রাজনৈতিক তত্ত্বের আলোচনায় জাতীয় জনসমাজ, জাতি এবং রাষ্ট্র-সম্পর্কিত ধারণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বুৎপত্তিগতভাবে জাতীয় জনসমাজ এবং জাতি র মধ্যে বিশেষ পার্থক্য না থাকলেও, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে এই দুটি শব্দের অর্থ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে জাতি ও রাষ্ট্রকে অভিন্ন বলে মনে করেন। কিন্তু জাতীয় জনসমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে প্রকৃতিগত স্বাতন্ত্র্য রয়েছে।
অধ্যাপক টমাস হিল গ্রিনের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাষ্ট্র বা জাতির মধ্যে কোনো ভেদরেখা টানতে চাননি। তাঁরা রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত কোন জাতি বা জনসমষ্টি বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু জাতি ও রাষ্ট্রের ধারণা এক নয়। পণ্ডিতদের মতে, রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক ধারণা। অন্যদিকে, জাতি হল এক ভাবগত উপলধ্বি বিশেষ। রাষ্ট্র গঠিত হলেও জাতিগঠনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নাও হতে পারে। সাম্প্রদায়িকতাবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদের মতো উপাদানগুলি জাতি গঠনের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।অবশ্য জাতি ও রাষ্ট্র একে অপরের পরিপূরক বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রায় দিয়েছেন। এই কারণে রাষ্ট্রকে জাতীয় রাষ্ট্র বলা হয়।
জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার-সম্পর্কিত তত্ত্ব বহুকাল আগে 'এক জাতি, এক রাষ্ট্র' নীতিকে তুলে ধরে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। ইউরোপে নবজাগরণ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলশ্রুতিস্বরূপ জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার বিকৃত রূপ ফুটে ওঠে। বিশ্বের চিন্তানায়করা তাই জাতীয়তাবাদের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেন আন্তর্জাতিকতাবাদকে।
No comments:
Post a Comment