Tuesday, August 31, 2021

রাষ্ট্র ও সমাজের পার্থক্য ব্যাখ্যা করাে।

 3.4. 

রাষ্ট্র সমাজের মধ্যে পার্থক্য



বর্তমানে রাষ্ট্র সমাজকে এক বলে মনে করা হয় না। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ এবং মার্কসবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণও রাষ্ট্র সমাজকে এক বলে মনে করেন না। রাষ্ট্র হল বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সৃষ্ট এক প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, সমাজ বলতে স্বেচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত সংঘের সমষ্টিকে বােঝায়। রাষ্ট্র সমাজের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যগুলি লক্ষ করা যায়



[1] উদ্ভব: রাষ্ট্রের তুলনায় সমাজের উদ্ভব আগে হয়েছে। রাষ্ট্র সৃষ্টির অনেক আগে থেকেই সমাজের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। পক্ষান্তরে, সামাজিক বিবর্তনের একটি স্তরে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে



[2] উদ্দেশ্য: রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হল, তার সদস্যদের কল্যাণ সাধন করা। আদিম মানুষের সুন্দর স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে, সমাজের আর্থিক, নৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বহু উদ্দেশ্য বর্তমান। বহুবিধ উদ্দেশ্য সমাজের নানাবিধ সংগঠনের মাধ্যমে সাধিত হয়



[3] ব্যাপকতা: রাষ্ট্রের তুলনায় সমাজের উদ্দেশ্য অনেক ব্যাপক রাষ্ট্র কেবলমাত্র বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গড়ে উঠেছে। কিন্তু সমাজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। ওই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাষ্ট্র হল একটি প্রতিষ্ঠান



[4] সদস্যপদ: কোনাে নাগরিককে তার রাষ্ট্রের সদস্য হতেই হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, রাষ্ট্রের সদস্যপদ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। তবে কোনাে ব্যক্তি একইসঙ্গে একাধিক রাষ্ট্রের সদস্য হতে পারে না। অন্যদিকে, সমাজ হল বছু সংগঠনের সমষ্টি। কোনাে ব্যক্তি তার প্রয়ােজন পূরণের জন্য এক বা একাধিক সামাজিক সংগঠনের সদস্য হতে পারে। সামাজিক সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়



[5] সরকার: রাষ্ট্র গড়ে ওঠার জন্য সরকার আবশ্যক। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। অর্থাৎ, সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্র মূর্ত হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে, সমাজ গড়ে ওঠার জন্য সরকারের প্রয়ােজন। হয় না। সমাজের সদস্যগণ নিজেরাই সামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করেন



[6] ভূখণ্ড: রাষ্ট্র গড়ে ওঠার জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান হল ভূখণ্ড। নির্দিষ্ট ভূখন্ড ছাড়া রাষ্ট্র গঠনের কথা কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু সমাজ গড়ে ওঠার জন্য নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের আবশ্যিকতা নেই



[7] সার্বভৌমিকতা: সার্বভৌম ক্ষমতা কেবল রাষ্ট্রেরই থাকে। একারণে রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অবস্থিত সকল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলতে হয়। ছাড়া একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরােধ দেখা দিলে রাষ্ট্রই তার মীমাংসা করে। অন্যদিকে, সমাজের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। সমাজের কাজকর্ম রাষ্ট্রীয় নির্দেশের অধীনে থেকেই পরিচালিত হয়



[8] কার্যপদ্ধতি: রাষ্ট্র তার উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক।রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করলে। শাস্তি পেতে হয়। এজন্য অনেকে রাষ্ট্রকে দমনপীড়নমূলক প্রতিষ্ঠান বলে মনে করে



পক্ষান্তরে, সমাজের উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন ঘটে সহযােগিতার মাধ্যমে। বিভিন্ন স্বেচ্ছামূলক প্রতিষ্ঠান নিয়ে সমাজ গড়ে ওঠে। সামাজিক রীতিনীতি অমান্য করলে সমালােচনা সহ্য করতে হয়। কিন্তু কোনোরূপ। শাস্তির ভয় থাকে না



মূল্যায়ন: রাষ্ট্র সমাজের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও একে অপরের পরিপূরক হিসেবেই কাজ করে। একারণেই বলা যায় যে সমাজ নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে পারে না

No comments: