Tuesday, August 31, 2021

আন্তর্জাতিক আইনের পথে প্রতিবন্ধকতা গুলি আলোচনা করো।

 5. 

আন্তর্জাতিক আইনকে আইন বলা যায় কিনা সে বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আন্তর্জাতিকতাবাদীগণ আন্তর্জাতিক আইনকে আইনের মর্যাদা দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন বলে স্বীকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো প্রতিবন্ধকতা লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হলো নিম্নরুপ-

1) শক্তিশালী রাষ্ট্র:-আন্তর্জাতিক আইন বলে পরিগণিত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হল শক্তিশালী রাষ্ট্রব্যবস্থা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ণ উন্নতি মানুষকে শক্তিশালী করে তুলেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন প্রকার মারণাস্ত্রে নিজেদের সজ্জিত করে তুলেছে। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক আইনকে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করে চলেছে।

 2)সার্বভৌম রাষ্ট্র:-রাষ্ট্রপতি তাদের সার্বভৌম ক্ষমতার দাবি ছাড়তে নারাজ। বহু ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক আইন কে অগ্রাহ্য করে বল প্রয়োগ করে থাকে ফলে আন্তর্জাতিক আইন অসহায় হয়ে পড়ে।

3) ঠান্ডা লড়াই:-আন্তর্জাতিক আইনের পথে ঠান্ডা লড়াই এক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। শক্তিশালী রাষ্ট্র গুলির সম্মিলিত জাতিপুঞ্জো কে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক আইনকে অমান্য করে চলেছে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জও বৃহৎ শক্তি গুলির আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করার কাজকে অসহায় ভাবে সমর্থন করতে বাধ্য হচ্ছে।

4) বাণিজ্যিক স্বার্থ:-শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক আইন কি ক্রমান্বয়ে অগ্রাহ্য করতে দ্বিধা করছে না। শক্তিশালী রাষ্ট্র গুলির নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক আইনের পথে অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

5) আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা:-ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির মধ্যেকার সম্পর্কও আন্তর্জাতিক আইনের অন্তরায় হয়ে উঠেছে। এই সমস্ত রাষ্ট্রগুলির অসম অর্থনৈতিক বিকাশ একজনকে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র অন্যান্য রাষ্ট্রের উপর আধিপত্য বিস্তারের সব সময় সচেষ্ট থাকে ফলে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক আইনের যাবতীয় বাধানিষেধ কে উপেক্ষা করতে কিছুমাত্র পিছুপা হয়না।

6) বিধিবদ্ধ নয়:-এখনো আন্তর্জাতিক আইনকেও সুনির্দিষ্টভাবে বিধিবদ্ধ করা সম্ভবপর হয়নি। এছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইন প্রণয়নের কোনো কর্তৃপক্ষ গড়ে ওঠেনি।

7)বলবৎ করার কর্তৃপক্ষ:-আন্তর্জাতিক আইনের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো আন্তর্জাতিক আইন কে বলবৎ করার মতো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অভাব। যদিও আন্তর্জাতিক আদালত আছে তবুও আন্তর্জাতিক আইন অমান্যকারী রাষ্ট্রকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আন্তর্জাতিক আদালতের নেই।

8 )মতপার্থক্য:-আন্তর্জাতিক আইনের আইন হিসাবে প্রতিপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা হল বৃহৎ শক্তি গুলির মধ্যে পার্থক্য। বৃহৎ শক্তিগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সহযোগিতার অভাবে এক্ষেত্রে প্রকট হয়ে উঠেছে। যতদিন না বৃহৎ শক্তিগুলো আন্তর্জাতিক আইনকে আইন হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে মতৈক্য উপনীত হতে পারছে ততদিন আন্তর্জাতিক আইনের আইন পদবাচ্য হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দূরীভূত হবে না।

 মূল্যায়ন:-মানব জাতির স্বার্থেই আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিবন্ধকতা গুলি দূরীভূত হওয়া প্রয়োজন। কেননা বৃহৎ শক্তিগুলোর পারস্পরিক সন্দেহ ও প্রতিদ্বন্দিতা যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলি যদি তাদের একটু স্বার্থ ত্যাগ করে আন্তর্জাতিক আইন কে স্বীকৃতি দেয় তাহলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।

No comments: