Tuesday, August 31, 2021

স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে আলোচনা করো।

 16. 

🕳️স্বাধীনতার সংজ্ঞা:- 

স্বাধীনতা বা Liberty শব্দটি লাতিন শব্দ Liber থেকে গৃহীত হয়েছে। Liber শব্দের অর্থ হল স্বাধীনতা। সাধারণভাবে স্বাধীনতা বলতে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার অবাধ অধিকার কে বোঝায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কিন্তু স্বাধীনতা শব্দটি এই অর্থে ব্যবহৃত হয় না। বস্তুত অবাধ, অনিয়ন্ত্রিত ও সীমাহীন স্বাধীনতা হল স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তরমাত্র।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্বাধীনতা সম্পর্কিত সংজ্ঞা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যথা-

ল‍্যাস্কির মতে- স্বাধীনতা হল এমন এক পরিবেশ সংরক্ষণ যেখানে মানুষের অন্তর্নিহিত ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব।

বার্কারের মতে-রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা বা আইনগত স্বাধীনতা হল সকলের জন্য শর্তসাপেক্ষ স্বাধীনতা।

মার্কসবাদীদের মতে-মানুষের যোগ্যতা ও সামর্থ‍্যের সর্বাঙ্গীণ বিকাশকে স্বাধীনতা বলা হয়।


🕳️🕳️স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ

স্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ নির্দেশ করেছেন। মোটামুটিভাবে স্বাধীনতার যেরূপ গুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য সেগুলো নিম্নরূপ-

1) স্বাভাবিক স্বাধীনতা:- সামাজিক চুক্তি মতবাদের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রুশো বলেছিলেন, মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন কিন্তু সর্বত্রই সে শৃংখলাবদ্ধ। যখন রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়নি, তখন সে স্বাধীনতা বিরাজ করতো তা ছিল স্বাভাবিক স্বাধীনতা।

2)সামাজিক স্বাধীনতা:- সামাজিক রীতিনীতি, ঐতিহ্য, নৈতিকতার দ্বারা সংরক্ষিত স্বাধীনতাকে সামাজিক স্বাধীনতা বলা হয়। তবে সামাজিক স্বাধীনতা ধরন এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে পরিবর্তিত হয়। অনেক সময় সামাজিক স্বাধীনতা অমানবিক স্বাধীনতায় পর্যবসিত হয়েছে। যেমন-হিন্দু সমাজে এককালের সতীদাহ প্রথা, প্রাচীন গ্রিসের দাস প্রথা ইত্যাদি।

3) সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা:- প্রাচীন গ্রিসের স্বাধীনতার ধারণাকে সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা বলে আখ্যা দেয়া হয়। গ্রীকরা ব্যক্তিগত জীবনের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তির আস্বাদ পেতে নিজেদের সম্প্রদায়ের দ্বারা নিজেরাই শাসিত হতে চাইছেন। অনেকে মনে করেন, এর থেকেই আধুনিককালের জাতীয় স্বাধীনতার ধারণা সৃষ্টি হয়।

4)নৈতিক স্বাধীনতা:- যে স্বাধীনতা ব্যক্তির নীতিবোধ অনৈতিক চেতনার উপর প্রতিষ্টিত, তাকে নৈতিক স্বাধীনতা বলা হয়। আদর্শবাদী চিন্তাবিদরা নৈতিক স্বাধীনতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন।

5)জাতীয় স্বাধীনতা:-কোন পরাধীন দেশ যখন মুক্তি লাভ করে তখন তা জাতীয় স্বাধীনতার স্বাদ পায়। ব্যক্তি স্বাধীনতার মূল ভিত্তি হলো জাতীয় স্বাধীনতা। ভারত 1947 সালের 15 আগস্ট জাতীয় স্বাধীনতা লাভ করে।

6)আইন সঙ্গত স্বাধীনতা:- আধুনিক রাষ্ট্রে যে স্বাধীনতা নাগরিকরা ভোগ করেন তাকে আইনসঙ্গত স্বাধীনতা বলা হয়। এই ধরনের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সংবিধান ও আইনের অনুমোদন থাকে। আইনসঙ্গত স্বাধীনতার প্রকৃতি অপেক্ষাকৃত সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট। এই স্বাধীনতার তিনটি প্রধান দিক হলো-

 !)ব্যক্তিগত বা পৌর স্বাধীনতা:-ব্ল্যাকস্টোনের মতে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত গতিবিধির স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির স্বাধীনতা হল ব্যক্তিগত বা পৌর স্বাধীনতা মুখ্য উপাদান। বস্তুতপক্ষে, যে স্বাধীনতা না থাকলে ব্যক্তিগত জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সম্ভব নয়, তাকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বলা যায়।

!!) রাজনৈতিক স্বাধীনতা:- রাজনৈতিক স্বাধীনতা নাগরিকদের রাষ্ট্রপরিচালনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে। সরকার গঠন এবং সরকারকে নিয়ন্ত্রণের কাজ করে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। ল‍্যাস্কি রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে বুঝেছেন।

!!!) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা:-হ্যারল্ড লাস্কির মতে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলতে সেই স্বাধীনতাকে বোঝায় যা ব্যাক্তির দৈনন্দিন খাদ্য সংস্থানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সমসুযোগের সৃষ্টি করে। কর্মের অধিকার, বার্ধক্যে ও অক্ষম অবস্থায় আর্থিক নিরাপত্তা, সমস্ত রকম শোষনের হাত থেকে মুক্তি ইত্যাদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মূল উপাদান। বস্তুতপক্ষে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে ব্যক্তিগত বা পৌর স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় বলে অনেকে মনে করেন।

No comments: