণতন্ত্র,
(2) সর্বাত্মকতন্ত্র এবং
(3) স্বৈরতন্ত্র।

Xi pol sc. ভারতের সংবিধান প্রণয়ন

সাধারণভাবে সংবিধান বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মকানুনকে বোঝায়। যে-কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে গেলে যেমন কতগুলি সাধারণ নিয়মকানুনের প্রয়োজন হয়, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তা দেখা যায়। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একান্ত আবশ্যক এই নিয়মকানুনগুলি হল সংবিধান।
বিশ্বের মধ্যে প্রাচীনতম লিখিত সংবিধান হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান।1787 সালে ক্ষুদ্র আকৃতির (15/16পাতা) লিখিত সংবিধানটি রচিত হয়। অন‍্যদিকে, ব্রিটিশ সংবিধান হল সারা বিশ্বের মধ্যে প্রাচীনতম অলিখিত সংবিধান, যদিও ব্রিটিশ সংবিধানের কিছু লিখিত অংশও রয়েছে। আমাদের দেশে ভারতবর্ষের সংবিধান হল সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সর্ববৃহৎ লিখিত সংবিধান।
ভারতের সংবিধান প্রণয়ন এঅটি তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা। গান্ধিজি বহু আগে 1922 সালে দাবি জানিয়েছিলেন, স্বরাজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দান।নয়, এ হবে ভারতের পূর্ণ আত্মপ্রকাশের ঘোষণা । ভারতীয়দের রাজনৈতিক ভাগ‍্য ভারতীয়রা নিজেরাই নির্ধারণ করবে-এই দাবি রূপায়িত হয় 1946 সালে জুলাই মাসে। সেইসময় অবিভক্ত ভারতের প্রাদেশিক আইনসভার সদশ‍্যদের ভোটে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। ভারতীয় গণপরিষদ একটি সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন পরিষদের মর্যাদা লাভ করে। স্বাধীন ভারতের খসড়া সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি খসড়া কমিটি গঠন করা হয়। ড. বি. আর. আম্বেদকর এই কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। 1947 সালের 4 নভেম্বর খসড়া সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয় এবং 1948 সালের 21ফ্রেব্রুয়ারি তা গণপরিষদের কাছে পেশ করা হয়। পরিশেষে, 1949 সালের 26 নভেম্বর গণপরিষদে ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়। এই সংবিধান রচনার কাজ শেষ করতে মোট 2 বছর 11মাস 18 দিন সময় লাগে। 1950 সালের 26 জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়। 
ভারতীয় সংবিধান যখন কার্যকর হয় তখন তাতে 395 টি ধারা এবং 8 টি তফসিলি ছিল। বিভিন্ন সময়ে সংবিধান সংশোধনের ফলে বর্তমানে ভারতীয় সংবিধানের সর্বমোট 450 টি ধারা এবং 12 টি তফসিল রয়েছে।

Xipol sc নাগরিকত্ব

প্রাচীন গ্রিস ও রোমের নগররাষ্ট্রগুলিতে যাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনার কাজকর্মে অংশগ্রহণ করতেন, তাদেরই একসময় নাগরিক বলে আখ‍্যা দেওয়া হত। সেই যূগে শুধুমাত্র অভিজাত পুরুষরা নাগরিক অভিধায় ভূষিত হতেন।ক্রীতদাস, মহিলা ও শ্রমিকরা রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে অংশ নিতে না পারায় তারা নাগরিক হতে পারত না। যুগের পরিবর্তনের ফলে নাগরিকত্ব-সম্পর্কিত আধুনিক ধারণার বিকাশ ঘটেছে। বর্তমানে কোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ও রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে আনুগত‍্য প্রদর্শনকারী সমস্ত ব‍্যক্তিকে নাগরিকরূপে অভিহিত করা হয়।
নাগরিকরা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত‍্য প্রকাশ করার বিনিময়ে রাষ্ট্র প্রদত্ত কিছু সুযোগসুবিধা ভোগ করে থাকেন । ব‍্যক্তির ব‍্যক্তিত্ব বিকাশের জন‍্য এসব সুযোগসুবিধা একান্তভাবে অপরিহার্য। এগুলিকে অধিকার বলে।
আধুনিক রাষ্ট্রে নাগরিক ছাড়াও আরও অন‍্যধরনের মানুষও থাকে, এদের বলা হয় বিদেশি। বিদেশি আর নাগরিকদের মধ্যে রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ভোগের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। একজন বিদেশির ব‍্যক্তিগত অধিকার, সামাজিক অধিকার এমনকি অর্থনৈতিক অধিকার ভোগের ছাড়পত্র থাকতে পারে, কিন্তু তার কোনভাবেই রাজনৈতিক অধিকার ভোগের এক্তিয়ার থাকে না।
নাগরিকদের রাষ্ট্র কতৃক স্বীকৃতির বিষয়টিকে সাধারণভাবে 'নাগরিকত্ব' বলা হয় । এই নাগরিকত্ব অর্জন ও বিলোপের পদ্ধতি সব দেশের ক্ষেত্রে সমান নয়। তবে জন্মসূত্রে ও অনুমোদনসূত্রে নাগরিকত্ব অর্জনের বিষয়টি মোটামুটিভাবে সব দেশেই দেখা যায়।কোনো কোনো দেশে অনুমোদনসূত্রে নাগরিকত্ব-প্রাপ্ত ব‍্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে পারেন না। দৃষ্টান্ত হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলা যেতে পারে। নাগরিকত্ব বিলোপের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন দেশের নিয়ম বিভিন্ন রকমের। যেমন, আমাদের দেশে দ্বৈত নাগরিকত্বের নিয়ম চালু নেই। এই কারণে কোন ভারতীয় নাগরিক একই সময়ে ভারতে ও অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারে না। তাছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এখানে রাজ‍্যগুলির জন‍্য আলাদা নাগরিকত্বের ব‍্যবস্থা রাখা হয়নি।

Xipol sc. আধুনিক রাজনীতির মৌলিক ধারণাসমূহ

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় আইন, স্বাধীনতা, সাম‍্য ও ন‍্যায়বিচারের ধারণা অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূদুর অতীতে গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলিতে সফিস্ট চিন্তানায়করা, রোমের স্টোয়িক দার্শনিক রা, প্লেটো ও অ্যরিস্টটল প্রমুখ এই সম্পর্কে তাদের মূল‍্যবান মতামত প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে উদারনীতিবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা, মার্কশীয় তাত্ত্বীকেরা এবং সাম্প্রতিককালে নয়া উদারনীতিবাদীরা আলোচ‍্য বিষয়গুলিতে উন্নততর ব‍্যখ‍্যা দিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞানের একটি গতিশীল বিষয়রুপে রাষ্ট্রবিজ্ঞান একজায়গায় থেমে থাকতে পারে না, তাই আলোচ‍্য বিষয়গুলিকে নিয়ে চিরাচরিত ধারণা যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত বলা যায়, আইন, স্বাধীনতা, সাম‍্য ও ন‍্যায়বিচার পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত । রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সার্বভৌমের আদেশকে আইন হিসাবে অভিহিত করেছেন, কিন্তু সেই সঙ্গে তারা একথাও বলেছেন যে, আইন শুধুমাত্র রাষ্ট্র কতৃক স্বীকৃত, ঘোষিত ও প্রযুক্ত হলেই চলবে না, তাকে ন‍্যায়সম্মত ও যুক্তিসংগত হতে হবে।রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সার্বভৌমের আদেশকে আইন হিসাবে আভিহিত করেছেন, কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁর াা একথাও বলেছেন যে, আইন শুধুমাত্র রাষ্ট্র কতৃক স্বীকৃত, ঘোষিত ও প্রযুক্ত হলেই চলবে না, তাকে ন‍্যায়সম্মত ও যুক্তিসংগত হতে হবে। অন‍্যদিকে, সাম‍্য ছাড়া যেমন স্বাধীনতা অর্থহীন, তেমনি স্বাধীনতা ছাড়াও সাম‍্যও নিরর্থক হয়ে পড়ে। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাম‍্যের বহু আগে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। প্রাচীন গ্রিসে এবং রোমে যখন দাসব‍্যবস্থার প্রচলন ছিল তখন সব মানুষকে সমান ভাবা হত না সেসময়ে সাম‍্যের চেয়ে স্বাধীনতার স্থান ছিল অনেক ওপরে । বস্তুতপক্ষে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে(1776) এবং ফ্রান্সের মানব অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণায়(1789) সর্বপ্রথম সাম‍্য ও স্বাধীনতার সমন্বয়চিন্তা বাস্তবরূপ লাভ করে।
গণতন্ত্র একটি প্রাচীন ধারণা। গ্রীসের এথেন্সে 'গণতন্ত্র' কথাটি প্রচলিত ছিল।ভারতের প্রাচীনধর্মগ্রন্থগুলিতেও গণতান্ত্রিক আদর্শের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে ইউরোপের নবজাগরণের ফলে মধ‍্যযুগের শেষভাগে গণতান্ত্রিক আদর্শ ব‍্যপ্তি লাভ করে।একটি আদর্শ ধারণারূপে গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ লক্ষ্য করা যায় অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে। ফরাসি বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম গণতান্ত্রিক আদর্শ রূপায়ণে উল্লেখযোগ্য সোপানরুপে চিহ্ণিত হয়ে আছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের উদারনৈতিক দর্শন গণতন্ত্রকে এক নতুন চেহারা দেয় যা উদারনৈতিক গণতন্ত্র নামে পরিচিত। রুশোর সাধারণ ইচ্ছার তত্ব, বেন্থায়ের হিতবাদ, মিলের ব‍্যক্তিস্ব‍্যাতন্ত্রবাদ, গ্রিনের প্রতিরোধের তত্ব, আ্যডাম স্মিথের বাণিজ‍্যনীতি ও ব‍্যক্তিগত উদ‍্যোগের ধারণা উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করে।
সাম্প্রতিককালে গণতন্ত্রের শ্রেণিবিন্যাস করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডেভিড হেল্ড। তিনি তাঁর models of democracy গ্রন্থের ভূমিকায় এই মত প্রকাশ করেছেন যে-গণতন্ত্রের ইতিহাস বড়ো অদ্ভূত ও বিভ্রমকারী। প্রতিটি রাজনৈতিক ব‍্যাবস্থা নিজেকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করলেও তারা যা বলে আর যা করে তার মধ্যে বিপুল পার্থক্য রয়েছে। ফ‍্যসিবাদ ও ন‍্যাসিবাদ কিভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেয়েছে, অত সুগভীর সামাজিক সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে গণতন্ত্র গড়ে উঠেছে, হেল্ড তা দেখিয়েছেন।
তত্বগত দিক থেকে গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত শাসনব্যবস্থা হল একনায়কতন্ত্র। একনায়কতন্ত্রের ভিত্তি রচনায় যেসব দার্শনিক ইন্ধন যুগিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জার্মান দার্শনিক হেগেল, নিট্সে এবং ট্রটস্কি। একনায়কতন্ত্রের মূল ভিত্তি হল রাষ্ট্রীয় শক্তি বা পশুবল। একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্র প্রধান , জনগন অপ্রধান। একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রের উপকাষ্ঠে জনগনের স্বাধীনতা, স্বাতন্ত্র্য ও অধিকারকে বলি দেওয়া হয়। এখানে প্রথমে রাষ্ট্র , পরে জনগণ। একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্র হল সর্বাত্মক, সামগ্রিক ও সর্বশক্তিমান। প্রাচীন রোমে নিরো ও জুলিয়াস সিজারের রাজত্বে, ফ্রান্সে নেপোলিয়নের আমলে, ইতালিতে কাউন্ট ক‍্যভুর এবং বিংশ শতাব্দীতে জার্মানীতে হিটলার, ইতালিতে মুসোলিনি ও ফ্রান্সে ফ্রাঙ্কোর সাশনকালে একনায়কতন্ত্রে র উদ্ভব ঘটে।