12.
জনসমাজের জাতিতে রূপান্তর
জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ জনসমাজ যখন নিজস্ব রাষ্ট্র লাভ করে, তখনই তারা জাতির পর্যায়ে উন্নীত হয়। বস্তুতপক্ষে জাতি হল জনসমাজের একটি চূড়ান্ত বিকশিত রূপ। জনসমাজের মধ্যে এক গভীর স্বাতন্ত্র্যবোধ দেখা দিলে জাতীয় জনসমাজের উদ্ভব ঘটে। ঐক্যবদ্ধ একটি জনগোষ্ঠী যখন অন্যান্য জনগোষ্ঠী থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ আলাদা মনে করে, তখন জাতীয় জনসমাজ তৈরি হয়। পরে জাতীয় জনসমাজের মধ্যে সুগভীর রাজনৈতিক চেতনার জন্ম হলে জাতীয় জনসমাজ জাতিতে পরিণত হয়।
একটি জাতি হিসেবে ভারত
ভারতকে একটি জাতি বলা যায় কিনা এ প্রশ্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে সহমত দেখা যায় না বরং এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপিত হতে দেখা যায়। ভারতীয় জনগণের মধ্যে নানা বিষয়ে অনৈক বা বৈচিত্র্যকে জাতীত্ব অর্জন এর পক্ষে অসুবিধাজনক বলে উল্লেখ করা হয়। সমজাতীয় ভাষা ও সংস্কৃতির কোনটাই ভারতে নেই। বরং ভারত একটি বহু ভাষাভাষী ও মিশ্র সংস্কৃতির দেশ।
এ বিষয়ে অবশ্য ভিন্ন মত রয়েছে বলা হয় জাতি গঠনের ক্ষেত্রে ভাষা বা সংস্কৃতিগত বৈচিত্র বাধা হতে পারে না। জাতি গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঐতিহাসিক উপাদান ও রাজনৈতিক ঐক্যবোধ। একই ভৌগলিক অঞ্চলে বসবাসকারী ঐক্যবদ্ধ জনসমষ্টি একই রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলে তা জাতিতে পরিণত হয়। এই মানদণ্ডে বিচার করলে ভারতকে নিঃসন্দেহে জাতি হিসেবে গন্য করা যায়। সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বিভেদের মধ্যে ঐক্যের মূল সুরটির সন্ধান পাওয়া যায়। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে শক্তিশালী জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে। স্বাধীন ভারতের সংবিধানেও বিভিন্ন সংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার সচেতন প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। ভারতে নানা বিষয়ে যে ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু একই সঙ্গে ঐক্যের যে সুরটি ধ্বনিত হচ্ছে তাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
কানাডা, সুইজারল্যান্ড কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো নানা ভাষা ধর্ম সংস্কৃতি সম্পন্ন দেশ যদি জাতি হিসেবে গণ্য হতে পারে, তাহলে ভারত সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে না। সুতরাং ভারতকে একটি জাতি হিসাবে গণ্য করা সমীচীন।
No comments:
Post a Comment