4.
জাতীয় আইন ও আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যে পার্থক্য
জাতীয় আইন এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের কোনো দ্বন্দ্ব বিরোধ দেখা দিলে আন্তর্জাতিক আইন কার্যকরী হয় না আবার রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার কারণেও রাষ্ট্রীয় আইনের উপরে আন্তর্জাতিক আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। এরকম বিরোধ জনিত পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক আইনের মর্যাদা হ্রাস পায়, অন্যদিকে তেমনি জাতীয় আইনের অপ্রতিহত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইনের মধ্যে পার্থক্য গুলি নিম্নে দেয়া হল-
1) সংজ্ঞা:-জাতীয় আইন হলো সেই আইন যা রাষ্ট্রকর্তৃক সৃষ্ট ও স্বীকৃত।তাই জাতীয় আইনকে রাষ্ট্রীয় আইন নামেও বলা যেতে পারে যেখানে এই আইন দেশের ভূখণ্ডের মধ্যেই রাজ্যগুলিতে সীমাবদ্ধ।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক আইন, আন্তর্জাতিক প্রথা, রীতিনীতি ও নিয়ম কারণ এর সমষ্টি যেগুলোর বাধ্যবাধকতা পারস্পরিক সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে সভ্য রাষ্ট্রগুলি মেনে চলে।
2) প্রকৃতি:-সার্বভৌম রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ জাতীয় আইন বলবৎ করে বলে জাতীয় আইনে সুনির্দিষ্ট প্রকৃতি লক্ষ্য করা যায়। জাতীয় আইন রাষ্ট্রে বসবাসকারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
অপরপক্ষে, আন্তর্জাতিক আইন সুনির্দিষ্ট নয়। আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে কোন সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ নেই যে কারণে আন্তর্জাতিক আইনে আদেশ প্রদানকারী চরিত্র লক্ষ্য করা যায় না।
3) উৎস:-জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত আইনসভাই হল জাতীয় আইনের একমাত্র উৎস।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে কোন আন্তর্জাতিক আইনসভা দেখা যায় না। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্ত, আন্তর্জাতিক সন্ধি ও চুক্তি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পন্ডিতদের রচনা, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় আন্তর্জাতিক আইনের মূল উৎস।
4) বৈধতা:-রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে জাতীয় আইনকে বলবৎ করার জন্য আলাদা কোন আইনের প্রয়োজন হয় না।
পক্ষান্তরে, আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, আন্তর্জাতিক আইন সরাসরি বলবৎ হয় না। আন্তর্জাতিক আইনকে বলবৎ করার জন্য রাষ্ট্রগুলিকে আলাদা করে রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন করতে হয়।
5) সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের অবস্থান:- জাতীয় আইন জাতীয় রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশ হিসাবে বলবৎ হয়। জাতীয় আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। জাতীয় আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে।
অপরপক্ষে, আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে কোন সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক আইন কোন সার্বভৌম' কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সৃষ্ট বা প্রযুক্ত নয়।
6) আইন ভঙ্গকারিকে শাস্তিপ্রদান:-জাতীয় আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতে রয়েছে। রাষ্ট্র আইন ভঙ্গকারিকে সংশ্লিষ্ট বিধি অনুসারে শাস্তি দিয়ে থাকে এই কারণে জাতীয় আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা প্রতিটি নাগরিককে উপলব্ধি করায়।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার ব্যাপারে রাষ্ট্রগুলির কোন বাধ্যবাধকতা নেই যেহেতু এই আইন ভঙ্গকারিকে শাস্তি দেয়ার জন্য কোন সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ নেই।
উপসংহার:- আন্তর্জাতিক আইন ও জাতীয় আইনের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সভ্য দুনিয়ায় আন্তর্জাতিক আইন ও জাতীয় আইন যে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে একথা অনস্বীকার্য।
No comments:
Post a Comment