Tuesday, August 31, 2021

আইনের বিভিন্ন উৎস বর্ণনা করো।

 17. 

আইনের উৎস

বাস্তবে সার্বভৌম শক্তির অনুমোদনকে আইনের একমাত্র উৎস বলে অভিহিত করা হলেও নানারকম সামাজিক শক্তি আইনের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের মত আইনও ঐতিহাসিক বিবর্তন এর ফল। বিশিষ্ট আইনবিদ হল্যান্ড এর মতে, আইন এর মুখ্য উৎসগুলি হল-

1)প্রথা:- আইনের সবচেয়ে প্রাচীন উৎস হল প্রথা। প্রথা হচ্ছে সমাজজীবন থেকে সৃষ্ট সেইসব নিয়মকানুন যা ব্যক্তির বা সমষ্টির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাচীন সমাজে প্রথার সাহায্যে দ্বন্দ্বের মীমাংসা করা হতো। কালক্রমে, এইসব প্রথা রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃত ও বিধিবদ্ধ হয় এবং আইনের মর্যাদা লাভ করে। বাস্তবে কোন রাষ্ট্রই প্রথাকে উপেক্ষা করে, আইন প্রণয়ন করতে পারে না। আধুনিককালে অনেক রাষ্ট্রের আইনের মধ্যে প্রথাগত বিধানের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। যেমন, ব্রিটেনে অলিখিত সংবিধানের বেশিরভাগটাই সেখানকার রীতিনীতি ও প্রথার উপর নির্ভরশীল।

2) ধর্ম:-আইনের অন্যতম প্রাচীন উৎস হলো ধর্ম। প্রাচীনকালে প্রায় সব সামাজিক প্রথা ছিল ধর্মভিত্তিক। ধর্মীয় বিধিভঙ্গ ছিল নীতিবিরুদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ধর্মীয় অনুশাসন ও রীতিনীতি প্রাচীন সমাজজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠা করেছিল। এভাবে ধর্মীয় অনুশাসন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আইনের বিবর্তনে সহায়তা করেছিল।

 3) বিচার ব্যবস্থা:- বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। আদিম সমাজে রাজা বা দলপতির উপর বিচারের ভার দেয়া হতো। ব্যক্তিগত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে এই বিচারকরা যেসব রায় দিতেন, তা পরবর্তীকালে বিচারকার্যে আইন হিসাবে গণ্য হতো। বর্তমানেও অনেক সময় এইভাবে বিচারের রায় আইন সৃষ্টি করে।

4) ন্যায় বিচার:- দেশে প্রচলিত আইনকানুনের সাহায্যে কোন ক্ষেত্রে যদি ন্যায় বিচারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিচারপতিগণ নিজস্ব বিচারবুদ্ধি ও ন্যায়নীতিবোধ অনুসারে বিচার কার্য সম্পাদন করেন। এর ফলেও নতুন আইনের সৃষ্টি হয়।

 5)আইনজ্ঞদের আলোচনা:- বিভিন্ন মামলাকে কেন্দ্র করে এবং আইন সংক্রান্ত বিষয় সুপন্ডিত ব্যক্তিদের মতামত ও সিদ্ধান্ত আইনের উৎস হিসেবে কাজ করে। আইনের উপর আইনজ্ঞদের আলোচনা, ভাষ্য, টিকা ইত্যাদি কোন মামলার রায় দানের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। ব্ল্যাকস্টোন, কোক প্রমুখের টিকা বৃটেনের আইনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। আমাদের দেশে মনু প্রমূখ স্মৃতিশাস্ত্রের ব্যাখ্যাকার হিন্দু আইনের সংস্কার সাধনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। 

6)আইনসভা:- বর্তমান যুগে আইনসভা কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে আইন প্রণয়ন হল আইনের প্রধান উৎস। আইন সভার সদস্যরা জনমতের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করেন। জনকল্যাণকর রাষ্ট্রে ব্যাপক দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য যেসব আইনের প্রয়োজন হয়, তা তৈরী করে আইনসভা। এর ফলে আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, প্রথা, ধর্ম ইত্যাদি উৎসের গুরুত্ব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

উপসংহার:- উইলসনের মত প্রসঙ্গে বলা যায়, প্রথা আইনের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন উৎস হলেও ধর্মও একই সময়ে আইন সৃষ্টিতে সাহায্য করে। পরে বিচারকের রায় এবং ন্যায় বিচার আইনের উৎস হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আধুনিককালে আইনসভা কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে আইন প্রণয়ন এবং আইনজ্ঞদের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা আইনের প্রধান উৎস হিসেবে গণ্য হয়। সভ্যতার অগ্রগতির পাশাপাশি সামঞ্জস্য রেখে আইনের অর্থ ও প্রকৃতির বদল, আইনের উৎস গুলির গুরুত্ব কমায়।

No comments: