8.
জাতি
লাতিন 'Natio' শব্দ থেকে আসা ইংরেজি 'Nation' শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ কী হওয়া উচিত তা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও, শব্দটি বাংলায় জাতি প্রতিশব্দের রূপ পেয়েছে। কিন্তু বাংলায় জাতপাত, বর্ণভেদ, ধর্ম, কুল ইত্যাদি বােঝাতে জাতি শব্দের প্রচলন রয়েছে। এই কারণে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং ইংরেজী নেশন শব্দটি সরাসরি বাংলায় ব্যবহারের পক্ষপাতী ছিলেন। তবে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের পরিভাষারূপে জাতি শব্দটির অর্থ ব্যাপক।
1)সাধারণ মত:- বস্তুতপক্ষে 'জাতি' হল সাধারণভাবে 'জনসমাজ'-এর একটি চূড়ান্ত বিকশিত রূপ। জনসমাজের মধ্যে এক গভীর স্বাতন্ত্র্যবােধ দেখা দিলে জাতীয় জনসমাজের উদ্ভব ঘটে।
2)ব্রাইসের মত:- লর্ড ব্রাইসের মতে, জাতি বলতে বােঝায় রাষ্ট্রনৈতিকভাবে সংগঠিত এমন এক জনসমাজকে, যা বহিঃশাসন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত অথবা মুক্ত হওয়ার জন্য সচেষ্ট।
3)হায়সের মত:- রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হায়েসের মতে, কোন জাতীয় জনসমাজ স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্খাকে বাস্তবয়ীত করতে সচেষ্ট হলেই জাতীর আত্মপ্রকাশ ঘটে ফলে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় জনসমাজ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমিকতা অর্জন করলে জাতি হিসেবে পরিগণিত হয়।
জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য
অনেক সময় জাতি ও রাষ্ট্রের ধারণাকে অভিন্ন বলে মনে করলেও উভয়ের মধ্যে কয়েকটি মৌল প্রভেদ রয়েছে-
জাতি
- রাজনৈতিক চেতনাযুক্ত
ঐক্যবদ্ধ জাতীয়
জনসমাজ নিয়ে
জাতি গড়ে
ওঠে।
- জাতির হাতে
কোনাে সার্বভৌম
ক্ষমতা থাকে
না।
- জাতি গঠনের
পক্ষে একটি
নির্দিষ্ট ভূখণ্ড
অপরিহার্য উপাদান
নয়।
- জাতি একটি
ভাবগত ধারণা
মাত্র।
- জাতির ভিত্তিতে
রাষ্ট্রের শ্রেণিবিভাজন
সম্ভব। কিন্তু
জাতির নিজের
ক্ষেত্রে এই
বিভাজন সম্ভব
নয়।
রাষ্ট্র
- রাষ্ট্রগঠনের জন্য
নির্দিষ্ট ভূখণ্ড,
সরকার ও
সার্বভৌমিকতা প্রভৃতি
উপাদান একান্তভাবে
প্রয়ােজন।
- রাষ্ট্র এক
চূড়ান্ত ক্ষমতার
অধিকারী, যা
সার্বভৌম ক্ষমতারূপে
পরিচিত।
- রাষ্ট্রের একটি
নির্দিষ্ট ভূখণ্ড
অবশ্যই থাকা
দরকার।
- রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে,
রাষ্ট্র হল
একটি আইনগত
ধারণা।
- রাষ্ট্র একজাতিভিত্তিক
বা বছুজাতিভিত্তিক
উভয়প্রকারই হতে
পারে।
উপসংহার:- জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে প্রভেদ থাকা সত্ত্বেও এই দুটি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়েই জাতির পূর্ণতাপ্রাপ্তি হয়।
No comments:
Post a Comment