সাধারণভাবে সংবিধান বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মকানুনকে বোঝায়। যে-কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে গেলে যেমন কতগুলি সাধারণ নিয়মকানুনের প্রয়োজন হয়, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তা দেখা যায়। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একান্ত আবশ্যক এই নিয়মকানুনগুলি হল সংবিধান।
বিশ্বের মধ্যে প্রাচীনতম লিখিত সংবিধান হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান।1787 সালে ক্ষুদ্র আকৃতির (15/16পাতা) লিখিত সংবিধানটি রচিত হয়। অন্যদিকে, ব্রিটিশ সংবিধান হল সারা বিশ্বের মধ্যে প্রাচীনতম অলিখিত সংবিধান, যদিও ব্রিটিশ সংবিধানের কিছু লিখিত অংশও রয়েছে। আমাদের দেশে ভারতবর্ষের সংবিধান হল সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সর্ববৃহৎ লিখিত সংবিধান।
ভারতের সংবিধান প্রণয়ন এঅটি তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা। গান্ধিজি বহু আগে 1922 সালে দাবি জানিয়েছিলেন, স্বরাজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দান।নয়, এ হবে ভারতের পূর্ণ আত্মপ্রকাশের ঘোষণা । ভারতীয়দের রাজনৈতিক ভাগ্য ভারতীয়রা নিজেরাই নির্ধারণ করবে-এই দাবি রূপায়িত হয় 1946 সালে জুলাই মাসে। সেইসময় অবিভক্ত ভারতের প্রাদেশিক আইনসভার সদশ্যদের ভোটে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। ভারতীয় গণপরিষদ একটি সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন পরিষদের মর্যাদা লাভ করে। স্বাধীন ভারতের খসড়া সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি খসড়া কমিটি গঠন করা হয়। ড. বি. আর. আম্বেদকর এই কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। 1947 সালের 4 নভেম্বর খসড়া সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয় এবং 1948 সালের 21ফ্রেব্রুয়ারি তা গণপরিষদের কাছে পেশ করা হয়। পরিশেষে, 1949 সালের 26 নভেম্বর গণপরিষদে ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়। এই সংবিধান রচনার কাজ শেষ করতে মোট 2 বছর 11মাস 18 দিন সময় লাগে। 1950 সালের 26 জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়।
ভারতীয় সংবিধান যখন কার্যকর হয় তখন তাতে 395 টি ধারা এবং 8 টি তফসিলি ছিল। বিভিন্ন সময়ে সংবিধান সংশোধনের ফলে বর্তমানে ভারতীয় সংবিধানের সর্বমোট 450 টি ধারা এবং 12 টি তফসিল রয়েছে।
No comments:
Post a Comment