12.
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ একটি প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রও একটি প্রতিষ্ঠান। সুতরাং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে রাষ্ট্র বলা যাবে কিনা সে সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জো রাষ্ট্র কিনা সে সম্পর্কে মতামত দিতে হলে দেখা দরকার রাষ্ট্র গঠনের জন্য যে চারটি উপাদানের প্রয়োজন, যেমন-জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভূখন্ড, সরকার ও সার্বভৌমিকতা এগুলি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের আছে কিনা।
[1] জনসংখ্যা:-রাষ্ট্র গড়ে ওঠার জন্য জনসংখ্যা আবশ্যক। কারণ, জনসংখ্যা ছাড়া রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না। কিন্তু সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সেই অর্থে জনসংখ্যা নেই। কারণ, জনসংখ্যার পরিসংখ্যান এ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের জনসংখ্যার কোন উল্লেখ নেই। জাতিপুঞ্জের কর্মচারী হিসেবে যারা কাজ করেন তারাও অন্য দেশের নাগরিক।
[2] নির্দিষ্ট ভূখন্ড:- রাষ্ট্র গড়ে ওঠার দ্বিতীয় অপরিহার্য উপাদান হলো নির্দিষ্ট ভূখন্ড। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ড নেই। পৃথিবীর মানচিত্রে জাতিপুঞ্জের অবস্থানের কোনো উল্লেখ নেই। জাতিপুঞ্জের কার্যাবলী পরিচালনার জন্য জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন সংস্থার দপ্তর গুলিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থিত।
[3] সরকার:- রাষ্ট্র গঠনের জন্য তৃতীয় অপরিহার্য উপাদান হলো সরকার। সরকার ছাড়া রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না। কারণ রাষ্ট্রের কার্যাবলী সরকারের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। জাতিপুঞ্জের কার্যাবলী পরিচালনার জন্য মহাসচিব এর নেতৃত্বে একটি পরিচালকমণ্ডলী আছে। অনেকে জাতিপুঞ্জের পরিচালকমণ্ডলীকেই সরকার বলে অভিহিত করে।
[4] সার্বভৌমিকতা:- রাষ্ট্র গঠনের জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সার্বভৌমিকতা। সার্বভৌমিকতা ছাড়া কোন রাষ্ট্র কল্পনাই করা যায় না। সার্বভৌমিকতা বলতে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত, অপ্রতিহত ও অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা কে বোঝায়। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জো হল কতগুলি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংগঠন। জাতিপুঞ্জো তার রাষ্ট্রগুলিকে কোন নির্দেশ দিতে পারেনা। কেবল অনুরোধ করতে পারে। সদস্য রাষ্ট্র গুলির সেই অনুরোধ মানতেও পারেন আবার নাও মানতে পারেন। সুতরাং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সার্বভৌমিকতা নেই।
মূল্যায়ন:-
উপরি-উক্ত বিশ্লেষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোন প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যে চারটি মূল উপাদান আবশ্যক তার মধ্যে জাতিপুঞ্জের একটি উপাদান অর্থাৎ সরকার আছে কিন্তু অন্য তিনটি উপাদান যথা- জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভূখন্ড ও সার্বভৌমিকতা নেই। সুতরাং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জো রাষ্ট্র নয়।
No comments:
Post a Comment